এখন থেকে আমি 'মুক্ত মানব' -এই নিক-এ লিখবো। আপনি আমন্ত্রিত।
: হ্যালো, অমি?
- হঠাত এতোদিন পরে, এতো রাতে মনে পড়লো যে বড়?
: একটা স্বপ্ন দেখছিলাম। মাঝপথে ঘুম ভাংলে প্রচণ্ড পানির তেষ্টা। তারপর তোমার সাথে স্বপ্নটা শেয়ার করতে মন চাইলো।
-বলো নীতা, শুনছি।
: আমি স্বপ্নে দেখছিলাম আমাদের লণ্ডনের সদ্য বিবাহিত জীবন। চার দশক আগের এক অদ্ভুত ফ্ল্যাশব্যাক। সেই বাসা,
সেই ক্যাম্পাস, সেই কাজ পাগল তুমি। সেই বাংলা ভাষায় লেখালেখি তথা স্বপ্রকাশের কাংগালিনী আমি...
-(হেসে) তোমাদের যাদবপুরে ইদানীং টাইম মেশিন বিক্রি হচ্ছে বুঝি?
: আগে পুরোটা শোনো।
সেই ফ্ল্যাশব্যাকে আরো কি দেখলাম যানো? আমি লন্ডন থেকেই বাংলায় সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছি পুরোদমে, ঠিক যেমনটা করছি গত তেত্রিশ বছর ধরে দেশে থেকে-তোমার জীবন থেকে, লন্ডন থেকে নিজকে চিরতরে সরিয়ে নিয়ে।
-তুমি তো মিসেস সেন হয়ে, তোমার ভাষায় 'সাজানো বাগানে পুতুল হয়ে' থাকতে চাওনা বলেই যাদবপুরে ফিরে যেতে চাইলে, আর আমি রিসার্চের কারণে সংগে যেতে চাইলাম না ব'লে আমার থেকে আনুষ্ঠানিক মু্ক্তি নিলে। আজ স্বপ্নে কিভাবে লন্ডন থেকে তোমার বাংলা সাহিত্য চর্চা সম্ভব হলো?
: সেটা বলতেই তো তোমায় ফোন করা এই ভোর রাতে। স্বপ্নে দেখলাম ষাটের দশকের লন্ডন, কিন্তু কিভাবে যেন তখুনি ইন্টারনেট এসে গেছে আমাদের বাসায়। আর আমি অনলাইন-এ ব্লগিং করছি বাংলায়, লিখছি গদ্য-পদ্য-প্রবণ্ধ, সেগুলো পিডিএফ ফাইল হিসেবে পাঠাচ্ছি বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে, পত্রিকায়।
বইমেলায় নিয়মিত বই বেরুচ্ছে আমার-প্রুফগুলো সব অনলাইন-এ দেখে দিচ্ছি। মিসেস সেন হ'য়ে থেকেও নবনীতা দেবসেন হ'তে- নিজের লেখক স্বত্তা বিকশিত ক'রতে লন্ডনের প্রবাস জীবন কে আর তেমন বাধা মনেই হচ্ছেনা..
-ইস, সত্যি যদি আমাদের সময় ইন্টারনেট থাকত! জানো তোমার বানানো চা আমি আজো, তেত্রিশ বছর পরেও কতোটা মিস করি?
: তখনকার আমার জীবনটা একবার ভাবো। আমি সারাদিন ঘরে বন্দী। তুমি দিনরাত লাইব্রেরীতে। নবনীতা দেবসেনের করার তেমন কিছুই ছিলনা।
ডাকযোগে একটা লেখা পাঠালে সেটার ফাইনাল প্রুফ দেখে ছাপা হ'তে হ'তে বছর গড়িয়ে যেত। আমি, মানে আমার লেখক স্বত্তা ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছিল। ছাইচাপা পড়া আগুন নয়, ইঁট চাপা পড়া ঘাস মনে হত তখন নিজকে। সেদিন ইন্টারনেট থাকলে কিন্তু আমার সংসার জীবন এবং লেখক জীবন দুটোই থাকতো। আমি আমি হয়েও তোমার থাকতে পারতাম।
নোবেল পাওয়া একজনের প্রাক্তন নয়, বর্তমান জীবনসংগী হিসেবেই চিনতো লোকে আজ, সেই সাথে বলতো লেখক নবনীতার কথাও।
- স্বপ্ন সেদিন একটা আমিও দেখেছি, নীতা। যাচ্ছিলাম বাংলাদেশে-প্রতিচী ফান্ডের ফেলোশীপে নারীদের সাংবাদিকতা শেখার একটা সমাবর্তণে। হিথরোতে প্লেনে উঠেই ঘুম। স্বপ্নে দেখি আমি বিলেতে নয়, যাদবপুরে অধ্যাপনারত অবস্থাতেই নোবেল পেয়েছি।
দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সংযোগ। রয়েছে অনলাইনে দুনিয়ার সব বিখ্যাত গবেষণা লাইব্রেরীর সব বই এবং জার্ণাল সস্তায়, দ্রুত ডাউনলোডের ব্যবস্থা। দেশী-বিদেশী গবেষকদের সাথে অনলাইনে মতবিনিময়ের সুযোগ। মোটকথা, স্বপ্ণে দেখলাম গবেষণার যে সব সুযোগ-সুবিধার কথা ভেবে সেদিন আমি লণ্ডন ছেড়ে তোমার সাথে দেশে ফিরতে রাজি হইনি, সেগুলোর মোটামুটি সব আজ দেশে ব'সেই পাওয়া সম্ভব, ইন্টারনেটের কল্যানে। তাই ভাবছিলাম, সেদিন ইন্টারনেট থাকলে তোমাকে হারাতে হতোনা।
নোবেল, নবনীতা-দুটোই থাকতো আমার জীবনে।
: সত্যি, আন্তরজাল আমাদের জীবনে চিরদিন অন্তর্জ্বালা হ'য়েই থাকবে অমি! সে যাক, ভালো কথা, বাংলাদেশ তো তোমার জন্মভুমি-এই যে সাইক্লোনে এ্যাতো মানুষের এ্যাতো কষ্ট, তোমার প্রতিচী কি করছে? শুধু উন্ন্য়ন সাংবাদিকতা শেখালেই সব হ'বে? উন্নয়ন-টা না ঘটালে সাংবাদিকরা রিপোর্ট-টা করবে কিসের শুনি?
- প্রতিচী তো শিক্ষা-স্বাস্থ্য বিভিন্ন সামাজিক উন্ন্য়ন ইস্যুতে কাজ করছে। এই দুর্যোগেও নিশ্চ্য় আমরা সাধ্যমতো দাঁড়াবো মানুষের পাশে। তোমরা পাশের দেশ থেকেও যথাসাধ্য ক'রবে এটাই আশা করবো। ভালো থেকো নীতা।
আমায় মনে পড়লে ফোন কোরো। আমরা চোদ্দটা বছর এক ছাদের নীচে ছিলাম ভুল যেওনা।
-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।