নতুন করে ঘর গোছাবে বিরোধী দল বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত মূল দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিসহ প্রতিটি অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। চলমান আন্দোলনে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ নেতাদের অব্যাহতি দিয়ে অপেক্ষাকৃত ত্যাগী ও সক্রিয় নেতাদের নতুন করে স্থান দেওয়া হতে পারে এসব কমিটিতে। এর ফলে শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাও ছিটকে পড়তে পারেন তাদের স্ব স্ব পদ থেকে। পুনর্গঠন কার্যক্রমের মাধ্যমেই দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে সুসংগঠিত করা হবে।
এমনটিই চিন্তাভাবনা করছে দলীয় হাইকমান্ড। জানা গেছে, ২৫ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত পালিত প্রতিটি কর্মসূচিই পর্যালোচনা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে কোন পর্যায়ের নেতা কী ধরনের ভূমিকা পালন করেছেন এবং কেন্দ্রীয়সহ অঙ্গসংগঠনের কোন কোন নেতা সরকারের পক্ষে ভূমিকা নিয়েছেন এবং দলের সঙ্গে বেইমানি করেছেন তাদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কমিটি পুনর্গঠনের কাজে কিছুটা সময় নেওয়া হলেও এবার আর ব্যর্থ অর্থাৎ আন্দোলনের সময় আত্দগোপনে চলে যাওয়া নেতারা রেহাই পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ২৯ ডিসেম্বরের 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি বানচালে বিএনপির কোন নেতা কী ভূমিকা পালন করেছেন, কে কে কথা দিয়ে কথা রাখেননি, তার পুরো হিসাব কষছেন বেগম খালেদা জিয়া।
জানা গেছে, ঢাকাভিত্তিক কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর চরম বিরক্ত দলের চেয়ারপারসন। তাদের বেশির ভাগই ২৯ ডিসেম্বর কথা দিয়ে কথা রাখেননি। এমনকি অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রতিদিনই সরকারবিরোধী কথার ফুলঝুরি ছড়ানো বিবৃতি প্রদান অব্যাহত রাখলেও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপরও রীতিমতো বিরক্ত খালেদা জিয়া। পাশাপাশি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ভিত্তিক নেতারাসহ প্রেস উইং-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পারফরমেন্সেও হতাশ তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদ সংগ্রহকারী শতাধিক সাংবাদিককে মতবিনিময়ের দাওয়াত দিয়ে চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসার সামনে কয়েক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার পর কর্মসূচি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার কথা জানার পর বেগম খালেদা জিয়া সংশ্লিষ্টদের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ হন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন প্রবীণ নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণে। কাজেই মানুষের দুর্ভোগ আমরা পারতপক্ষে চাই না। কিন্তু সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় বসে আছে বলেই আমরা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হচ্ছি। এ জন্য সামনে থেকে সপ্তাহের অর্ধেক সময় (তিন-চার দিন) কর্মসূচি এবং বাকি সময় কর্মসূচিবিহীন রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
কেন্দ্র ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে যেসব ইউনিটের কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়নি সেগুলোও সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। অব্যাহত রাখতে হবে ভেতরে এবং বাইরের কূটনৈতিক তৎপরতা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, টানা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিএনপি। এসব কর্মসূচির বাইরে সভা-সমাবেশের মতো বিকল্প ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বিবেচনা করছে দলটি।
বিশেষ করে খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষের রুটি রোজগারের সুযোগ সৃষ্টিসহ জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্যই আপাতত কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে আসতে চাচ্ছে বিএনপি। এদিকে দলের নীতিনির্ধারকরা এখনো আশা করছেন, খুব শীঘ্রই রাজনৈতিক সুরাহা হবে এবং ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে সমঝোতার পথে হাঁটবে সরকার। এ হিসেবেই চলমান আন্দোলনের নতুন কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। দুর্ভোগ লাঘব করে মানুষকে দিতে চায় স্বস্তি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ। জনদুর্ভোগ হ্রাসের পাশাপাশি টানা আন্দোলনে ক্লান্ত নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই এ ধরনের কর্মসূচির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মহানগরীতে আবারও সমাবেশ করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এর মাধ্যমে তিনি জনগণের সামনে বর্তমান সরকারের একতরফা নির্বাচনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরতে চান। আন্দোলনে জোটের যেসব নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতেও ওইসব পরিবারের কাছে যাবেন তিনি। একই সঙ্গে ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এর সবকিছুই নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর।
দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরও এক সদস্য জানান, সরকার যদি জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হয়রানি-নির্যাতন, গ্রেফতার বন্ধ করে এবং জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চলাফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করে তবেই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পরিহারের চিন্তাভাবনা করা হবে। নতুন ধারার এ আন্দোলন অব্যাহত রাখলে একটি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। কারণ প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনোভাবেই জনগণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ইতোমধ্যেই ভারত ছাড়া বিশ্বের সব দেশই গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ফলে নতুন সরকারকে প্রতিনিয়ত চাপে থাকতে হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞাও জারি হতে পারে বলেও আশা করছেন তারা। দেশি-বিদেশি এই চাপের ফলে আগামী তিন মাসের মধ্যেই আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকার বাধ্য হবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। এদিকে বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গে আলাপকালে সার্বিক অবস্থার জন্য কিছু হতাশা ব্যক্ত করার পাশাপাশি দলের কয়েকজন নেতাকে দোষারোপ করে বলেছেন, ঢাকায় আন্দোলন না হওয়ায় মহানগর বিএনপির কমিটি অবিলম্বে বিলুপ্ত করা উচিত। তার মতে, ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলন করতে না পারায় পুরো আন্দোলন প্রক্রিয়াটাই ব্যর্থ হয়েছে।
এর সঙ্গে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ গুলশান কার্যালয়ভিত্তিক বেশ কজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারপরও আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। আন্দোলনের গতি ধরে রাখতে হবে। নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে হবে। এ জন্য নতুন কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।