বইপড়ায় কখনোই অরুচি না থাকলেও কেন যেন ইংরেজী বই নিজে থেকে নিয়ে পড়া হয়না। তাই ইংরেজের দেশে এসেও কয়খান কেতাব উদরস্থ করেছি কত কবছরে দিব্যি গুণে ফেলা যায়। তার ওপরে নেট আসার পরে হাবিজাবি পড়েই দিন শেষ হয়। তাই নতুন বুদ্ধি বের হয়েছে দেখলাম। আমার মত অনেকেই আছে মনে হয়।
আজকাল দিব্যি অডিওবুক পাওয়া যায়, যাতে প্রথম পাতা থেকে শেষ পর্যন্ত কেউ একজন দাড়ি কমা সহ পড়ে যায়, চুপচাপ শুনে গেলেই হল।
কদিন আগে ডাউনলোড করেছিলাম দ্যি কনফেশন অফ এন ইকনমিক হিটম্যান। বছরদুয়েক আগে বের হওয়া এই বইটি আন্তর্জাতিক বেস্টসেলারগুলোর মধ্যে একটা হয়েছিল। বইটি মূলত একজন আমেরিকান বুদ্ধিজীবির যিনি তার দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের জন্য কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ ক্রচছেন। তার সেই সময়কার হাড়ির খবর আর তার বাস্তব ফলাফলের ঘটনা নিয়েই বইটি।
সাড়ে নয় ঘন্টার অডিও টানা দুই দিনে শেষ করতে হয়েছে। এতোই টানটান উত্তেজনা প্রতিটি মিনিটে।
বিশ্বব্যাপী পূঁজিবাদের ভেতরের কুৎসিত দৃশ্যগুলো উঠে এসেছে। ঔপনিবেশিকতার দিন শেষ, কারণ সহজ, দেশ দখল করা এখনো মুশকিল না, কিন্তুক দখল করে রেখে সেখানে থেকে পয়সা বানানো নিতান্তই ইনএফিশিয়েন্ট। তাই বেকুবগুলোকে দিব্যি স্বাধীনতা দিয়ে দাও, তারপরে সেইদেশের ব্যাবসায়ীদের বল তাদের জিনিষ কিনব আমি।
সহজ সূত্রঃ রাহেলা মারা যাবে, মর্জিনা সপ্তাহে সাতদিন ষোল ঘন্টা করে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটবে আর নাইকির প্রফিট টু পএন্ট ফাইভ পার্সেন্ট বাড়ায় দুই বিলিওন ডলার এক্সট্রা ইনকাম হবে।
আর যেই টাকাটা বিদেশের থেকে জিনিষ কিনতে খরচ হচ্ছে সেটাও আসলে খরচ যেন না হয় তার জন্য সহজ রাস্তা আছে। সেই দেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা কর। টাকার জন্য চিন্তা নাই, তেনারা আছেন না? তেনাদের পয়সায় দিব্যি অবকাঠামো বানিয়ে নাও, কারণ স্বর্ণোজ্জ্বল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসছে। তখন দিব্যি সব শোধ করে দেয়া যাবে।
কিন্তু সেই বানোয়াট তথ্যে ঠাসা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কখনোই আসেনা আর সেই টাকাও শোধ হয়ানা। কিন্তু রহস্যবলে প্রতি বছরেই কোষাগারের সিকিভাগ কোন জাদুবলে বিদেশে ফেরত চলে যায়, চক্রবৃদ্ধি ইন্টারেস্ট শোধ করার জন্য। গল্পটা পরিচিত লাগছে? এই লেখকের জবানীতে বাংলাদেশের নাম আসেনি, কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, পানামা, ইরান, আফগানিস্তান, সাউদি আরবের ইতিহাস উঠে এসেছে। কিভাবে সেই দেশগুলোতে নেশন বিল্ডিং নামে মহা লাভজনক ব্যাবসা হয়ে এসেছে গত এক শতকে।
পানামার ইতিহাস আর লিখছি না।
বইয়ের একটা বড়ো অংশ গেছে পানামার গল্প বলে। শুধু ১৯৮৯ সালের আমেরিকা পানামা যুদ্ধের নামটা উল্লেখ করেই শেষ করছি। বেশিদিন আগের কথা না, আমাদের সময়েরই ঘটনা। খবরের মিডিয়াতে যেন খুব সামান্যই লেখা হয় সেজন্য যথেষ্ট যত্ন নেয়া হয়েছে। হাজার তিন-চার বেসামরিক মানুষ মারা গেছিল তাতে।
বিনা উস্কানীতে পানামার মাটিতে আমেরিকান সেনারা নামল। পানামার বাহিনীকে পরাজিত করে, পানামার গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হল। অভিযোগ, তিনি পানামায় বসে আমেরিকান আইন ভঙ্গ করেছেন, তাই আমেরিকায় তার বিচার করা হবে। আমেরিকায় নিয়ে তাকে ৪০ বছরের জন্য ফাটকে পুরে দেয়া হল। সারা বিশ্ব খুব অল্পই জানল।
তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল অভিযোগ ছিল তিনি ড্রাগ ডিলারদের দমন করছেন না। আনঅফিশিয়াল আসল অভিযোগ ছিল, পানামার মাটিতে অবস্থিত পানামা ক্যানেল তিনি আমেরিকানদের হাতে তুলে দিতে গড়িমসি করছিলেন আর দ্বিতীয় আরেকটি খাল কাটার পরিকল্পনা করছিলেন জাপানীদের সাথে জাপানী টেকনলজীতে। এতো বড় অপমান তো আর মেনে নেয়া যায়না। তাই ব্যাবস্থা নিতেই হল...
ব্লগের কেউ চাইলে পড়ে দেখতে পারেন। আর কেউ পড়ে থাকলে অনুভূতি শেয়ায়র করতে পারেন।
যদিও আমি নিজেও জানি বইয়ের তথ্য ১০০% হাচা না, মাগার অনেক ক্ষেত্রেই সিএনএন এর গারবেজের চেয়ে মন্দ না।
কনফেশনস অফ এন ইকনমিক হিটম্যান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।