আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডায় ৭০ দিন - ৭ম পর্ব

আমার বাবা (তারেক-উল আলম) গত বছর কেনাডা বেড়াতে এসেছিলেন। কেনাডা থেকে দেশে ফিরে একটা বই লিখেছেন – ‘কানাডায় ৭০ দিন’। আজ পড়ুন এর ৭ম পর্বঃ বেলায়েত সাহেবের নিমন্ত্রণ রাতে আমাদের ডিনারের দাওয়াত বেলায়েত সাহেবের বাসায়। শুভর অত্যন্ত ঘনিষ্টজন, বলতে গেলে লন্ডন শহরে একান্ত আপন জন। শুভ তাকে বেলায়েত ভাই বলে সম্বোধন করে বটে কিন্তু তিনি তাকে পুত্রজ্ঞান করেন।

গত হপ্তায় আমরা কানাডা আসার পরপরই বেলায়েত দম্পতি আমাদের দেখার জন্যে এসেছিলেন তাদের বড় মেয়ে নাবিলাকে সাথে নিয়ে এবং আজকের ডিনারের দাওয়াত দিয়ে গেলেন। তাদের নিমন্ত্রন না নিয়ে পারলাম না। আজ বিকাল ৭টায় বেলায়েত সাহেব তার নিজস্ব মাইক্রো নিয়ে হাজির আমাদের নিয়ে যেতে। আমাদের তার আর্চলি ক্রিসন্টে রোডের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। কে এই বেলায়েত সাহেব ? তিনি ১০-১২ বছর পূর্বে বাংলাদেশ থেকে সপরিবারে কানাডায় চলে এসেছেন ইমিগ্রান্ট হয়ে।

তিনি একজন তড়িৎ প্রকৌশলী। টিএন্ডটিতে চাকুরী করেন অনেক বছর। বর্তমানে তিনি কানাডার নাগরিক। সদা হাস্যময় একজন ব্যক্তিত্বশীল সু-জন ব্যক্তি। তাঁর দুই মেয়ে- বড় মেয়ে নাবিলা ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারী পড়ছে আর ছোট মেয়ে জ্যোতি হাই স্কুল শেষ করেছে এবার।

খুব মেধাবী ছাত্রী দুই বোন। স্ত্রী বেবীকেয়ারে চাকুরী করেন। তিনিও পদার্থ বিজ্ঞানে মাষ্টার্স। অত্যন্ত আন্তরিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মহিলা। বেলায়েত সাহেব এতো বছর পর স্নাতকোত্তর প্রকৌশলে ভর্তি হয়েছেন ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে।

বাপ-মেয়ে এক সাথে যায় ক্লাস করতে ! চমৎকার একতলা বাড়ি ! নিচে বেইজমেন্ট। ১৮-২০ বছর আগের তৈরি। সামনে ৩০ ফুট খোলা জায়গা সবুজ ঘাসে আবৃত। পেছনে ৩/ ৪ কাঠার মতো বাগান। বাগানের তিন দিকেই প্রাচীর ঘেঁসে ঝাউগাছের দেয়াল।

নানা রকম দেশি বিদেশি ফুলের গাছ। খুব শৌখিন লোক ! বাগানে অনেক দুর্লভ ফুলের গাছ লাগানো। তাঁর বাগানের এতো বৃহৎ ইরানী গোলাপ আমি ইতিপূর্বে কোথাও দেখিনি। সন্ধ্যায় ফোটে এমন এক ম্যাজিক ফুলের গাছ দেখালেন। নাম মুন ফ্লাওয়ার।

ইতালিয়ান ফুল। ঠিক সূর্যাস্তের সাথে সাথে ফোটা শুরু হয়। সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলাম ধীরে ধীরে কিভাবে ফুল ফুটছে, পাতা মেলছে এবং অবশেষে চমৎকার পরিপূর্ণ এক মুন ফ্লাওয়ার ! মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এ ম্যাজিক ফুল! দুঃখের বিষয় ফুলের আয়ূ কেবল রাতটাই, ভোরে সুর্য ওঠার সাথে সাথে গাছ থেকে ঝরে পড়বে ! লাল গালিচায় মোড়া সু-বৃহৎ ড্রইং রুম, দামি গদি মোড়ানো সোফাসেট, রুমের এককোনে বিশাল এলসিডি টিভি। রুচি সম্মত ডেকোরেশন পিস এবং সুন্দর সাজানো ড্রইংরুম। অতঃপর ডাইনিং টেবিলে ! দেশি-বিদেশি প্রচুর খাবার।

স্বামী-স্ত্রী মিলে করেছেন। বেলায়েত সাহেব নিজেই কয়েকটি আইটেম করেছেন। প্রচুর আয়োজন। পোলাও, কোর্মা, মুরগি ফ্রাই, ইলিশ মাছ আরো কতো কি ! দই, মিষ্টি ও করেছেন। এদেশে এসে পুরুষেরা স্ত্রীদের পাশাপাশি ভালো রান্না শিখে নিয়েছে প্রয়োজনের তাগিদে।

একান্ত আন্তরিকতা নিয়ে খাবার পরিবেশন করলেন বেলায়েত দম্পতি। খাওয়া শেষে গল্প গুজবে রাত ১২টা ! বেলায়েত সাহেব নিজেই গাড়ি করে আমাদের বাসায় পৌঁছে দিলেন। (ক্রমশ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।