হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই
সকাল থেকেই জোর প্রস্তুতি শুরু হলো আমাদের। আমরা যাচ্ছি মেলাঘর নামক একটি জায়গায়। আগরতলা থেকে দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। বাসে যেতে হবে। নাস্তা করে গেলাম শহরের একপ্রান্তে অবস্থিত বটতলা-নাগেরজলা বাসস্ট্যান্ডে।
বাসের অবস্থা খুব সুবিধার না। তবে ভাড়া কম। মাত্র ২০ রুপি। ত্রিপুরায় সব জিনিসপত্রের দাম আমাদের মতোই হলেও বাস ভাড়া তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আর কম অ্যালকোহলিক বেভারেজের দাম।
কিংফিশার বিয়ারের দাম মাত্র ৫৫ রুপি। হুইস্কি, ভদকা ইত্যাদির দামও অনেক কম। তবে যা পাওয়া যায়, তার সবই সে দেশে উৎপাদিত। বাইরের জিনিস পাওয়া যায়ই না। পুরো ত্রিপুরার কোথাও আপনি গোল্ড লিফ বা বেনসন সিগারেট পাবেন না।
আপনাকে হয় নেভি কাট অথবা ফ্লেক সিগারেট খেতে হবে। তবে স্বাদের দিক থেকে নেভি কাট আমাদের বেনসনের মতোই। সুতরাং যারা বেনসন বা গোল্ড লিফে অভ্যস্ত, তারা এ বিষয়টি মাথায় রাখতে পারেন।
আর অ্যালকোহলের ব্যাপারে একটি অন্যরকম নিয়মও পালন করা হয় ভারতের রাজ্যগুলোতে। বড় বড় কোম্পানির অনেক প্ল্যান্ট আছে বিভিন্ন রাজ্যে।
নিয়ম হলো, এক রাজ্যে উৎপাদিত অ্যালকোহল সেই রাজ্যে বিক্রি করা যাবে না। এবং সেটি লেখা থাকতে হবে মোড়কেই। আপনি যদি ত্রিপুরায় সিগনেচার হুইস্কি কিনেন, দেখবেন ইংরেজিতে হয়তো লেখা আছে- এটি আসামে উৎপাদিত হয়েছে। তবে একমাত্র ত্রিপুরাতে বিক্রি করা যাবে। তার মানে ত্রিপুরা রাজ্যে যে অ্যালকোহল উৎপাদিত হয়, সেগুলো ত্রিপুরায় বিক্রি হয় না।
হয় অন্য রাজ্যে। এতে পরিবহন খরচ কিছুটা বেশি হলেও হিসাব রাখতে নাকি সুবিধে। তবে অন্য রাজ্যে বিক্রি হলেও দামের কোনো হেরফের নেই। যে জিনিসের দাম ৫৫ রুপি, সেটি সব জায়গায়ই ৫৫ রুপিতে পাবেন। বরং পরিবহন খরচ কম হলে ৫০ রুপিতেও পেতে পারেন।
পণ্যের গায়ে যা লেখা থাকবে, তার চেয়ে দাম কোনোমতেই বেশি নেয়া যাবে না, বরং প্রয়োজনে কম রাখতে হবে।
ত্রিপুরায় অ্যালকোহল নিষিদ্ধ কিছু নয়। লাইসেন্স করা দোকান রয়েছে প্রতিটি বাজারেই। হোক না সেটি জেলা শহর কিংবা মফস্বল। দু'একজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, ওখানে মদ-বিয়ার ইত্যাদি খাওয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
লাইসেন্সের দোকান থেকে প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ অ্যালকোহল কিনে নিজের ঘরে কিনে পান করতে পারে। দামে যেহেতু সস্তা, তাই অনেকে প্রতিদিনই খায়। তবে মদ খেয়ে বাইরে বেরিয়ে মাতলামি করলে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। এ ব্যাপারে ত্রিপুরা পুলিশ নাকি কাউকে ছাড় দেয় না। আমরা যে কয়দিন ঘুরেছি, এমন কাউকে দেখিনি যে মদ খেয়ে মাতলামি করছে।
অথচ সবাই খাচ্ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আইনগতভাবে স্বীকৃত হলেও মদ সেখানে সামাজিকভাবে অনেকটাই অস্বীকৃত। যে কারণে হুইস্কি-বিয়ার কিনে কেউ প্রকাশ্যে বহন করে না। নিদেনপক্ষে খবরের কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে নেয়। যদিও সবাই জানে 'দাদা'র হাতে কী, কিন্তু মুড়িয়ে নিলে এ ব্যাপারে কেউ কোনো কথাই বলবে না।
প্রকাশ্যে নিলে বরং দু'চারটি গালি খাবার সম্ভাবনা থাকে।
যা হোক, বাস ছাড়ল। শহর পেরুতেই সবুজ আর সবুজ। আছে ঘন বন, চায়ের বাগান। এর মাঝে ছোট কিন্তু সুন্দর রাস্তা।
ঢাকা থেকে একবার সাংবাদিকদের ত্রিপুরা দেখাতে নিয়ে গিযেছিলো সেখানকার পর্যটন বিভাগ। সেখানে প্রথম আলোর সাংবাদিককে নাকি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেছিলেন, আমরা গরীব। আমাদের প্রায় কিছুই নেই। কিন্তু আমাদের যা আছে তা অন্য অনেকের নেই। আমাদের ভেজিটেশন আছে।
মানিক সরকার বাড়িয়ে তো বলেনইনি, বরং এতো সবুজ যে মনে হয় পুরো দেশটাই ছেয়ে আছে গাছে আর গাছে।
ঘণ্টা দুয়েক পর নামলাম মেলাঘরে। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সনজয় দাদা। তিনি রিকশা করে আমাদের নিয়ে গেলেন সাগরমহলে। এখানে সাগরমহলের একটু পরিচিতি দেওয়া আবশ্যক।
আমরা আসলে এখানে দেখতে এসেছি 'নীরমহল' নামের একটি প্রাসাদ দেখতে। ত্রিপুরার বিখ্যাত মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্যবাহাদুর তাঁর গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন অবকাশ যাপনের জন্য এই প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন। প্রাসাদের কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৩০ সালে এবং শেষ হয় ১৯৩৮ সালে। ইংল্যান্ডের প্রকৌশলী সংস্থা মার্টিন অ্যান্ড বার্ন কোম্পানি এই প্রাসাদ তৈরি করেছিলো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজপরিবারের সম্পর্ক ছিলো খুবই মধুর।
জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও নাকি এই প্রাসাদে এসেছিলেন একবার। এবং অবধারিতভাবেই লিখেছিলেন একটি কবিতা। তবে রাজা খুব বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি এই প্রাসাদের মাধুর্য। কারণ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।