আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডায় ৭০ দিন - ৯ম পর্ব

আমার বাবা (তারেক-উল আলম) গত বছর কেনাডা বেড়াতে এসেছিলেন। কেনাডা থেকে দেশে ফিরে একটা বই লিখেছেন – ‘কানাডায় ৭০ দিন’। আজ পড়ুন এর ৯ম পর্বঃ রিদুন-সেজুতির ডিনার রাতে রিদুন -সেজুতির ডিনারে নিমন্ত্রণ। উপলক্ষ্য তাদের প্রথম সন্তান সামিদের জম্মদিন। আজ সামিদের বয়স এক বছর পূর্ণ হলো।

অনুষ্ঠান স্থল প্ল্যাটস লেন কমিউনিটি সেন্টার। আমাদের বাসা থেকে মিনিট দশেক হাঁটা পথ। কিন্তু রাত ন’ টায় শাহেদ গাড়ি নিয়ে হাজির আমাদের নিয়ে যেতে। শুভ হেঁটেই রওনা দিলো, আর আমরা সবাই গাড়িতে গেলাম। ইতিমধ্যে অতিথিরা সবাই পৌঁছে গেছেন।

অতিথিদের মধ্যে প্রায় সবাই ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী এবং বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে যাওয়া কিছু অভিভাবক। রিদুন ওয়েস্টার্নে পিএইচডি গবেষক আর সেজুতি মাস্টার্সের ছাত্রী। রিদুন বুয়েট থেকে পাশ করা আর সেজুতি ইংল্যান্ড থেকে। সেজুতি ভালো রবীন্দ্র সংগীত গায়। নওরিনের বাবা মা (নওরিন বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্র্যাজুয়েশন করে ওয়েস্টার্নে স্নাতকোত্তরের ছাত্রী), ইফতেখারের (পিএইচডি গবেষক) বাবা-মা, শ্বশুর, শ্বাশুড়ী, আর আমরা স্বামী-স্ত্রী- বয়স্কদের মধ্যে এ ক’জনাই।

মোটামুটি শ’খানেকের উপর মেহমান। এখানকার বাংলাদেশিরা কোন না কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একত্র হয় মাসে কয়েকবার। তাই তাদের পরস্পরের মধ্যে খুব ঘনিষ্টতা। এরা স্বদেশ ভূমি ছেড়ে এতদূর দেশে রয়েছে তা ভুলে যায় পরস্পরের ঘনিষ্ট সাহচর্যে। এরা নিজদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ- বেদনা ভাগাভাগি করে নেয়।

‘বাঙালি বিদেশে আপন, দেশে দুর্জন’--এ দেশে এসে, এদের দেখে আমার বারবার তাই মনে হলো। কমিউনিটি হলটি খুব বড় নয়, শ’ দুয়েক লোকের অনুষ্ঠানের জন্যে যথেষ্ট। একটি বড় ফ্ল্যাট বাড়ির নিচ তলায় এই কমিউনিটি হল। বাংলাদেশি কমিউনিটির অনুষ্ঠানগুলো এখানে হয়। এর আশে পাশেই অধিকাংশ বাংলাদেশির বসবাস।

ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সীমানার মধ্যেই এর অবস্থান। তাই, বাঙালিদের যে কোন অনুষ্ঠানের টার্গেট প্ল্যাটস লেনের এই কমিউনিটি সেন্টার। খাবার আনা হয়েছে টরন্টো থেকে। খাবার বরাবরের মতোই--চিকেন, বীফ, পোলাও ইত্যাদি। ভেজিটেবল করা হয়েছে চার পাঁচ আইটেম দিয়ে।

ভেজিটেবলের সাথে আবার ছোট ছোট চিংড়ি মেশানো, অনেকটা চাইনিজ স্টাইলে। আমার এ ধরণের ভেজিটেবল খুব প্রিয়। ছালাদ আছে, আর আছে বোরহানি যা এ দেশে একটি দুর্লভ বস্তু। অন্যান্য সফট ড্রিংকস তো আছেই। যথেষ্ট সু-স্বাদু হয়েছে খাবার।

সবাই বেশ তৃপ্তি নিয়েই খেলো। সবচেয়ে বেশি মজা হয়েছে পায়েস। খেজুর গুড়ের পায়েস! বাংলাদেশ থেকে নাকি এই খেঁজুর গুড় আনা হয়েছে। এটা বাসায় তৈরি করা হয়েছে। আমি ভুলে গেলাম আমার ডায়াবেটিস, বাটি ভরে খেলাম ! আমরা অভিভাবকরা সবাই একটা টেবিলে বসেছি আর বাকিরা বুফে।

মেয়েদের ভিন্নরুমে পরিবেশন করা হয়েছে। প্লেট, গ্লাস, চামচ সব ওয়ানটাইম ইয়ুজ, পরিস্কার করার হাঙ্গামা নেই। সেলফ সার্ভিস সবার জন্যে। সর্বশেষ পর্ব কেক কাটা। সামিদের জম্ম দিনের কেক।

প্রায় ১০ পাউন্ড ওজনের একটি বড় চকোলেট কেক সামিদের জম্মদিনের শুভেচ্ছা খোদাই করা। কেক কাটা হলো। ‘হ্যাপি বার্থডে’ গান হলো। হাততালি দিয়ে ছোট্ট সামিদকে জম্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো সবাই। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠান শেষ হলো।

অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরতে রাত বারটা। অবশ্য ধ্রুব', ধ্রুব'র মা, দাদি আগেই বাসায় ফিরেছে শাহেদের গাড়িতে। (ক্রমশ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।