আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েকটি অপার্থিব প্রহরে ছায়াসমূহের কান্নার হামাগুড়ি

বৃষ্টি রাতে ... ভাবনা গুলো মেঘের সাথে উড়ে ...

পাশাপাশি তিনটে ছায়া পরেছিল , জোছনায় । মেঘের টুপি পরা খোলা চাঁদের তৈরী তিনটি আল্পনার চেয়ে বহুদূরে, তিনটি চন্দ্রপীড়িত উদ্ভ্রান্ত আত্মার আবদ্ধ হাঁসফাঁস । বিবর্ণ চাঁদকে ঐ মুহূর্তে শ্বাশত মনে হয়নি । মেঘ আর চাঁদের বিবাদ, জোছনার কণায় ভর দিয়ে অলৌকিক পরিবেশে তিনটি আত্মার অবচেতনে এক ঘূর্ণন তৈরী করেছিল বোধহয় । তাই বোধহয় সকলেই নিঃশব্দ থেকেছিল, আর আমি শুনেছিলাম স্ব্‌র্গ যেন নিতান্তই অপার্থিব প্রতুলতা , আর এই রাত, এই জোছনার হলদে কবিতা অবশ্যই পার্থিব অপ্রতুলতা ।

তিনটি ছায়া নড়েচড়ে উঠেছিল, তারপর । কন্ঠে যেন বহু দিনের মাতাল শরীর বেজে উঠেছিল কার- ঃ একটা মাগী ও তো দেখিনা, হাশিম্যা ! ওই দিকটা আইনধার আছিল, ভালা ই বড় আছিল বেঞ্চিটা, এরম রাইত আর পামু না । রাস্তার বাতিগুলান কি নষ্ট না কি কারেন্ট বড়লোকের বারিত বাইজী নাচে ? খানকীর পোলা, মেয়রের মায়েরে ............ এই বলে রশিদ মাতালের আটপৌরে হিক তুলে তার বাক্যটা অসমাপ্ত রেখেই শুনতে লাগল হাশিমের খিস্তি - ঃ এই বাঞ্চোত,হারামীর বাচ্চা রশিদ্যা, তর মাতায় খালি মাগী লাগানোর চিন্তা ! শুয়ারের আওলাদ হালা । দেখ, ঐ চানটারে দেখ, কী সুন্দুর , ক্যাম যেন নেশা লাগে । কালা কালা মেঘগুলান চান্দের পসর দিয়া আমারে যেন্‌ ডাকতাছে ।

হালার পুত - মদ্যামি করস - মাগী ছাড়া কিছু বুঝস না ? রশিদের চেতনায় খেলে যায় - যে তাকে মাতাল বলে গালি দিল, সেও ঝাড়ি মাতাল । কিন্তু মদের নেশা রশিদের চেতনার খেলাকে বাতাসে কোন সহজ কম্পন তুলতে দিলনা । হাশিম বাজিয়ে চলে, মদ্যপ বিষন্নতা । ঃ ভিত্‌রে কিয়ের যেন কান্দন জাগেরে রশিদ্যা । মনে হইতাসে আমি কোনদিন মরুম না ।

এমুন সুন্দর যে দেখছে, সে কি মরতে পারে কুনু দিন? রশিদের টলটলে মন্তব্য, হাশিমের বধির মহাবিশ্বে প্রবেশ করে, কিন্তু কোন আলোড়ন তোলে না । ঃ তোর নেশা জমছে, হারামীর পুত ! অনেকক্ষণ আলোর ঔজ্জল্যের মত শাব্দিক থাকার পরে গাঢ় দাম্ভিক নৈঃশব্দ ফিরে এলে, দাম্ভিক নৈঃশব্দ যেমন গাঢ় অন্ধকার জাগায়, তেমন নৈঃশব্দ জনিত অন্ধকার চন্দ্রালোকিত হয়ে ভাসছিল , তিনটি ফাঁপা আত্বার ভেতরে, অনেকক্ষণ । আর শুধু বাস্তবিক নিয়মে চরাচরের স্তব্ধতা ভেংগে দিয়ে যাচ্ছিল রাতগাড়ি গুলো । বিপন্ন আত্মাগুলোকে যেন স্পর্শ করছিল না সেইসব শব্দ । হঠাৎ বেঞ্ছটার রাস্তার ওপারে বিলক্ষণ মৃতের মত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকা, দাড়ানো বন্ধ থাকা বাতিটা জ্বলে উঠল ।

অমনি ই চাঁদের আলো চপলতার সাথে ঐ বাতিকে সন্দেহ করে, কোথায় যেন উদাসীন ভাবে হারিয়ে গেল । বেজে উঠল, হাশিমের তীক্ষ্ণ, আর্ত কন্ঠ - ঃ ওরে, আন্ধারই তো ভাল আসিল । চান্দের আলোর আন্ধাইর ! ওরে আন্ধাইর, তুই কই পালাইলি ? তারপর রশিদের দিকে, সোডিয়াম আলো পরা মুখের দিকে তাকিয়ে আচ্ছন্নের মত শাপন্ত করল । ঃ কি দরকার আসিল বাতি নিয়া কতা কবার ? দিলি তো বাত্তিটা আইন্না ! রশিদ, হাশিমের প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে ডান হাত দিয়ে হাওয়ায় আবর্তন করল কয়েক বার, তারপর বিড়বিড় করল, যেন সবার অলখে । আবার নৈঃশব্দ, চরাচর জুড়ে বাজতে লাগল রাতগাড়ির শব্দ ছাপিয়ে ।

ঐ দূরে ফ্ল্যাটবাড়িগুলোতে সমস্ত আলো নভেনি । কি করে ঐ গার্হস্থ্য মানুষের দল ? মধ্যরাত পেরিয়ে যাবার পরে এইসব অবান্তর লাগছিল যুবকদের । সবকিছু ছাপিয়ে একটা কষ্ট বাজছিল তাদের হৃদয়ে । কিসের কষ্ট ? কেউ কি জানে ? দুঃখগুলোর আশেপাশে, তিনটি ছায়ার পাশে, যখন আরো একটি ছায়া জাগে , নারীর ছায়া - ঈশ্বরীর ছায়া, তখন রাস্তার বাতিটি আবারো নিভে গেল । উদাসীন চাঁদ যেন নিঃসন্দেহে পরম নির্ভরতায় ফিরে এল তিনটি ছায়ার মধ্যে ।

মানুষীর ছায়াটি - অপার্থিবতা নিয়ে এগিয়ে আসছে, আরো তিনটি অপার্থিব ছায়ার দিকে । যুবকদের মনে হ্ল, এইসব তাদের কল্পনা, স্বাপ্নিক নিয়মের যথার্থ বাস্তবতা । মানুষীর কি মনে হয়েছিল , আমি সেটা জানি না । তিনটি পুরুষ আত্মার ছায়া, সে মানুষীর ছায়ায় দেখতে পেল একটা পুরো শরীর, নারীর শরীর । তারা তখন বোধের মিলনে দেখেছিল, এক রাত উদ্দীপনা ছায়াসমেত শরীর নিয়ে হাজির হয়েছে ।

তার ঠোঁটের কোনে হাসি, চোখে কান্নাসহ আদিম আহবান । অথবা কান্না ছিল না । আমি ভুল দেখেছি - যেমন আজ রাতে ঈশ্বরীর স্বপ্ন আজ রাতে বদলে যায় । আমার মনে হয়েছিল - চারটি বিপন্ন আত্মা চাঁদের কষ্টের নিচে দোদুল্যমান আলো আঁধারিতে একা একা রাতভর কাঁদছে ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।