সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আমেরিকার সামরিক অভিযানের দিনক্ষণ, মাত্রা, উদ্দেশ্য, বিস্তৃতি ও স্থায়িত্ব এবং এর পরিণতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। আমেরিকা ও তার মিত্রদের সামরিক বাহিনী অভিযান শুরু করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে বসে আছে আগস্ট মাস শেষ হওয়ার আগ থেকেই। কিন্তু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের প্রস্তাব সে দেশের পার্লামেন্টে নাকচ হয়ে যাওয়ায় অবশিষ্ট একমাত্র সঙ্গী ফ্রান্সকে নিয়ে যুদ্ধ শুরু করার আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা সব দায় নিজের কাঁধে নেওয়ার পরিবর্তে কংগ্রেসকে সঙ্গী করার চেষ্টা করছেন। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জি-২০ গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকরা ওবামাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কংগ্রেস যদি অনুমোদন না দেয় তাহলে তিনি কী করবেন। ওবামা এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন।
তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, শর্তসাপেক্ষে কংগ্রেস হয়তো অনুমোদন দেবে। কারণ অনুমোদন না দিলে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির প্রেসিডেন্টের এমন পরাজয় পুরো আমেরিকান জাতির জন্য হবে লজ্জাকর। এ উদাহরণের জের ধরে ভবিষ্যতে বিশ্ব অঙ্গনে আমেরিকাকে আরও অবমাননাকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। এখন অভিযান শুরু হওয়ার দিনক্ষণ নির্ভর করছে কংগ্রেসের অনুমোদন কবে নাগাদ পাওয়া যায় তার ওপর। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল যারা সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের স্থান পরিদর্শন করেছেন তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের হাতে এ মাসের ২০-২১ তারিখের আগে পেঁৗছবে না।
সুতরাং বলা যায়, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের পর যে কোনো দিন আমেরিকার সামরিক অভিযান শুরু হতে পারে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মেয়াদ এতদিনে আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। এযাবৎ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ২০ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছে পাশর্্ববর্তী দেশগুলোতে। আরও প্রায় ৪০ লাখ মানুষ দেশের ভেতরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এখন আবার আমেরিকার এই হুমকির মুখে মানুষজন ভিটামাটি সব ফেলে দলে দলে পালিয়ে যাচ্ছে পাশর্্ববর্তী দেশে। প্রশ্ন উঠেছে আড়াই বছর যাবৎ আমেরিকা অপেক্ষায় থেকে এই সময়ে অভিযান চালাতে বদ্ধপরিকর কেন? যদিও আমেরিকা এখন অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছে বাশার আল আসাদ কর্তৃক রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনাকে। তবে একটু পেছনের দিকে তাকালে দেখা যাবে সিরিয়ার আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ে আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশবিশেষ। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবি্লউ বুশ সিরিয়া, ইরাক, ইরান ও উত্তর কোরিয়াকে আখ্যা দিয়েছিলেন শয়তানের অক্ষশক্তি হিসেবে। আমেরিকার মূল টার্গেট হলো ইরান ও তার কট্টরপন্থি ইসলামিক সরকার।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের সময় আমেরিকার একান্ত অনুগত ইরানের রাজা শাহ পাহলবি যেভাবে অপদস্থ হয়েছিলেন এবং তেহরানের দূতাবাস ভবনে প্রায় দেড় বছর যাবৎ সব মার্কিন কর্মকর্তাকে আটকে রেখে ইরান আমেরিকাকে যেভাবে অপমান করেছিল সে কথা আমেরিকা কখনো ভুলে যায়নি। অধিকন্তু ইরান আমেরিকার ধমনীসম ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ইরাকের কুয়েত দখল, ২০০৩ সালে আমেরিকা কর্তৃক সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত ও ফাঁসিতে ঝোলানো ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপট এবং তার ফলাফল দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন কত ধূর্ততার সঙ্গে কূটচালের প্যাঁচে ফেলে আমেরিকা তাদের ঘোষিত শয়তান রাষ্ট্রগুলোকে চীনের দার্শনিক সুন-ঝু'র তত্ত্বের কায়দায় একেক করে ঘায়েল করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ইরাক ইতোমধ্যে ভূপাতিত। কোনো বিচারেই কেউ বলতে পারবেন না যে, সাদ্দাম হোসেনের ইরাক থেকে বর্তমান ইরাক ভালো আছে।
এখন সিরিয়ার আসাদের পালা। সিরিয়ায় সফল হলেই পরবর্তীতে আমেরিকা সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে ইরানের বিরুদ্ধে। সিরিয়ার শাসক বাশার আল আসাদ একনায়ক ও স্বৈরশাসক, এ বিষয়ে বিশ্বের গণতান্ত্রিক সমাজ ও মানুষ একমত। কিন্তু মানুষের প্রশ্ন হলো আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে। সিরিয়ার বাশার আল আসাদ লিবিয়ার গাদ্দাফির মতো উগ্র, খামখেয়ালি বা অত্যাচারী শাসক নন।
আরব বসন্তের জের ধরে বাহরাইনের একনায়ক ও স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সে দেশের মানুষ যখন বিপ্লবে ফেটে পড়েছিল, তখন সৌদি আরব সেনাবাহিনী পাঠিয়ে তা দমন করেছিল আমেরিকার পূর্ণ সমর্থনে। আরব বসন্তের জোয়ারে মিসর, ইয়েমেন ও তিউনিশিয়ার স্বৈরশাসকরা পদচ্যুত হয়েছিলেন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ধাক্কায়। সেখানেও বিপ্লবের শুরুর দিকে ওইসব দেশের স্বৈরশাসককে আমেরিকা সমর্থন দিয়ে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। লিবিয়ার প্রেক্ষিত ছিল ভিন্ন, যার সঙ্গে সিরিয়ার পরিস্থিতির কিছুটা মিল আছে।
এটা এখন মোটামুটি পরিষ্কার যে, আরব বসন্তের জোয়ারের আড়ালে আমেরিকা, সৌদি আরব ও তাদের মিত্ররা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পন্থা হিসেবে সিরিয়ায় আসাদবিরোধীদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে তখন রাস্তায় নামিয়ে দেয়। কিন্তু কথায় বলে, গধহ ঢ়ৎড়ঢ়ড়ংবং, ড়েফ ফরংঢ়ড়ংবং. সুযোগ পেয়ে আল-কায়েদা ও তাদের একান্ত অনুসারী জিহাদপন্থি 'নুসরা ফ্রন্ট' স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে সশস্ত্র যুদ্ধের শুরুতেই বিদ্রোহীদের সমান্তরালে আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে। প্রথম থেকেই আল-কায়েদা ও নুসরা ফ্রন্ট অস্ত্রশস্ত্র, জনবল ও অর্থের বলে বলিয়ান হয়ে বিদ্রোহীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রুপ হিসেবে আত্দপ্রকাশ করে এবং সবক্ষেত্রে নিজেদের একটা কর্তৃত্ব ও প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়, যে অবস্থান তারা এখনো ধরে রেখেছে। আমেরিকার গোয়েন্দাসহ প্রায় সব বিশ্লেষকের ধারণা বর্তমান অবস্থায় গৃহযুদ্ধের জের ধরে আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে আল-কায়েদা ও তাদের সমর্থনকারীরাই ক্ষমতা দখল করে নেওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যার কারণে আমেরিকা প্রথম থেকেই এক পা এগোয় তো দুই পা পিছিয়ে যায়, এ রকম একটা অবস্থায় কাটিয়ে দিয়েছে আড়াই বছর।
এতদিনে সিরিয়ার পরিস্থিতি আমেরিকার জন্য একটা ভয়ঙ্কর উভয় সংকট সৃষ্টি করেছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ যদি এই যুদ্ধে জয়ী হয় তাহলে ইরান ও লেবাননের জিহাদি গ্রুপ হিজবুল্লাহর লম্ফঝম্ফ যেভাবে বেড়ে যাবে তা ইসরায়েল ও আমেরিকা এবং সৌদি আরব কারও জন্য সুখকর হবে না। অন্যদিকে আসাদের পতনের পর আল- কায়েদা সমর্থিত গ্রুপ যদি সিরিয়ার ক্ষমতায় বসে তাহলে সেটি হবে ইসরায়েল ও আমেরিকার জন্য আরও মহা দুঃসংবাদের বিষয়। যার কারণে গত আড়াই বছর আমেরিকা দূর থেকে সৌদি আরব, তুরস্ক ও জর্ডানের মাধ্যমে তাদের অনুসারী বিদ্রোহী গ্রুপকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও অর্থ দিয়ে পরিপুষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু আল-কায়েদা গ্রুপকে টপকে যুদ্ধের নেতৃত্ব আমেরিকার পছন্দের বিদ্রোহীরা নিতে পারেনি।
অন্যদিকে বিগত তিন-চার মাস যাবৎ আসাদের সেনাবাহিনী একের পর এক বিদ্রোহীদের হটিয়ে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা আসাদ বাহিনী বজায় রাখতে পারলে হয়তো আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিদ্রোহীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ত।
এ সময়ে উঠল রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এবং সেই অজুহাতে আমেরিকার রণপ্রস্তুতি ও হুঙ্কার। এ পর্যন্ত যতটুকু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তাতে বোঝা যায় আমেরিকার আসন্ন সামরিক অভিযানের উদ্দেশ্য আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা নয়, আমেরিকা বলছে, এই অভিযানের লক্ষ্য হবে আসাদকে একটা সমুচিত শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু ঘোষিত অভিযানের পরিধির বিষয় বলা হয়েছে তা হবে সীমিত ও সংক্ষিপ্ত।
বিশ্লেষকদের অনুমান এ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো আসাদ বাহিনী যেভাবে একের পর এক সাফল্য পাচ্ছিল তা থামিয়ে দিয়ে তাদেরকে কিছুটা পেছনে হটিয়ে দেওয়া এবং যতটুকু সম্ভব দুর্বল করে দেওয়া, যাতে আমেরিকার অনুসারী বিদ্রোহী বাহিনী নতুনভাবে সজ্জিত হওয়ার সময় ও সুযোগ পায়। একইসঙ্গে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু বিমানের অন্যতম টার্গেট হবে আল-কায়েদা ও নুসরা ফ্রন্টের যোদ্ধারা এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র। যতদিন পর্যন্ত আমেরিকার অনুসারী বিদ্রোহী বাহিনী আল-কায়েদার তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী না হবে ততদিন গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিকে ঝুলিয়ে রাখাই আমেরিকার এখন মূল লক্ষ্য।
আসাদকে এখন ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে ইরাকের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালের মতো অভিযানের পথে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই সময়ে ওইরকম আরেকটি সর্বাত্দক অভিযান চালানোর পক্ষে আমেরিকার জনগণ সায় দেবে বলে মনে হয় না।
জরিপে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৬০ ভাগ আমেরিকান সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের বিপক্ষে। অন্যান্য মিত্র দেশ সমর্থন দিলেও ফ্রান্স ব্যতীত আর কেউ সৈন্য এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অভিযানে অংশ নিতে রাজি নয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক এখন সবচেয়ে শীতল অবস্থায় আছে। ইতোমধ্যে রাশিয়া হুমকি দিয়েছে, এমন হলে তারা যুদ্ধে সিরিয়ার পক্ষ নেবে।
তা ছাড়া বারাক ওবামা নিজেও এই সময়ে ইরাক স্টাইল অভিযানে যাওয়ার পক্ষে নয়। অন্যদিকে বিষ ফোঁড়ার মতো আল-কায়েদা ও জিহাদি জঙ্গিগোষ্ঠী বিশ্বব্যাপী আমেরিকার দূতাবাস ও নাগরিকদের বর্তমানে তটস্থ অবস্থায় রেখেছে। এখন দেখা যাক ২১ আগস্ট আসাদ বাহিনী রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে_ এই অভিযোগ কতটুকু যৌক্তিক। রাসায়নিক অস্ত্র হলো এক ধরনের গ্যাস, যা কোনো বড় কামানের শেলের মাধ্যমে বহন করে নির্দিষ্ট টার্গেট এলাকায় ফাটিয়ে গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং যার আওতার মধ্যে পড়লে মানুষসহ সব প্রাণী মারাত্দকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ জন্য এটাকে বলা হয় মারণাস্ত্র।
যারাই এটা ব্যবহার করুক না কেন তা করা হয় সাধারণত শেষ অবলম্বন হিসেবে। তাই যেখানে আসাদ বাহিনী এ সময়ে একের পর এক জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন তারা কেন এটা ব্যবহার করবে, তার কোনো যৌক্তিকতা বাহ্যিকভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। তা ছাড়া এটা তো আসাদের উপলব্ধির বাইরে থাকার কথা নয় যে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হলে আমেরিকার অভিযান অবধারিত। কারণ এর আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে তা হবে আসাদের জন্য রেডলাইন অতিক্রম করার সমতুল্য। মাস পাঁচেক আগে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের একটা অভিযোগ উঠেছিল।
তখন কথা উঠেছিল যে, রাসায়নিক অস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে কিনা। প্রেসিডেন্ট ওবামা কর্তৃক রেডলাইন এলার্ম ঘোষণা করার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকাকে যুদ্ধে জড়ানোর জন্য এ কাজটি কোনো একটি বিদ্রোহী গ্রুপ বা ইসরায়েল করে থাকতে পারে, এমনটি কেউ বললে তা অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ২১ আগস্ট রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের খবর প্রথম প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তা প্রকাশিত হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস্ পত্রিকায়। আমেরিকা নিজেরাই যে এমন কারসাজি করেনি, তাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে একই কৌশলে যুদ্ধ শুরু করার জন্য এর আগেও আমেরিকা বহু কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে এবং তার জন্য অজুহাত সৃষ্টি করেছে।
ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধ জড়ানোর প্রেক্ষাপটের দিকে একবার নজর দিলেই এ কথার যথার্থতা পাওয়া যায়। যাই হোক, এ যাত্রায় সব পক্ষই এখন সমর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ অভিযানে আমেরিকা স্থলবাহিনী ব্যবহার করবে না বলে আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকাশিত পরিকল্পনা থেকে জানা যায়, আমেরিকা অভিযান চালাবে বিভিন্ন ধাপে। প্রথম ধাপে সাগরে অবস্থিত জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সিরিয়ার কমান্ড-কন্ট্রোল, সরবরাহ লাইন, বিমানবিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বিমান উড্ডয়নের রানওয়েগুলোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে।
দ্বিতীয় ধাপে আমেরিকা ব্যাপক বিমান আক্রমণ চালাতে পারে, যার লক্ষ্য হবে সিরিয়ার বিমান বাহিনীকে অকার্যকর করে দেওয়া এবং কয়েকটি উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা ঘোষণা করা, যাতে বিদ্রোহীদের ওপর সিরিয়া বিমান আক্রমণ চালাতে না পারে। তারপর যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তুরস্ক ও জর্ডান সীমান্তে একটা করে বাফার জোন গড়ে তোলার চেষ্টা চালাবে, যাতে পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী বিদ্রোহীদের সব ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়। সিরিয়ার বিমানবিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বিমান বাহিনী অত্যন্ত আধুনিক ও শক্তিশালী। প্রথম ধাপের আক্রমণে আমেরিকা সিরিয়ার সব ব্যবস্থা অকার্যকর করতে পারবে না। সিরিয়া সর্বাত্দক পাল্টা আঘাত করবে।
আমেরিকার বিমান বাহিনী যখন তাদের বিমানঘাঁটি জর্ডান, কাতার, তুরস্ক ও ইসরায়েল থেকে আক্রমণ চালাবে তখন সিরিয়া নিশ্চয়ই ওইসব দেশের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে। প্রতিউত্তরে ইসরায়েল, তুরস্ক এবং অন্যরা যদি সিরিয়ার ওপর হামলা চালায় তাহলে অবধারিতভাবে ইরান ও হিজবুল্লাহ ইসরায়েল, তুরস্ক ও জর্ডানের ওপর ব্যাপকভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে। শুরু হয়ে যাবে ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধ। রাশিয়া তাদের যুদ্ধজাহাজকে ভূমধ্যসাগরে নিয়েছে। রাশিয়া যদি কোনোভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় তাহলে সে যুদ্ধের শেষ পরিণতি কী হবে তা অনুমান করাও ভয়ঙ্কর ব্যাপার।
এ রকম যু্দ্ধ শুরু হয়ে গেলে রাসায়নিক অস্ত্র ভাণ্ডারে যদি কোনোরকম আঘাত লেগে তার বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে সিরিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জন্য তা সৃষ্টি করবে এক মহামানবিক বিপর্যয়। কত মানুষ যে প্রাণ হারাবে তার কোনো শেষ থাকবে না। এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অভিযানের শুরুতে আমেরিকা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যত সীমিত ও সংক্ষিপ্ত হওয়ার কথা বলুক না কেন, অনিবার্যভাবে তারা জড়িয়ে পড়বে আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে। তেলের মূল্য বেড়ে যাবে, সরবরাহ বিঘি্নত হবে। বিশ্বব্যাপী শুরু হবে মহা অর্থনৈতিক দুর্যোগ।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
ই-মেইল : sikder52.gmail.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।