আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিপুরা ভ্রমণ: বিচ্ছিন্নতায় মিলনের বোধ - ১

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

বিদেশের মাটিতে একা একা হাঁটছেন। রাতে। উদ্দেশ্য কোথাও চা-কফি পাওয়া যায় কি-না। আশেপাশের সব দোকানই বন্ধ। এমন সময় শুনতে পেলেন সামনে দুটি লোক বাংলাতে কী নিয়ে যেন উত্তেজিতভাবে তর্ক করছে।

আপনার ইচ্ছে হবে না ছুটে গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরতে? মনে হবে না বিদেশ-বিভুঁইয়ে আপনি হঠাৎ করেই আর একা নন? না, তেমনটা আমার মনে হয়নি। আদপে যে রাস্তায় আমি চায়ের জন্য ঘোরাঘুরি করছি, সেটিকে আমার বিদেশ বলেই মনে হচ্ছে না। বিদেশের কোনো লেকে গিয়ে যদি নৌকাওয়ালার মুখে শুনতে হয়- ‘হেরা কোম্বালা আইব, আর কোম্বালা যাইব হেই চিন্তায়ই অস্থির’, তাহলে সে দেশটিকে বিদেশ বলে মেনে নেওয়াটা কঠিন। গিয়েছিলাম ত্রিপুরায়। আমরা তিনজন।

মামুন ভাই, সুমন ভাই এবং আমি। তিনজনই চাকুরিজীবি। সময় বের করা কঠিন। ঈদের ছুটির সাথে আরো দু’একদিন ছুটি নিয়ে তার সাথে আগে-পরে দুই শুক্র-শনিবার মিলিয়ে অসহ্য ঘুরাঘুরি করে পাসপোর্ট-ভিসা-ট্রাভেল ট্যাক্স-ডলার এনডোর্স ইত্যাদির ঝঞ্ঝাট সহ্য করে অবশেষে ১২ তারিখের ‘ফ্লাইটে’ উঠলাম বিদেশ যাওয়ার জন্য। আমাদের ‘ফ্লাইট’ ছাড়ল সকাল ৭টায়, কমলাপুর বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে, বিআরটিসিরই নিজস্ব বাহনে।

প্রাথমিক গন্তব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরখার নামক জায়গায়, সেখান থেকে আখাউড়া চেকপোস্ট, তারপর ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায়। আমরা চেষ্টা করেছিলাম ঢাকা-আগরতলার সরাসরি বাসে যেতে। কিন্তু রাস্তা খারাপের কারণে বা অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর কার্যক্রম বন্ধ; আগরতলা থেকে সপ্তাহে দুটো বাস আসে- মঙ্গলবার ও শুক্রবার। তাও অনিশ্চিত। অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করা যাবে না ভেবে মামুন ভাই আগেই বিআরটিসির টিকিট কেটে রেখেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত আগরতলার বাস না পেয়ে সেই টিকিটই কাজে লাগল আমাদের। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে কমলাপুর বিআরটিসির বাস টার্মিনালের রিকশা ভাড়া বড়জোড় ২০ টাকা। কিন্তু একে তো ঈদের মৌসুম, তার ওপর তখন বাজে সকাল ৬টা। ঢাকার রাস্তায় রিকশা যথেষ্ট। কিন্তু তারা মনে হয় ‘সিন্ডিকেট’ করে রেখেছে যে ৫০ টাকার নিচে ভাড়া যাবে না।

অবস্থা এমন যে শেষ পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাটাই ঝামেলার হয়ে যাচ্ছে। রিকশাওলাদের ওপর রাগ করা যায় না, কিন্তু ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাওয়াটাও মেনে নিতে পারছিলাম না, তাই ফুঁসতে ফুঁসতে পৌঁছলাম বাসস্ট্যান্ডে, তখন সকাল ৬টা ৫০ বাজে। গিয়ে দেখি আমার চেয়েও খারাপ অবস্থা বাকি দু’জনের। একজন হাঁটতে হাঁটতে এবং সাথে ব্যাগ টানতে টানতে আসছেন, আরেকজন রিকশাওয়ালা হিসেবে পেয়েছেন একজন অভিজ্ঞ বুড়ো আর্নেস্ট হেমিংওয়েকে- যিনি কি-না এক প্যাডেল মারেন, আরেক প্যাডেল মারার আগে ভাবেন এই দুই প্যাডেলের মাঝখানের সময়টাতে তিনি এই পৃথিবীর ইতিবাচক পরিবর্তনে তাৎপর্যপূর্ণ কী কী অবদান রাখছেন! সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে, সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে (আরো কী কী যেন বলে!) এবং এ ভ্রমণে আমাদের শত্রুদের মুখে ছাই না দিয়ে মোবাইল ফোনে ‘আমরা আগরতলায় যাচ্ছি’ সে তথ্যটা জানিয়ে তাদের মধ্যে ঈর্ষা রোপণ করে অবশেষে সাতটা বাজার মিনিটখানেক আগে বিআরটিসির বাসের নোংরা সিটগুলোতে পরিষ্কার প্যান্ট পরিহিত পশ্চাৎদেশ ঠেকালাম। তারপরও সন্দেহবাদীদের সন্দেহ দূর হচ্ছিল না, নিজেরাও সন্দিহান ছিলাম আসলেই যাচ্ছি কি-না।

তাই তিনজনই প্রশ্নটা ভাবলাম এবং পরস্পরকে জিজ্ঞেসও করলাম- সত্যিই কি আমরা যাচ্ছি?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.