আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডায় নেকাব বিতর্ক: চুড়ান্ত লাভবান হলো কে?

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

গত পোস্টে বলেছিলাম, কানাডাতে নেকাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় কুইবেক প্রদেশের এক ছোট পৌর নির্বাচনকে ঘিরে। সেখানে মুসলিম মহিলারা নেকাব পড়ে (বোরকা - যা পুরো মুখন্ডল ঢেকে দেয়) ভোট দিতে গেলে বিতর্কের সুত্রপাত হলে কানাডার নির্বাচন কমিশন মুখমন্ডল ঢেকে রেখে ভোট দিতে অনুমোদন দেয়। এই বিতর্ক আরো বিস্মৃতি লাভ করে - গতমাসে কুইবেক প্রদেশে তিনটি ফেডারেল আসনে শুণ্যপদে উপ-নির্বাচনে ঘিরে। পুরো কানাডায় হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে মুসলিম মহিলাদের নেকাব পড়ার পক্ষ-বিপক্ষ।

কিন্তু কানাডার মুসলিম সংগঠনগুলো সোজাসাপ্টা বলে দেয় - “নেকাব” তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ন এজেন্ডা নয় - মুখমন্ডল অনাবৃত রেখে ভোট দিতে অসুবিধা নেই। শুরু হয় - রাজনৈতিক দলগুলোর সুযোগ সন্ধানের প্রচেষ্টা এতে যোগ দেয় সরকারী দলসহ প্রায় সব দলই। সবার কথার অন্তর্নিহিত সুর ছিল - মুসলমান এবং নেকাব। এমনকি - কানাডার প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রকাশ্যে নির্বাচন কমিশনের সিন্ধানে ক্ষোভ প্রকাশ করে। কিন্তু - একজন মানুষ এই সিন্ধান্তের পক্ষে ঠায় দাড়িয়ে থাকে।

উনি হলে কানাডার প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা - মার্ক ম্যারান্ড। উনি বললেন - আমি আইন বানাই না, আইন মান্য করি। কানাডার বর্তমান নির্বাচনী আইনে নির্বাচনে ভোটাররা তাদের মুখমন্ডল প্রদর্শন বা কোন ছবিওয়ালা আইডি ছাড়াই ভোট দিতে পারে। উনি বলেছেন - এই বিষয়টি আগেও সরকারকে অবহিত করা হয়েছে - কিন্তু পার্লামেন্টএ আইন পরিবর্তন ছাড়া এই বিষয়ে তার কোন প্রকার চাপ দিয়ে কাজ হবে না। সরকার নিজেও বিপাকে পড়েছে।

কারন প্রতি নির্বাচনে গড়ে ৮০,০০০ ভোটার ডাকে ভোট দেয় - যাদের নিজেরা কোন আইডি প্রদর্শন করতে হয় না। যদি ফটো-আইডি প্রদর্শন করা বা মুখমন্ডল প্রদর্শন করা বাধ্যতামূল করা হয় তবে নির্বাচনে এই বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারবে না। এই অবস্থায় প্রধান নির্বাচনী কর্তাকে হাজির হতে হয় একটা সংসদীয় কমিটির কাছে। সেখানে মার্ক ম্যারান্ড প্রবল চাপের মুখে বলেন - সংসদীয় কমিটির কোন সিন্ধান্ত মানতে উনি বাধ্য নয়। কারন - কমিটি সংসদ না।

আর তার উপরে আছে সংবিধান। উনি সংবিধানকেই অনুসরন করতে বাধ্য - আর কোন কিছু নয়। এরপর কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার সংসদে আইন পাশ করে মুখমন্ডল প্রদর্শন করা বাধ্যতামুলক ঘোষনা দেন। এটা মিডিয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঝড় তোলে। সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতাকে নিয়ে তুমুল সমালোচনা করে।

অবশেষে - অন্টারিও প্রদেশের সাধারন নির্বাচনের আগে বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে যায়। না প্রধানমন্ত্রী - না বিরোধীদল - কেউই এই নিয়ে টু শব্দও করেনি। নেকাব বিতর্ক পরিসমাপ্তি ঘটে। এই বিতর্কের ঘোলা জলে মাছ শিকারীরা সবাই হতাশ হয়েছে। কিন্তু বিজয়ী হলো কে? কানাডার নির্বাচনী আইন? কানাডার প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা? কানাডার সংবিধান? গনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা? ধর্মনিরপেক্ষতার আলোকে প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থা? পাঠক, আপনিই বলুন।

(ছবি- মার্ক ম্যারান্ড)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।