আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডায় ৭০ দিন - ১১ তম পর্ব

আমার বাবা (তারেক-উল আলম) গত বছর কেনাডা বেড়াতে এসেছিলেন। কেনাডা থেকে দেশে ফিরে একটা বই লিখেছেন – ‘কানাডায় ৭০ দিন’। আজ পড়ুন এর ১১ তম পর্বঃ ফেনশো লেকে মাছ শিকার আজ ২৭ জুন, আমরা ফেন শো লেকে মাছ ধরতে গেলাম। ড.শাহেদ বিকাল ৫টায় আমাদের গাড়িতে উঠিয়ে নিলেন। সাথে ছিলো ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আরো দু'জন বাংলাদেশি ছাত্র।

ড.শাহেদ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক। ওয়েস্টার্ন থেকে পিএইচডি করে পোস্ট ডক করছেন। আগামী মাসেই চলে যাচ্ছেন পোস্ট ডক্টরেট শেষে বাংলাদেশে নিজ প্রতিষ্ঠানে। ছোট খাটো মানুষ কিন্তু অত্যন্ত ভদ্র, অমায়িক, নিরহংকার, বিনয়ী, বন্ধু বৎসল এবং ধার্মিক। আশ্চর্য, এতো গুন একজন মানুষের মধ্যে থাকে কিভাবে ! লন্ডন শহরের শহরতলীর শেষ র্পূব প্রান্তে এই ফেন শো লেক।

নদীর উপর বাঁধ দিয়ে এই লেকের সৃষ্টি। বাঁধে প্রকান্ড ৬টি স্লুইসগেট, একটি সামান্য খোলা। সেখান দিয়ে সামান্য পানি প্রবাহিত। সেই সামান্য প্রবাহিত জলধারার এদিকের অংশে আমাদের মাছ শিকারের আয়োজন। পূর্বেই লেকপাড়ে আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন খালেদ সাহেব এবং তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

পরিবারের সদস্য বলতে তারা স্বামী-স্ত্রী, ৭/৮ বছরের একমাত্র পুত্র এবং তার মা। স্ত্রী জিতা একজন ডাক্তার। খালেদ সাহেব ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক। লেকে আসার পথে আমরা ‘কানাডয়িান টায়ার’ থেকে বড়শি এবং মাছের খাবার নিয়ে এসেছি। এখানে লাইসেন্স ছাড়া মাছ ধরা যায়না।

কানাডয়িান টায়ার থেকে আরো দুইটি বড়শির লাইসেন্স এবং ছিপ নেয়া হয়েছিলো। আমরা আসার পূর্বেই অন্যরা ভালো জায়গা দখল নিয়ে ছিপ ফেলে বসে গেছে। কেউ স্বামী-স্ত্রী, আবার কেউ বা বান্ধবী নিয়ে। এরা শৌখিন মৎস শিকারী। স্রেফ মাছ ধরার আনন্দ নিতেই এসেছে।

কোন রকমে একটা জায়গা বের করে আমরা ছিপ ফেললাম। ড্যামের পাশেই আমাদের অবস্থান। ড্যামের গড়িয়ে পড়া পানির স্রোতের একটু পরেই আমরা ছিপ ফেলেছি। জঙ্গলের মধ্যে একটু খোলা জায়গা। কয়েকটি বড় বড় পাথরের উপর আমরা আসন নিলাম।

ড.শাহেদ বললেন, এখানে মাছ থাকার সম্ভাবনা বেশি। অনেকক্ষণ ধরে ৪টি ছিপ ফেলে আমরা তীর্থের কাকের মতো বসে রয়েছি। কোন একটি ছিপেই মাছের টান নেই। ঠোঁকরই দিচ্ছে না বড়শির আদারে (খাবারে)। লেকে মাছ আছে কিনা কে জানে ! মাছ না থাকলে বিভিন্ন স্থানে ছিপ ফেলে এতো মানুষ বসে আছে কেন ? অবাক বিম্ময়ে দেখলাম লেকের মাঝে ছিপ ফেলে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪/৫ জন।

পানি বেশ ঠান্ডা অথচ এই ঠান্ডা পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিপ ফেলে মাছ ধরার কসরত ! কিন্তু মাছ উঠাতে দেখলাম না কাউকে। লেকের দুই পাড়ে ঘনবন। বনে বড় বড় বৃক্ষ। লেকের তলে পাথর, পাড়ে পাথর, কিনারে পাথর। এই পাথুরে পাহাড়ী জায়গায় পাথরের ফাঁকে সামান্য মাটি পেয়ে গাছ গাছালি লকলক করে উঠে যাচ্ছে।

পাথরের ফাঁকে বা পাথরের নিচে যে মাটি তা অত্যন্ত উর্বর। এখানে বৃক্ষ, বনজঙ্গল কেউ নষ্ট করেনা- সয রক্ষা করে। তাই গ্রীষ্মে চারদিকে সবুজের সমাহার। যে দিকে তাকানো যায় কেবল সবুজ আর সবুজ। প্রকৃতির রূপরস গন্ধ সৌন্দর্য সব এখানে পূর্ণতা পেয়েছে।

সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমার স্বাক্ষর চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ একটি হরিণ ওপারের জঙ্গল থেকে লেকে নেমে এপারে চলে এলো। কোন ভয়ভীতি নেই ! কেউ কেউ চেয়ে দেখলো মাত্র, কোন কৌতুহল নেই। প্রচুর হরিণ রয়েছে এখানকার জঙ্গলে। লেকের পানি এখানে কোমর পর্যন্তই।

এই ঝোঁপ জঙ্গলের মধ্যে এক অখ্যাত লেকের তীরে পৃথিবীর অপর প্রান্তের ক’জন বঙ্গ সন্তানের শখের মৎস শিকার--এমন অভাবনীয় কষ্ট কল্প দৃশ্য আজ বাস্তব ! হঠাৎ আমাদের একটি ছিপ শুইয়ে গেলো। মাছ টেনে শুইয়ে ফেলেছে পাথরের উপর রাখা ছিপটি। আমরা কেউ খেয়াল করিনি কিন্তু খালেদ সাহেব ঠিকই খেয়াল রেখেছিলেন। তিনি ছিপে টান দিলেন। মাছ গেঁথেছে ! আমরা সবাই ছিপের কাছে ছুটে গেলাম।

শুরু হলো মাছে মানুষে খেলা ! আমার হাতে দিলো ছিপ--মুরুব্বি বলে কথা ! আমি কিছুক্ষণ খেললাম। কি যে সুখ, কি যে আনন্দ ! বড় ধরণের মাছ। আমার আত্ম বিশ্বাস কমে গেলো, যদি ছুটে যায় ! তাই খালেদ সাহেবকে দিলাম উঠাতে ! খেলিয়ে খেলিয়ে কাছে নিয়ে এলেন খালেদ সাহেব। শুকনো কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরে বড়শিসহ উপরে নিয়ে এলো একজন। অনেক বড় র্কাপ ! ওজন ৫/৭ কেজি হবে।

আমাদের আনন্দ দেখে কে! ভদ্রতা ভুলে বাঙালির আবেগ উচ্ছ্বাস আনন্দে বাঁধ ভেঙ্গেছে ! বিদেশি দুই জুটি বিরক্তিতে উঠে চলে গেলো। অবশ্য বিরক্তি না মাছ না পাওয়ার হতাশা বোঝা গেলো না ! কারণ, অনেকক্ষণ র্ধৈয্য ধারণ করার পরও কারো বড়শিতে কোন মাছ ধরা পড়লো না। আমাদের সুবিধেই হলো। আমরা ছিপ নিয়ে তাদের জায়গায় গিয়ে বসলাম আরামে ! তখন সন্ধ্যা হয় হয়। ড.শাহেদ বড়শিতে মাছ ধরার একজন বিশেষজ্ঞ ! তিনি বললেন, এই সময়টাতেই মাছ খায়।

তার কথাই ঠিক। হঠাৎ দৃশ্যপট পরিবর্তন ! আরো ২/৩ টি রুই আমরা ধরে ফেললাম কয়েক মিনিটের মধ্যেই ! কয়েকটি বড় মাছ খেলতে খেলতে ছুটে গেলো। আবার দুই একটি উঠাতে গিয়ে ওঠানো গেলোনা। হাত থেকে ফসকে সোজা পানিতে ! আমরা মহানন্দে মাছের ফটোসেশন শুরু করলাম ! মাছ নিয়ে সবাই ছবি তুললো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ।

ড. শাহেদ নামাজ পড়ে এলেন এবং বললেন, মাছ আজ আর খাবে না। অন্য শিকারীরাও আস্তে আস্তে ছিপগুটিয়ে চলে যাচ্ছে। লেকের মাঝখানে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে যারা মাছ ধরছিলো তারাও নেই। চলে গেছে অনেকক্ষণ। তারপরও আশায় আশায় আরো কিছুক্ষণ বসে থাকলাম।

কিন্তু আর কোন মাছ ধরা পড়লো না। ড.শাহেদের গাড়িতে আমরা বাসায় ফিরলাম। কি আশ্চর্য ! ড. শাহেদ প্রথম ধরা পড়া বড় মাছটি জোর করে আমাদের দিয়ে গেলেন ! বাকি ৩টি অন্য ৩জন। কিন্তু তিনি নিজে কিছুই নিলেন না ! (ক্রমশ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।