যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!
এর আগের পোষ্টে বলেছিলাম শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে একটি আলাদা পোষ্ট দিবো। কথা রক্ষা করছি।
বর্তমানে শিক্ষক রাজনীতি একটি গরম ইস্যু । বিশেষ করে সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলনের পর এটি আবার নতুন করে আলোচনার টেবিলে চলে এসেছে।
বর্তমানে প্রচলিত ধারার শিক্ষক রাজনীতিকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি দুষ্টক্ষত হিসাবে অনেকে মনে করেন।
আবার অনেকে এটিকে একেবারেই মানতে চান না। তবে সাধারন জনগনের মনে শিক্ষক রাজনীতির বর্তমান রূপ নিয়ে অ-সন্তোষ আছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ জাতির সূর্য সন্তান, জাতির বিবেক। তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে, তারা এর চর্চা করবেন সেটাই স্বাভাবিক। দেশ ও জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তারা তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে সঠিক পথের সন্ধান দেবেন সেটাই কিন্তু সবাই আশা করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর যথেষ্ট নজির আছে যে শিক্ষকগণ মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো তারা কি রাজনীতি করছেন? তারা কি তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব ভুলে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন?
বলতে দ্বিধা নেই শিক্ষক ও ছাত্র স্বার্থ বিবর্জিত তথা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সাথে সম্পর্কহীন অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ শিক্ষক রাজনীতির মূল সুরকেই নষ্ট করেছে। শিক্ষক রাজনীতি এখন জাতীয় রাজনীতির দেউলিয়াপনা থেকে আমাদের দিক নির্দেশনা দেবার পরবর্তে নিজেরাই সেই গড্ডালিকাপ্রবাহে গা ভাসাচ্ছেন।
এর ফলে একাডেমিক কাজে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, শিক্ষা ও গবেষণায় সময় দেবার পরিবর্তে রাজনীতি নিয়েই মেতে থাকছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক।
শিক্ষক রাজনীতির টানাপোড়েনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীলতা এখন একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা তাদের রাজনীতির স্বার্থে ছাত্রদেরও ব্যবহার করছেন। ছাত্র রাজনীতি কেন্দ্রিক অনেক বড় বড় অঘটনের পিছনে কতিপয় শিক্ষকের ব্যক্তি স্বার্থ ভুমিকা রেখেছে এবং এখনো রাখছে।
এ ছাড়াও শিক্ষক রাজনীতির কারণে বেড়েছে শিক্ষাঙ্গনগুলিতে দলীয়করণের প্রবণতা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের সংখ্যা যার ফলে দিনে দিনে শিক্ষকদের শ্রেণীগত চরিত্রে পরিবর্তন এসেছে। এখন আর পূর্বের মত শুধুমাত্র শিক্ষাদানে আত্মনিবেদিত এক সমৃদ্ধ শিক্ষকমন্ডলী পাওয়া যাবেনা এর বাইরেও স্বার্থান্বেষী ও দূর্ণীতিপরায়ন শিক্ষকদের একটি বড় গোষ্ঠীর আত্বপ্রকাশ ঘটেছে।
এই গোষ্ঠী দলীয় রাজনীতি করেন তাদের মতাদর্শের রাজনৈতিক সরকারের সময় বিভিন্ন কর্পোরেশনের উচু পদে আসীন হবার জন্য এবং সেই সুবাদে অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া।
তবে অস্বীকার করা যাবেনা, শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অ-স্বচ্ছলতাও তাদের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার একটি কারন। একটু ভিন্নভাবে বললে স্বার্থান্বেষী মহল শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অ-স্বচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষক রাজনীতিকে কলুষিত করছে।
এটি বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, উন্নত বিশ্বের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এই ধারার শিক্ষক রাজনীতির উপস্থিতি নেই। শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যস্ত শিক্ষকমন্ডলী এই ধরণের রাজনীতির কথা কল্পনাও করতে পারেন না।
এখন এ থেকে উত্তরনের উপায় কি? শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা? সে তো মাথাব্যাথা দুর করতে মাথা কেটে ফেলা হল।
মুক্তবুদ্ধির চর্চা যদি সেটা সত্যিকারের চর্চা হয়, তবে তার প্রয়োজন আছে।
এ ক্ষেত্রে আমার সু-নির্দিষ্ট দুইটি প্রস্তাব আছে-
১। সিনেট, সিন্ডিকেট প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় নীতি নির্ধারণী কমিটি গঠনে গঠনে নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মত একাডেমিক (শিক্ষা ও গবেষণা) পারফর্মেন্স এর মাধ্যমে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষককে এসব কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
একই ভাবে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগেও নির্বাচন প্রথা বাতিল করতে হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গটিত একটি জাতীয় কমিটি বিভিন্ন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ করবেন।
২। শিক্ষকদের সম্মানজনক জীবন যাপনের জন্য পর্যাপ্ত বেতন ভাতা দিতে হবে। অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল একচন শিক্ষক শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিবেন এবং তাদেরকে রাজনীতির ঘুটি হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবেনা।
এই দুটি কাজ করা গেলে শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মত চরমপন্থা অবলম্বন করতে হবেনা।
শিক্ষক রাজনীতি তখন সুষ্ঠু পথে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে।
আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।