আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডায় ৭০ দিন - ১৬ তম পর্ব

আমার বাবা (তারেক-উল আলম) গত বছর কেনাডা বেড়াতে এসেছিলেন। কেনাডা থেকে দেশে ফিরে একটা বই লিখেছেন – ‘কানাডায় ৭০ দিন’। আজ পড়ুন এর ১৬ তম পর্বঃ আমির হোসেন ও সায়মা চৌধুরী কবিতা ইন্ডিয়ান মার্কেট থেকে ফেরার পথে কাইয়ূম- ডলি আমাদের নিয়ে গেলো তাদের পুরানো বন্ধু আমির হোসেন সাহেবের বাসায়। আল- আইনে তারা বহুদিন এক সাথে ছিলো এবং চাকুরি ও করেছে একই কোম্পানীতে। আবার এক সঙ্গে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছে।

তাই তাদের অনেক দিনের ঘনিষ্ঠতা। বাংলাদেশ থেকে এতো দূরে আপন আত্মীয় বেড়াতে এসেছে। তাদের নিয়ে বন্ধু বান্ধবের বাসায় বেড়াতে না গেলে মন ভরে না আমির হোসেন সাহেবের স্ত্রী মিসেস সায়মা চৌধুরী কবিতা। নামের সাথে চেহারার এবং আচরণের যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া গেলো অর্থাৎ কবিতা কবিতার মতোই সুন্দর এবং মিষ্টি ! অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের আপন করে নিলো। অল্প সময়ের জন্যেই আমরা গিয়েছিলাম বটে কিন্তু তিনি কিছুতেই আমাদের না খাইয়ে ছাড়বেন না।

মাত্র আধা ঘন্টা সময় তিনি আমাদের থেকে চেয়ে নিলেন এবং রান্না ঘরে চলে গেলেন। গ্রাম বাংলায় অতিথি এলে আগে এমনটি হতো। আজকাল এ আন্তরিকতা আর কোথায় ! আমির হোসেন সাহেব ব্রডভিউ রোডে নিজস্ব বাড়িতে থাকেন। তিন তলা নিয়ে একটি ইউনিট, বেইজমেন্টও আছে। ঘুরে ঘুরে সব দেখালেন।

একমাত্র ছেলে পড়া শোনা শেষ করে সবে চাকুরীতে ঢুকেছে। অফিস থেকে এখনো ফেরেনি। একান্ত সদালাপি ভদ্রলোক। মিসেস সায়মা চৌধুরী কবিতা কথা রাখলেন। মাত্র আধা ঘন্টা পরেই তিনি আমাদের খাবারের টেবিলে নিয়ে গেলেন।

টেবিলে গিয়ে তো আমাদের চক্ষু চড়কগাছ ! পুরো টেবিলই খাবারের নানান আইটেম দিয়ে সাজানো। বাশমতি চালের সেদ্ধ গরম ভাত, ধূঁয়া উড়ছে। ইলিশ ভাজা, সোনামুগের ডাল, মুরগির মাংস, করলা ভাজা, সালাদও আছে। এতো অল্প সময়ে এতো কিছু কি করে করলেন ? প্রশ্নের উত্তরে একটু হাসলেন কেবল। আসলে আন্তরিকতা থাকলে সব কিছু হয়ে যায়।

নিজ হাতে প্লেটে ভাত উঠিয়ে দিলেন, মাছ মাংস উঠিয়ে দিলেন। জোর করে ইলিশের আরেক টুকরো দিলেন। আন্তরিক হাতের মমতা ভরা আপ্যায়ন ! মিসেস চৌধুরী সু- গৃহিনী তো বটেই চাকুরীও করছেন ভালো। সুন্দরী এবং সু-শিক্ষিতা। আচার আচরনে অত্যন্ত ভদ্র এবং বিনয়ী।

খোলা মেলা কথাবার্তা। অল্প সময়েই অন্যের মন জয় করে নিতে জানেন। কথায় কথায় জানা গেলো আমির হোসেন সাহেব ব্রডভিউ রোডের বাড়িখানা বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন সহসাই। রাত ১২টায় আমরা আমির হোসেন দম্পতির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ব্রেমটনের পথে রওনা হলাম। ফিলিস্তিনি মহিলা সুশান ডলির ফিলিস্তিনি বান্ধবী সুশান।

বেড়াতে এসেছে আল-আইন থেকে। সঙ্গে একমাত্র পুত্র আহমেদ। আহমেদের বয়স ১৭ শেষ হয়েছে। সামনে হাইস্কুল শেষ হবে। মাস খানেক থাকবে ডলির বাসায়।

ফি বছরই আসে, ডলির বাসায় ওঠে। সে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছে কিন্তু আল-আইনে থাকে। আল-আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিভাগে কো-অর্ডিনেটরের চাকুরী। মোটা বেতন পায়। কানাডায় এসে নিয়মানুযায়ী নাগরিকতা বজায় রাখছে।

ছেলে হাই স্কুল শেষে কানাডায় এসে পড়া শোনা করবে। কানাডার গ্র্যাজুয়েটদের আরবদেশে যথেষ্ট মূল্যায়ন এবং মোটা বেতনের চাকুরী। তাই ছেলে আহমেদ কানাডা থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে আবার ফিরে যাবে আরবদেশে। সুশান একা, নিঃসঙ্গ ! কিন্তু বিধবা নয়। স্বামী পরিত্যাক্তাও নয়।

সে নিজেই স্বামীকে ত্যাগ করেছে। সে অন্য এক কাহিনী ! সুশানের বয়স কত ? তার মতে সাঁয়ত্রিশ কিন্তু শরীর অনেক ভারী হয়ে গেছে। ওজন অনেক বেড়ে গেছে। এতো কাছ থেকে ঘনিষ্ঠভাবে কোন আরব মহিলাকে আমার এই প্রথম দেখা। সুশানের এক গোপন কথা-সে আবার সংসার করতে চায়, নতুন করে ঘর বাঁধতে চায়।

জীবনটাকে আবার নতুন করে সাজাতে চায়। হতাশা আর না পাওয়ার বঞ্চনা ভুলে যেতে চায়। জীবনের প্রথমাংশে যে ভুল সে করেছে তা ভুলে গিয়ে আবার নতুনভাবে শুরু করতে চায়। আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সুশান ! কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেলো যে সুশান! সুশানের জন্ম আলজিরিয়ায় এক ফিলিস্তিনি উদ্ধাস্তু শিবিরে। বাবা-মা এসেছেন পশ্চিম তীর (গাজা) থেকে।

বেড়ে ওঠা, শৈশব কৈশর যৌবন সব কেটেছে ঐ শিবিরে। আলজিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন করেছে। ঐ সময় আলজিয়ার্সেই তার সাথে পরিচয় এক লিবিয়ান ভদ্রলোকের। পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা এবং অবশেষে পরিনয়ে ! অতি দ্রুত ঘটে যায় সব কিছু। কি এক মহাবিষ্ট আবেগে সে অন্ধ হয়ে যায়।

ভালোবেসে ফেলে ভদ্রলোককে। ভদ্র লোকের দেশের বা পরিবারের খোঁজ নেয়া হয়নি তার। আসলে ভালোবাসার বিশ্বাস যেখানে হৃদয় ছুঁয়েছে সেখানে অন্য কিছু ভাবার সময় কোথায় ! ঘটা করে সে বিয়ে করে ফেলে। আসলে এটাই তার জীবনের বড় দুর্ঘটনা। সে লিবিয়ান ভদ্র লোককে চিনতে ভুল করেছিলো।

তার কপট ভালোবাসার অভিনয় সে ধরতে পারেনি। বিয়ের পরপরই ভদ্র লোকের ব্যবহার ও আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে। ভদ্র লোক কারণে অকারণে ঘন ঘন দেশে যাওয়া শুরু করেছে। অবশেষে সন্দেহ দানা বাঁধে। লোক পাঠিয়ে দেশের বাড়িতে খোঁজ নেয়।

জানতে পারে ভদ্রলোক বিবাহিত এবং চার সন্তানের পিতা ! সর্বনাশ যা হবার তা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। তাদের বিয়ের বছর ঘুরে এসেছে এবং তার কোল জুড়ে এসেছে নিষ্পাপ সুন্দর এক শিশু--আহমেদ। সুশান কিছুতেই স্বামীকে আর মেনে নিতে পারলো না। অনিবার্যভাবে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো। আহমেদকে নিয়ে সুশান বাবা-মা, ভাইবোনের সাথে চলে এলো মধ্যপ্রাচ্যে।

নতুন করে জীবন সংগ্রাম শুরু হলো সুশানের। চাকুরী পেলো আল-আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন জীবন শুরু হলো সুশানের। অনেক দিন কেটে গেছে তাদের আল-আইনে। বাবা-মা বৃদ্ধ হয়েছেন।

বাবার বয়স ৭৭ বছর--এখনো কাজ করেন। মা আছেন। একমাত্র ভাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ছোট বোন আবুধাবিতে থাকে স্বামী নিয়ে,দুই সন্তান নিয়ে। তারা নিজ নিজ সংসারে সুখেই আছে।

বাবা-মা সুশানের সাথে এখনো আল-আইনেই থাকেন। ডলিদের আল-আইনে থাকাকালীন সময় তার সাথে পরিচয়। এতোদিন সমস্ত পুরুষ জাতির প্রতি ছিলো তার অবিশ্বাস, ঘৃণা এবং বিতৃষ্ণা। আহমেদ বড় হচ্ছে। সুশান বুঝতে পারছে কিছুদিনের মধ্যেই আহমেদ নিজের জীবন বেছে নেবে।

বাবা-মা বৃদ্ধ হয়েছে, বোন নিজের সংসারে। ভাইর সংসার আছে। সে একা ! ভবিষ্যতে সে সম্পূর্ণ একা হয়ে যাবে। তার ভবিষ্যত কি! কাকে নিয়ে সে স্বপ্ন দেখবে, কাকে নিয়ে বাঁচবে ! সে তো এখনো ফুরিয়ে যায়নি ! তাই এতোদিন পর সঙ্গী যোগাড়ের স্বপ্ন। নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন।

ডলির বাড়ির বাগানে বসে এক অন্তরঙ্গ আলাপে সুশান তার জীবন কাহিনী শোনাচ্ছিলো। সুশান আর আমি-- সামনে টেবিলে ‘সিসা’, আরবী হুক্কা। সুশান সাথে নিয়ে এসেছে। এতে সে অভ্যস্ত। আমি দুই এক টান দিয়ে সুশানকে খুশি করলাম ! সুশানের জীবন কাহিনী শুনতে শুনতে মনটা কেমন বেদনাতুর হয়ে গেলো।

কোন কথা বা কোন সহানুভূতির ভাষা মুখ দিয়ে বেরুলো না। দু’ জনে নীরবে বসে থাকলাম অনেকক্ষন। আড় চোখে তাকিয়ে দেখি রুমাল বের করে সুশান চোখের কোনায় লুকোনো জল মুছে নিচ্ছে ! ড.কবির হোসেন তালুকদার এবং ফ্যামিলি ড. কবির হোসেন তালুকদার ডলিদের পারিবারিক বন্ধু। প্রথম জীবনে কাইয়ূমের সাথে চাকুরী করতেন। এখন কানাডার নাগরিক।

ব্রেমটন শহরে এক বিঘার উপর জায়গায় এক ইউনিটের দোতলা বাড়ি, নিচে বেইজমেন্ট ! এক তলায় ড্রয়িং- ডাইনিং, পাক ঘর, গেস্টরুম। ফ্যামিলি ড্রয়িংও রয়েছে আলাদা। গেস্ট রুমসহ মোট ছয়টি বেডরুম। সব কিং সাইজ বেড। প্রতি বেডরুমের সাথে নয়ন কাড়া টাইলস ফিটিংসসহ ওয়াসরুম।

বেইজমেন্টে বিরাট হলরুম। ৫০-৬০ জন লোকের এক সঙ্গে বসে মিটিং বা কোন ছোট খাটো অনুষ্ঠান করার মতো। প্রতিটি রুম অত্যন্ত রুচি সম্মতভাবে সাজানো। বাড়ির সম্মুখে ২৫-৩০ ফুট লন- সবুজ ঘাসে ঢাকা। অন্যদিকে ভেতরের কম্পাউন্ডে চমৎকার ফুলের বাগান, শাক-সবজির বাগান।

দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফুলের গাছ লাগানো। অনেক দু®প্রাপ্য ফুলের গাছ। নানা রকমের দেশি সবজি-- করল্লা, বেগুন থেকে শুরু করে পুঁইশাক, ঢেড়শ প্রভৃতি বাংলাদেশি সবজি। ড. কবির হোসেন নিজেই বাগানের যতœ আত্তি করেন, নিজেই পরিচর্যা করেন। বলে রাখা ভালো তিনি নিজেই একজন কৃষিবিদ।

বাগানের এক পাশে একটি ছোট খাটো ব্যায়ামাগার। সেখানে শরীর চর্চার যাবতীয় সরঞ্জাম। সাথে রয়েছে ছোট একটি রুম যেখানে রয়েছে সব কৃষি উপকরণ, ঘাস কাটার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। গার্ডেনের গোল চত্বর--গার্ডেনচেয়ার টেবিলে সাজানো যার উপর বিশাল ছাতার আবরণ। বাগানে বসে চা- কফি খেতে খেতে বাগানের সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করুণ।

এই হলো কবির সাহেবের স্বর্গনিবাস। পাঁচ লাখ ডলার ব্যয়ে ব্রেমটন শহরে এই বাড়িটি তিনি খরিদ করেছেন স¤প্রতি। আমার শ্যালিকা ডলি ড. কবির হোসেনের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন এইভাবে--‘দুলাভাই, ইনি কবির হোসেন তালুকদার, আমার দুলাভাই’। ড. কবির হোসেনকে ডলি দুলাভাই সম্বোধন করে আর তার স্ত্রী ডলির আপা। ডলির আপা তখনো দো’তলা ওঠার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কারো সাথে ফোনে ইংরেজীতে বাক্যালাপ করে চলেছেন।

ওপারের মানুষটি বাঙালি, আলাপে বোঝা যাচ্ছে। কারণ দুই একটি বাংলা শব্দ মাঝে মাঝে উচ্চারণ করছেন। প্রায় ৮-১০ মিনিট আমাদের দিকে এক বিশেষ কায়দায় হাত তুলে এক নাগাড়ে আলাপ করে চললেন। ইংরেজীতে আলাপ চালিয়ে গেলেন এই জন্যে যে হয়তো বাংলা বললে আমাদের কাছে শোভন হতো না ! সে যাই হোক, কবির সাহেব আমাদের তার ড্রইং রুমে নিয়ে বসালেন এবং আলাপ শুরু করলেন। ছোট খাটো মাঝারি গড়নের ব্যক্তিত্বের অত্যন্ত বুদ্ধিমান এক বাঙালি ড.কবির হোসেন তালুকদার।

পূর্বাচল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অতীস দীপাংকর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। বাংলাদেশে এক ডেভেলপার কোম্পানীর কর্নধার। ঢাকার গাজীপুরে কয়েক বিঘা জমি নিয়ে বাগান বাড়ি। উত্তরায় ছয়তলা ফ্ল্যাট বাড়ি। সবই তাঁর।

মূলতঃ একজন কৃষিবিদ। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরেটসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা রকম ডিগ্রি-ডিপ্লোমা রয়েছে তাঁর। বাংলাদেশে এক বিশিষ্ট অবস্থানে তিনি। টাঙ্গাইলের গ্রামাঞ্চলে তার বাড়ি। নিজের একক প্রচেষ্টায় আর মেধায় আজ এ অবস্থানে।

অবশ্য ভাগ্য দেবতাও সব সময় তাঁর সাথে ! কবির দম্পতির দুই ছেলে। দু’ জনাই পড়াশোনা শেষে এদেশে চাকুরীতে নিয়োজিত। দুই ছেলেকেই বিয়ে করিয়েছেন বাংলাদেশে। মিসেস কবির পুত্র বধূদের নিয়ে এদেশেই থাকেন। তিনি নিজে চাকুরী করেন।

ড. কবির হোসেন ২/৪ মাস পর পর আসেন বাংলাদেশ থেকে এবং ২/১ মাস থাকেন এখানে। পুত্র বধূদের সাথে আমাদের দেখা হয়নি। তারা স্বামীদের সাথে নিমন্ত্রনে গেছেন। মিসেস তালুকদার বধূদের বেডরুম, বাথরুম ইত্যাদি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে ভুল করলেন না ! আবার আসবো, দেখা হবে বলে এ যাত্রায় বিদায় নিলাম। (ক্রমশ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।