আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধী, মইত্যা রাজাকার নিজামীর পলায়ন

একজন আমি, একজন হারিয়ে যাওয়া এবং একজন দূর প্রবাসী

এখন ১৯৭১ নয়। কালের প্রবাহে পাবনার ইছামতি নদী দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ঘটে গেছে প্রতিবিপ্লব। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হয়েছে। জেনারেল জিয়ার বদৌলতে নিজামীরা প্রাণে বেঁচে গেছে।

পেয়েছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ। নিজ স্বার্থে ধর্মকে স্বার্থক ব্যবহার করেছে, করছে নিজামী। ইসলামে নারী নেতৃত্ব বৈধ না হলেও নিজামীরা ধর্মব্যবসায়ী হওয়ায় ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার জন্য এখন মানছেন। নিজামীর শিষ্য আলী আহসান মুজাহিদের ভাষায় খালেদা জিয়া যেন তাদের ‘নয়নমণি’। জেনারেল জিয়ার সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যবহার করে হয়েছিল ক্ষমতার অংশীদার।

সে আর ‘মইত্যা রাজাকার’ নয়, সে হয়েছিল তথাকথিত মাননীয় সাবেক শিল্পমন্ত্রী এবং মহাক্ষমতাধর ব্যক্তি। বাংলাদেশের পুলিশ তাকে দিন রাত পাহারা দিত। শুধু পুলিশ কেন প্রয়োজন হলে চিতা, কোবরা, বিডিআর এমন কি সেনাবাহিনীও তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতো। মইত্যা রাজাকার নিজামী ক্ষমতার ভাগ পেয়ে ভাবল ৩৫ বছর কম তো সময় নয়। আমার হাতে এখন আর বাঙ্গালির রক্তের দাগ নেই।

আমিতো জাতীয় স্মৃতিসৌধেও গেছি। কই কেউ তো আমাকে কিছু বলেনি। সবাই আমার ’৭১-এর ‘কুকীর্তি’ ভুলে গেছে। আমি যাব বিশালিখায় (?) যেখানে একদিন আমি পাকিস্তান রক্ষার নামে বধ্যভূমি সৃষ্টি করেছিলাম। সেখানেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করে বিশালিখার মানুষকে দেখিয়ে দেব আমি কেমন শক্তিধর।

কিন্তু অবস্থা বেগতিক। নিজামীর আগমন বার্তা পেয়েই স্বজন হারানো মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। গর্জে উঠে গ্রামবাসী। ‘তারা মইত্যা রাজাকার নিজামীকে গ্রামে ঢুকতে না দেয়ার ব্যাপারে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আগমনের আগের রাতেই ঘাতক নিজামীর নামফলক ভিত্তিপ্রস্তর স্তম্ভটি গুড়িয়ে দেয়।

গ্রামের সকল রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ বাড়ি বাড়ি কয়েকশ’ কালো পতাকা উড়িয়ে দেয়। গ্রামে প্রবেশের মুখে গাছের গুড়ি ফেলে বেরিকেড সৃষ্টি করে। পরের দিন শনিবার দুপুরে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের নির্দিষ্ট সময়ের আগে গ্রামবাসী বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে অনুষ্ঠান স্থানসহ গোটা গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। এ সময়ে গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিজামী খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামলাতে নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে সটকে পড়ে’। একাত্তরে এ গ্রামের মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন মাওলানা মতিউর রহমানের প্রত্যক্ষ মদদে হয়েছে বলে গ্রামবাসী মনে করে।

তারা বিশ্বাস করেন, নিজামী এ গ্রামে ঢুকলে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। তাই শহীদদের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারাসহ গ্রামের সর্বস্তরের লোকজন নিজামীকে গ্রামে ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিজামীর কথায় টিএনও ডিসি পুলিশ অফিসার উঠ-বস করত। কিন্তু সেদিন রাজাকার নিজামীকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি। একটি পাড়াগাঁয়ের স্বজন হারানো সাহসী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় কথিত ‘সম্মানিত’ শিল্পমন্ত্রী।

২০০৬ সালে নিজামীর লেজ গুটিয়ে পলায়নের দৃশ্য আবার প্রমাণ করে ভোল পাল্টালেও আসলেই সে ‘মইত্যা রাজাকার’। ছোট গ্রাম বিশালিখার বীর জনতা সারা বাংলাদেশের মানুষকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে রুখতে হয় স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী নিজামীদের। সাবাস বিশালিখার গ্রামবাসী। (সংগৃহীত)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.