আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধার্মিক দেশপ্রেমিকদের এথিকাল ডিলেমা!!!

Miles to go before I sleep.....

মুক্তিযুদ্ধ ব্যাতিরেকে অন্য কোন বিষয়ে আমি সিরিয়াস পোস্ট পছন্দ করিনা। পড়তে ভাল লাগেনা আরকি। কিন্তু মনে হয় আমাদের মত কিছু ব্লগার যারা মাইনকা চিপায় আছে তাদের জন্য এটা লিখতে হচ্ছে। ১. আমাদের গ্রামের বাড়িতে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের ব্যাপক কদর। তবে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষিতদের না।

কওমী মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদের। কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে আমি অসম্ভব ভাল মানুষ দেখেছি আবার চরমতম খারাপ মানুষও দেখেছি। গ্রামে প্রচুর কওমী মাদ্রাসাও আছে। হাইস্কুলের সংখ্যা ৩/৪ টা কিন্তু মাদ্রাসা ১০/১২ টার কম না। সবগুলো মাদ্রাসাই ধার্মিক মানুষের ডোনেশান নিয়ে চলে।

উল্লেখ্য আমি নিজেও ৩/৪ মাস মাদ্রাসায় পড়েছিলাম ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। সেটা নিয়ে একটা পোস্ট দেওয়ার ইচ্ছে আছে পরে একসময়। তারপর অনেক নাটক করে পালিয়ে এসেছিলাম। যেহেতু গ্রামে অনেক মাদ্রাসা তাই মানুষগুলার উপর মাদ্রাসার আলেম উলামার ব্যাপক প্রভাব। সবাই বিসমিল্লাহ্‌কে রক্ষা করার জন্য মরিয়া।

দেশ থেকে ইসলাম চলে যাচ্ছে এজন্য তাদের চোখে ঘুম থাকেনা। দেশ ভারতের দালাল হয়ে যাচ্ছে কিনা তাই তারা সবসময় পাহারায় থাকে। শান্তি চুক্তি যে গোলামীর দলিল তা তারা প্রায়ই বলে। কিন্তু বেশির ভাগ লোককেই নামাজে পাওয়া যায়না। এরা এমনই ধার্মিক যারা নামাজ পড়তে যাইনা কিন্তু ইসলাম রক্ষা করার জন্য জান দিয়ে দিবে।

তাসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মিছিল করার জন্য সবার আগে থাকবে। উল্লেখ্য তাসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মিছিলের যে নেতৃত্ব দিয়েছিল সে শিবিরের নেতা এবং পরবর্তীতে চুরি করার অপরাধে অনেক বার ধরা খাইছে। ২. একইভাবে ব্লগেও দেখি প্রচুর ধার্মিক লোকের আনাগোনা। তারা কোরানের আয়াত কাট-পেস্ট করে বড় বড় পোস্ট দেয়। কিন্তু কয়জন ফজরের নামাজে যায় এ বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে।

কোরানের আয়াত কপি-পেস্ট করা সহজ কিন্তু ফজরের নামাজ পড়া খুব কঠিন। তাদের কোরানের আয়াত কপি-পেস্টের প্রতিবাদে আবার নাস্তিক ব্লগাররা কোরানের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পোস্টাই। কেউ কেউ মহানবী (সাঃ) কে অবমাননা করে পোস্ট দেয়। কেউ কোন কোরানের বিশেষ একটা আয়াত বা একটা বিশেষ হাদিস কোট করে ইসলাম কত ভাওতাবাজি সেটা দেখায়। উল্লেখ্য প্রত্যেকটা আয়াত, হাদিসের শানে নুজুল, আগে-পরের আয়াতে কি বলা হয়েছে না জেনে ব্যাখ্যা করা, তরজমা পড়া চরম বোকামী।

গুড ফর নাথিং তো বলেই দিছেন হাদিস নাকি ইসলামের কোন পার্ট না। কেউ কেউ ফেইথফ্রিডম থেকে কোট করেন। আমার একসময়ের পছন্দের ব্লগার রাসেল যা পোস্ট দিয়েছিলেন তা পড়তে গেলে বমি আসে। জানিনা মহানবী (সাঃ) এর প্রতি কত জিঘাংসা, ঘৃণা থাকলে এরকম পোস্ট দেওয়া যায়। ইসলামকে অবমাননা করে স্মার্ট হওয়া যায়না এটা কিভাবে যে বুঝায়।

সবার ধর্ম পালন করার অধিকার সমান। একইভাবে সবাই আশা করতে পারে যে তার ধর্মীয় অনুভূতিকে কেউ অন্যায়ভাবে আঘাত করবেনা। অন্যের ফিলিংসকে আঘাত করার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই। ৩. রাজাকাররা সামহয়ারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করে। সামহয়ারে সর্ষের ভিতর ভূত আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

তাই রাজাকারি পোস্ট দিলেও কোন কিছু হয়না। আমাদের স্বাধীনতা, জাতীয় সংগীত কে আঘাত করে তারা বিশ্রীরকমের পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের কিছুই হয়না। "আমি রাজাকার" নিকের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে তার নিক ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কোন সভ্য দেশে কি সেটা সম্ভব? অবশ্য আরিল বাংলদেশকে হয়ত সভ্য মনে করেনা।

একটা থার্ড ওয়ার্লড দেশের আবার জাতীয় চেতনা কি, আর সেখানে আঘাত করলেই বা কি? গরীব দেশের স্বাধীনতাই বা কি আর তার বিরুদ্ধে পোস্ট দিলেই বা কি? আরিল হয়ত এরকমই মনে করেন। ৪. যারা আমাদের মত সাধারণ (অনেকের কাছেই আমি সাধারণ না, গালিবাজ) ব্লগার তাদের কাছে দেশ, দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় সংগীত যেরকম পবিত্র এবং সেনসিটিভ ইস্যু তেমনি ইসলামও (অথবা অন্য কোন ধর্ম যদি আপনি সে ধর্মের হোন) আমাদের কাছে পবিত্র এবং সেনসিটিভ। দেশের স্বাধীনতাকে আঘাত করে কথা বললে যেমন আমাদের গা জ্বলে যায় তেমনি ধর্মকে আঘাত করে বেইসলেস পোস্ট/কমেন্ট করলেও আমাদের অনুভূতিতে তীব্র আঘাত লাগে। মহানবী (সাঃ) আমাদের অসম্ভব প্রিয় একজন মানুষ। তাঁকে নিয়ে ইসলামের ব্যাপারে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ব্লগারদের (সাধারনভাবে অশিক্ষিত বলছিনা) পোস্ট/কমেন্ট আমাদেরকে ঘৃনায় হতবিহবল করে দেয়।

আহমেদ শরীফ বলেছিলেন বাংলাদেশে খুব শীঘ্রই মানুষ তার অজ্ঞতার জন্য গর্ব করবে। মুসলিম হয়েও ইসলাম সম্পর্কে না জানাটা অজ্ঞতাই। কোন বিষয়ে না জানার মধ্যে গর্বের/স্মার্টনেসের কিছু নেই। তাই আমি অনুরোধ করব ইসলাম, মহানবী (সাঃ) অহেতুক, অযাচিত আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যের ফিলিংসে আঘাত করে কোন লাভ তো হয়না।

৫. ব্লগে ইসলামের মাহাত্ব্য প্রকাশ করে কোরান হাদিসের পোস্ট দিয়ে কোন কাজ হবে বলে মনে হয়না। যে ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইবে তার জানার জন্য আধুনিক যুগে এত বেশি উপায় আছে যে ব্লগীয় ইসলামী পোস্ট তেমন কেউ পড়ে বলে মনে হয়না। হয়ত মন রক্ষার খাতিরে কমেন্ট/রেটিং দেয়। যদি আপনি মনে করেন এতে আপনি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছেন, অথবা দাওয়াত দেওয়ার যে দায়িত্ব আপনার কাঁধে ছিল সেটা থেকে নিস্তার পাবেন তাহলে চরম ভুল করবেন। ব্লগে কোরান/হাদিস কপি-পেস্ট করা কস্টের কিছু না।

দু-মিনিটেই যে কেউ সেটা করতে পারে। যদি ইসলামের ভালাই চান, তাহলে আপনার এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে দাওয়াত দেন। এটাই একমাত্র কার্যকর উপায়। আপনার এলাকায় ৯০ শতাংশ মানুষই নামাজ পড়েনা। যারা পড়ে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ নামাজ, সুরা-কিরাত জানেনা।

তাদের জন্য তো আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। তাদের জন্য কি করতেছেন? তাই আমি অনুরোধ করব ব্লগে কোরান-হাদিসের কপি-পেস্ট পোস্ট দিয়ে মানুষকে ইসলামের প্রতি আরো বিরক্ত করে তুলবেননা। এর মাধ্যমে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। শুধু আরো পাল্টা ইসলাম-বিরোধী পোস্ট আসতেছে। আচ্ছা বলেনতো, ব্লগে থাকাকালীন সময়ে তো কোরান হাদিসের কপি-পেস্ট হাজার হাজার পোস্ট/কমেন্ট দেখলাম।

এর মাধ্যমে কি একজন মানুষও কি বেশী ধার্মিক হয়েছে? আমার তা মনে হয়না। তাহলে কোন লাভ আছে এসব পোস্ট দিয়ে? ৬ আমরা যারা ধার্মিক অথবা অন্তত ইসলামকে শ্রদ্ধার চোখে দেখি একইভাবে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে পবিত্র মনে করি তাদের জন্য ব্লগটাতে থাকা খুবই কষ্টের হয়ে গিয়েছে। রাজাকাররা আমাদের দেশকে, স্বাধীনতাকে আঘাত করতেছে আর ইসলাম-বিরোধী লোকজন আমাদের ধর্মকে, মহানবী (সাঃ) কে আঘাত করতেছে। আমাদের প্রতি কি আপনারা সদয় হবেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।