বনের ধারে সে অপূর্ব মায়াময় বৈকালগুলি মিছামিছিই নামবে চিরদিন।
বেশি না দু’একদিন হবে বিয়েটা হয়ে গেছে। নব দম্পতির সাথে বসে তুমুল আড্ডার ঝড় তুলে মানের চাপা অশান্তিটা তাড়িয়ে দিলাম। ভালই চলছিল কৌতুক আর ঠাট্টাগুলো। কিন্তু হঠাৎই হাতে রাখা মোবাইলের গেমটা জটিল হয়ে ওঠায় চুপ হয়ে সেদিকে মন দিলাম।
আমার সাথে আড্ডা দিতে দিতে ক্লান্ত নববধুটি উদাস হয়ে গেছে ততক্ষণে।
নাহ, গেমের জটিলতার সমাধান হচ্ছে না। তবু আবার আড্ডা শুরু করার উৎসাহ পেলাম না। খেয়াল করলাম, পরিবেশটা একেবারে শান্ত হয়ে গেছে। বাইরের রোদটা নরম হয়ে এসেছে।
আর হালকা বাতাসে মৃদু ঝংকার তুলছে রুমে ঝোলানো উইন্ডসেমটা। চোখ তুলে সামনে বসা আর দুটো মানুষের দিকে তাকালাম। একটা ছোট দৃশ্য- কিন্তু আমার কাছে বড়ই মনে হল।
মেয়েটি তার পছন্দের ব্যক্তিটিকে রেখে অপরিচিত একজনের সাথে বেশ সন্তুষ্টচিত্তেই আবদ্ধ হয়েছে। নির্ভরতার সাথে নিজের সাজানো হাতটা তুলে দিয়েছে আরেকজনের হাতে।
আমি দেখলাম সেই মেহেদী রাঙানো হাতের চুড়িগুলোর একটার পর একটা খুঁটিয়ে দেখে চলেছে মেয়েটির সঙ্গীটি। আমি যে তাকিয়ে আছি সেটা আর লক্ষ্যও করল না। দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলাম মোবাইলের স্ক্রীনে। এক হাতে চুড়ি নিয়ে অন্য হাতের এই সুমিষ্ট খেলার তাৎপর্য বোঝার মতা অবশ্য আমার নেই। তবু কিছু কথা মনে খেলে গেল।
চুড়িগুলোর দিকে মনোযোগী দৃষ্টির গভীরতা দেখে মনে হল ওখানে যেন সৃষ্টিজগতে সকল রহস্যের সমাধান আছে। আর লেখা আছে তাদের বর্তমান থেকে ভবিষ্যত। আমার মনে প্রশ্ন খেলে গেল আমার জন্য অস্থির হওয়া ব্যক্তিটির জন্য মনটা অশান্ত থাকে, সমাধান না পেয়ে চুপ সমাধান না করে নিশ্চুপ উপসংহার টানি। সমাধান পেতে হলে কে জানে সবাইকেই হয়ত এই পথ ধরতে হবে।
চিন্তায় ছেদ পড়ল।
-অ্যাই, তোমার এই চুড়িটা ফেটেছে কখন বলত। খুলে ফেল।
নাহ, আমি ভেবেছিলাম আমি না পাই অন্যরা তাদের সমস্যা, অশান্তিগুলো সমাধান পেয়েছে অন্তত। কিন্তু দেখলাম সমাধান পেতে মাঝ পথে কী ভীষণ ঝামেলা। হতাশ মনে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।
কী আশ্চর্য! আকাশের কালো মেঘগুলো জড় হচ্ছে সব। মিষ্টি রোদেলা বিকেলে এই দৃশ্য! হতাশা কাটাতে চাইলাম। নিশ্চয়ই বৃষ্টি হয়ে কালো মেঘের ঘনঘটা দূর হবে নয়ত দমকা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে সব কালো; সব ফাটল আর দুঃচিন্তা।
শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরালাম- গোমড়া মুখের চুড়ির মালিক বারান্দা দিয়ে চুড়িটা ফেলে দিল। পড়ে যেতে থাকা থাকা চুড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
টুপ করে লেকের পানিতে হারিয়ে গেল ওটা। উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম- সমস্যার সমাধান না হলে কী হবে, সমস্যার শেষ তো হয়ে গেছে, তাই না?
৮-১২-২০০৭
রাত ০২:৩০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।