"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "
জাহান্নামীরা আফসোস করবে
জাহান্নামীদেরকে যখন ফেরেশতারা এক হাতে চুলের মুঠি এবং অন্য হাতে পা ধরে চ্যাংদোলা করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে নিয়ে যাবে, তখন জাহান্নামের পাহারাদারগণ জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের কাছে কি কোন সুসংবাদ দাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী পৌঁছেনি? তখন কাফেরগণ বলবে, হ্যাঁ, পৌঁছেছিলো কিন্তু আমরা তাদেরকে ঠাট্টা বিদ্রূপ করতাম এবং মিথ্যা মনে করতাম। তখন আফসোস করবে এবং,
তারা বলবে, কতো ভালো হতো (যদি সেদিন) আমরা (নবী রসূলদের কথা) শুনতাম এবং (তা) অনুধাবন করতাম, (তাহলে আজ) আমরা জ্বলন্ত আগুনের বাসিন্দাদের মধ্যে গণ্য হতাম না। (সূরা আল মূলকঃ আয়াত ১০)
সূরা আল আনয়ামে বলা হয়েছে,
তুমি যদি (সত্যিই তাদের দেখতে পেতে যখন এই (হতভাগ্য) ব্যক্তিদের (জ্বলন্ত) আগুনের পাশে এনে দাঁড় করানো হবে, তখন তারা (চীৎকার করে) বলবে, হায় ! যদি আমাদের আবার (দুনিয়ায়) ফেরত পাঠানো হতো, তাহলে আমরা (আর কখনো) আমাদের মালিকের আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম না এবং আমরা (অবশ্যই) ঈমানদার লোকদের দলে শামিল হয়ে যেতাম। (সূরা আল আনয়ামঃ আয়াত ২৭)
তাদের এ আবেদন নিবেদন ব্যর্থ হয়ে যাবে।
আলাহ্ সরাসরি তাদের কথাকে প্রত্যাখান করবেন। বলা হচ্ছে,
... (আসলে) যদি তাদের আবার দুনিয়ায় ফেরত পাঠানোও হয়, তবু তারা তাই করে বেড়াবে যা থেকে তাদের নিষেধ করা হয়েছিলো, তারা (আসলেই) মিথ্যাবাদী। (সূরা আল আনয়ামঃ আয়াত ২৮)
সূরা যুমারে বলা হয়েছে
যেসব লোক কুফরী করেছে তাদের দলে দলে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নেয়া হবে; এমনি (তাড়া খেয়ে) যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে তখন (সাথে সাথেই) তার (সদর) দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তার রক্ষী (ফেরেশতা)-রা ওদের বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে কোনো রসূল আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের (কেতাবের) আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করতো এবং তোমাদের এমনি একটি দিনের সাক্ষাৎ সম্বন্ধে সতর্ক করে দিতো; ওরা বলবে (হ্যাঁ), অবশ্যই এসেছিলো, কিন্তু কাফেরদের ব্যাপারে (আল্লাহ তায়ালার সে) আযাব (সম্পর্কিত) ওয়াদাই আজ বাস্তবায়িত হয়ে গেলো। (সূরা আঝ ঝুমারঃ আয়াত ৭১)
মানুষ যখন হতাশ ও পেরেশান হয়ে যায় তখনই তার মুখ দিয়ে হতবাক কথা বের হয়। উপরোক্ত দৃষ্টান্তটি তার নমুনা।
অপরাধীরা পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে
তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, তুমি তো দু'বার আমাদের মৃত্যু দিলে, আবার দু'বার জীবনও দিলে, আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকারও করেছি, অতএব (এখন আমাদের এখান থেকে) বেরিয়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা আছে কি? (সূরা আল মোমেনঃ আয়াত ১১)
দু'বার মৃত্যু এবং দু'বার জীবন দান অর্থ - মানুষ অস্তিত্বহীন ছিলো অর্থাৎ মৃত ছিলো, আলাহ জীবন দান করেছেন। আবার মৃত্যু দেবেন এবং পুনরায় কিয়ামতের দিন জীবিত করে উঠাবেন। এ কথা কয়টি স্বয়ং আলাহ্ রাব্বুল আলামীন সূরা আল বাকারায় স্পষ্ট করে বলেছেন,
তোমরা আল্লাহকে কিভাবে অস্বীকার করবে? অথচ তোমরা (প্রথম দিকে) ছিলে মৃত, তিনিই তোমাদের জীবন দিয়েছেন, পুনরায় তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন, অতঃপর (সর্বশেষে) তিনিই আবার তোমাদের জীবন দান করবেন এবং (এভাবেই) তোমাদের একদিন তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। (সূরা আল বাকারাঃ আয়াত ২৮)
অপরাধীরা প্রথম তিনটি অবস্থা অবিশ্বাস করতো না, কেননা এ তিনটি অবস্থা তাদের চোখের সামনেই ঘটতো। কিন্তু শেষাবস্থা তারা প্রত্যক্ষ করতে পারেনি বলে উপহাস করে উড়িয়ে দিতো।
কেননা শেষ অবস্থার খবর একমাত্র নবী রাসূলগণই দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন কার্যত যখন এ অবস্থা ঘটে যাবে তখন তারা স্বীকার করবে এবং কাকুতি মিনতি করবে পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসার জন্য।
সূরা ফাতির এ বলা হয়েছে,
(আযাবের কষ্টে) তারা সেখানে আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের মালিক, তুমি (আজ) আমাদের এ (আযাব থেকে) বের করে দাও, আমরা ভালো কাজ করবো, (আগে) যা কিছু করতাম তা আর করবো না; ... (সূরা ফাতেরঃ আয়াত ৩৭)
অতঃপর তাদেরকে প্রতি উত্তরে আল্লাহ তায়ালা বলবেন,
...আমি কি তোমাদের দুনিয়ায় এক দীর্ঘ জীবন দান করিনি? সাবধান হতে চাইলে কেউ কি সাবধান হতে পারতে না? (তাছাড়া) তোমাদের কাছে তো সতর্ককারী (নবী)-ও এসেছিলো; সুতরাং (এখন) তোমরা আযাবের মজা উপভোগ করো, (মূলত) যালেমদের (সেখানে) কোনোই সাহায্যকারী নেই ! (সূরা ফাতেরঃ আয়াত ৩৭)
আত্মীয় স্বজন ও দুনিয়ার সব মানুষকে বিনিময় দিয়ে হলেও জাহান্নামীরা বাঁচতে চাইবে
... সেদিন অপরাধী ব্যক্তি আযাব থেকে (নিজেকে) বাঁচাতে মুক্তিপণ হিসেবে তার পুত্র সন্তানদের দিতে পারলেও তা দিতে চাইবে, (দিতে চাইবে) নিজের স্ত্রী এবং নিজের ভাইকেও, এবং নিজের পরিবারভুক্ত এমন আপনজনদেরও, যারা তাকে (জীবনভর) আশ্রয় দিয়েছিলো, (সম্ভব হলে) ভূমন্ডলের সবকিছুই (সে দিতে চাইবে), তারপরও (জাহান্নাম থেকে) বাঁচতে চাইবে, (সূরা আল মায়া'রেজঃ আয়াত ১১-১৪)
সূরা আল মোমেনুনে বলা হয়েছেঃ
... সেদিন (মানুষ এমনি দিশেহারা হয়ে পড়বে যে,) তাদের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন (বলতে কিছুই) অবশিষ্ট থাকবে না, না তারা একজন আরেকজনকে কিছু (একটা) জিজ্ঞেস করতে যাবে ! (সূরা আল মোমেনুনঃ আয়াত ১০১)
অন্যত্র বলা হয়েছে,
(সেদিন) এক বন্ধু আরেক বন্ধুর খবর নেবে না, (সূরা আল মায়া'রেজঃ আয়াত ১০)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।