আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামহোয়্যারইন, আমি এবং আমার নিবারণকাকু... (২)



সামহোয়্যারইন, আমি এবং আমার নিবারণকাকু...১ আমি কহিলাম, অধুনা জারিকৃত লেখাবিরতি সম্পর্কে তোমার কি মতামত, কাকু? কাকু এইবার কিঞ্চিৎ গম্ভীর হইলেন। কিয়ৎকাল নিশ্চুপ থাকিয়া কহিলেন, নীতিগত কারনে আমি এই লেখাবিরতির পক্ষে থাকিবো যদিও ইহা সুস্পষ্টতই একটি বিধ্বংসী পন্থা। কর্তৃপক্ষ যেইখানে প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদকারীর হস্ত-পদ বাঁধিয়া ফেলিতে চাহেন সেইখানে ফরমায়েশী ফরম্যাটে প্রতিবাদ করিবার চাইতে না করাই আমার কাছে বিধেয় মনে হইতেছে। আমি কিরূপে প্রতিবাদ করিবো আর কিরূপে তোয়াজ করিবো ইহা একান্তই আমার নিজস্ব স্বাধীনতা হওয়া উচিৎ; ইহাতে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করিলে বাকস্বাধীনতা রহিত হয়। প্রতিবাদের ধরন সেন্সর করিয়া কর্তৃপক্ষ কোনমুখে আবার নির্লজ্জের মতোন নিজেদেরকে বাকস্বাধীনতাপ্রদায়ক বলিয়া দাবী করিতে পারেন? কর্তৃপক্ষ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি নহেন, উহার লজ্জা না থাকিলেও চলিতে পারে; কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন কোন মুক্তমনা লেখক যদি এই সেন্সরশীপে অপমানিত বোধ করেন তবে তিনি কেন লিখিবেন, বল্? আমি কহিলাম, এইবার আমার কথা শোনো।

প্রথমেই বলিয়া লই যে তোমার সহিত আমি একমত নই কোন অংশেই। তুমি কি বলিতে চাহো যে দেশপ্রেমিকগণের প্রজ্ঞাবান ও ধৈর্যশীল হইবার কোন উপায় থাকিতে নাই? কেবল বডিবিল্ডার হইলেই চলিবে? মস্তিষ্কের ঘাটতিতে ভোগা একজন বডিবিল্ডারও তোমার উল্লিখিত শর্তসমূহ পূরণ করিয়া দিতে পারিবে, কিন্তু উক্ত ঘিলুলেস বডিবিল্ডার মহাশয় দেশপিরীতির নামে যাহা নহে তাহাই বলিয়া বেড়াইতে থাকিলে; সকলের ব্লগে ব্লগে গমন করিয়া তাহার সুমিষ্ট ধর্ষকামী বচনের বিজ্ঞাপন দিয়া ব্লগবিখ্যাত হইতে থাকিলে কিন্তু কদাপি আমি তাহাকে প্রকৃত কিংবা আদর্শ দেশপ্রেমিক বলিব না! এই যে এখন মুহুর্মূহু ব্লগের প্রথম পত্রে আসিতেছে "সাবধান থাকুন, শান্ত থাকুন" জাতীয় পোস্ট; তুমি কি মনে করোনা যে ইহাই তাহাদিগের প্রকৃত অক্ষমতার চূড়ান্ত নিদর্শন? দুষ্টলোকেরা ইতোমধ্যেই বলিতে শুরু করিয়াছে যে সাবধানবাণী বিতরণকারীদিগের মধ্যে কেহ কেহ নাকি সদ্যশহীদদিগের নয়া নিকধারী প্রেতাত্মা! এই কথা সত্যি হইলে বলিতেই হয়; দেশদ্রোহীদিগের যেসকল অশ্লীল উচ্চারণ সদ্যশহীদ এই সব "কমরেডগণকে" উনাদিগের শহীদী শয্যা হইতে পুনঃপুনঃ গাত্রোত্থিত করাইয়া সাবধানবাণীসম্বলিত পোস্ট দিতে বাধ্য করিতেছে; সেইসকল উস্কানীর প্রত্যুত্তরে যুক্তিসঙ্গত, শালীন ভাষ্যে দুইখানি চরণ উহাদের কীবোর্ড হইতে কেন আসিতেছে না? কি কারনে অদ্যাবধি কৃষ্ণমার্জারগণ গালি ভিন্ন ভুলেও কিছু কহিতে পারিতেছে না? সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে ভিন্নমত প্রকাশ করিবার সুদীর্ঘকালীন অননুশীলনই ইহার কারন নহে কি? আঙুলের ভিন্নতর কোন ব্যবহারে বিপুল দক্ষতার সমান্তরালে এই অক্ষমতা কি দৃষ্টিকটু নহে? উহাদিগের দেশপ্রেম কি উহাদিগকে দেশদ্রোহীর আস্ফালনের সম্মুখে মূক হইয়া থাকিবার শিক্ষা দিয়াছে? কেহ কি ইতোপূর্বে এইরূপ উদ্ভট কথা শুনিয়াছেন যে শত্রুপক্ষকে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়িয়া দিলেই যুদ্ধজয় নিশ্চিত হয়? নাকি সত্য ইহাই যে পশ্চাদপসরণের পাঠ কেবল অক্ষত্রিয়, মেরুদন্ডহীন ও উচ্ছিষ্টভোগীদের পাঠ্য; সংশপ্তকদিগের জন্য নহে? চড়চড় করিবার ভয়াবহ ভীতিতে অনভ্যাসের ফোঁটা পরিতে পর্যন্ত যাহারা সাহসী হইতেছেন না, তাহারা সম্মুখসমরে মক্ষিকানিধনের শৌর্যটুকুন কিরূপে দেখাইবেন আমাকে বোধগম্য ভাষায় বুঝাইয়া কহো, শুনি। কেবল অশ্লীল কথার দুর্গন্ধ দিয়াই যে সকল মার্জারশাবক হস্তী-ব্যাঘ্র নিধন করিতে চাহে উহাদিগের নিমিত্ত তুমি কি কল্পলোকের হস্তী-ব্যাঘ্র ব্যতিরেকে অন্য কিছু বরাদ্দ করিবার ইচ্ছাপোষণ করো? উহাদিগের প্রকৃত স্বরূপ হৃদয়ঙ্গম করিবার জন্য পৃষ্ঠপ্রদর্শনের এবম্বিধ নমুনা দর্শনই কি যথেষ্ট নহে? অবস্থাদৃষ্টে ভ্রম হইতেছে যে তোমার পছন্দের দেশপ্রেমিকগণের তূণে সবল, সুঠাম, সুক্ষ্ম যুক্তির তীরের ঘাটতি রহিয়াছে! মেধা ও পরিশীলিত মননের যে উত্তরাধিকার উহারা পাইয়াছিলেন বঙ্গদেশে জন্ম নিবার সুবাদে; দীর্ঘমেয়াদী অনভ্যাস উহাতে মরিচা ফেলিয়া দিয়াছে। ইহাদিগের নিকট এখন রহিয়াছে কেবল রকমারী অশ্লীলতার বেসাতি আর পেশল শরীরের গর্বটুকুন। এই আত্মতুষ্টির অনিবার্য ফলশ্রুতিতে আজ আমাদিগকে দেখিতে হইতেছে কাহারো কাহারো অশ্লীল দম্ভ; কেহ কেহ অট্টহাস্যসহকারে বলিয়া বেড়াইতেছে যে অমুকের একখানি লেখনী অমুকদিগের শতেক লেখনী কিংবা তদপেক্ষা উর্দ্ধমান বহন করে...।

দেশদ্রোহী বরাহনন্দনদিগের এইরূপ কদর্য অট্টহাস্য শুনিয়াও যাহারা লেখনী বন্ধ করিয়া রাখিবার নাম করিয়া ধাপ্পাবাজি করিয়া প্রকারান্তরে পালাইয়া বেড়াইতেছেন তাহারা তো প্রকৃত অর্থে আমাদিগকে নির্বোধের মতোন আত্মঘাতী হইবারই পরামর্শ দিতেছেন! উহাদিগের অধিকাংশের কাছে ইহার কি ব্যাখ্যা থাকিতে পারে বলিয়া তোমার ধারণা; আত্মশ্লাঘা হারাইবার অনিবার্য নিয়তিকে এড়াইয়া যাইবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে? আমার কাছে কিন্তু ইহাই মনে হইতেছে! অথচ ইহাদিগকেই তুমি বলিতে চাহো দেশপ্রেমিক! না কাকু; আমি তোমার সহিত একমত নহি। আমার নিকট ইহার ভিন্ন সংজ্ঞা অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য মনে হইয়াছে। কোন যৌনউৎপীড়ক কিংবা কোন ধ্বজভঙ্গ রোগী আমার দেশমাতৃকাকে মস্তকোপরি রাখিয়া হাজারো লম্ফ-ঝম্প করিলেও উহাদিগকে আমি দেশপ্রেমিক ভাবিতে পারিবো না। স্বাধীনতার চেতনা কি ছিনতাইযোগ্য কোন পণ্য যে উহার ইজারা লইবে একদল যুক্তিহীন অশ্লীলভাষী? বরঞ্চ তিনিই আমার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য দেশপ্রেমিক যিনি কিনা গালিবাজি কিংবা গলাবাজি উভয় ব্যতিরেকেই শীতলমস্তিষ্কজাত স্পষ্ট যুক্তির সাহায্যে ছিন্ন করিয়া দিতে পারেন দেশদ্রোহীদিগের মিথ্যা অপযুক্তির দূর্বল জালিকা। তুমি যাহাদিগকে দেশপ্রেমিক কহিতেছ, উহাদিগের জন্য অনন্তকালীন শহীদী শয্যাই যথোপযুক্ত; ব্লগ নহে... আরে মলো যা! তুই কি আমার নেশা কাটিয়ে দিবি নাকি শেষতক? যা ভাগ এখন! আচ্ছা বকিতে পারিস যা হোক! কাকু'র বলিবার ধরনে বুঝিতে পারিলাম যে আফিংয়ের আমেজ কাটাইয়া উনার মেজাজ ক্রমশঃ স্বাভাবিকতায় ফিরিতেছে; অদ্যকার ন্যায় পত্রপাঠ বিদায় লইলেই মঙ্গল।

যদিও কাকু'র কাছে আরো কয়েকখানি কথা কহিবার ছিলো; করিবার ছিলো আরো গুটিকয়েক প্রশ্ন... আচ্ছা উহা না হয় পরে হইবে 'খন... (কিঞ্চিৎ সংশোধনীসহযোগে রিপোস্ট করা হইলো) (উৎসর্গ: ব্লগার 'মানুষ', 'বিষাক্ত মানুষ', 'সামী মিয়াদাদ'সহ যেসব ব্যানকৃতরা অশ্লীলতার বিরুদ্ধে নীরবে এবং সরবে সোচ্চার ছিলেন। অবিলম্বে ওদের আনব্যান দাবী করছি। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.