৯০এর গন অভ্যুথানে স্বৈরাচরের পতনের পর থেকে অনুষ্ঠিত (হতে যাওয়া ৫ই জানুয়ারী,২০১৪ইং সালের চলমান নির্বাচনের আগের) নির্বাচন গুলিতে, জনগনের মতামতের ভিত্তিতে সরকার গঠন হতে পারলেও , উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম নেতৃত্ব নির্বাচন করতে ছিল সম্পূর্নরুপে ব্যর্থ । আর এই সকল সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে অক্ষম রাজনীতিবিদেরা, বর্তমানে দেশটাকে ধ্বংসের একেবারে শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে । দূর্নীতি ও প্রতিহিংসা পরায়নতাই বর্তমানের রাজনীতিবিদদের প্রধান যোগ্যতা হয়ে দাড়িয়েছে । এর প্রধান কারন হলো:- বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তাতে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্টের উল্লেখ করা নাই । ফলে, যে কোন লোকই যেমন-সৎ,অসৎ, চোর, ডাকাত, গুন্ডা, বদমাশ, খুনী,সন্ত্রাসী,দূর্নীতিবাজ,প্রতারক ইত্যাদি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখে ।
আবার অন্যদিকে দেখা যায় যে, আমাদের প্রধান দুইটি রাজনৈতিকদল, যে কোন চরিত্রের লোককেই প্রার্থী করুক না কেন, আমরা জনগন এই দুই দলের প্রার্থীদের মধ্য থেকে যে কোন একদলের প্রার্থীকেই নির্বাচনে বিজয়ী করে থাকি । ফলে, আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিকদলের সামনে যেমন ভালো লোককে প্রার্থী করার সুযোগ থাকে, তেমনি সুযোগ থাকে খারাপ লোককে প্রার্থী করারও । এই ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব, ভালো লোকের চেয়ে, তুলনামূলক খারাপ লোককেই প্রার্থী করতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে বা পছন্দ করে । এর কারন হলো -আমাদের প্রধান দুইটি রাজনৈতিকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সততা,ন্যায়পরায়নতা,দেশপ্রেম আর দূরদর্শীতার অনেক ঘাটতি রয়েছে । ফলে, তারা যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তখন তাদের উপরোক্ত গুনাবলীর ঘাটতি জনিত কারনে, দেশের জনগনের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় ।
জনগনের প্রতি দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতাবোধ থেকে তাদের মনে পরবর্তি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার শংকা তৈরী হয় । নির্বাচনে হেরে যাওয়ার এই শংকা থেকে আবার সরকার থাকাকালীন সময়ের নানা অনিয়ম-অবিচার ও দূর্নীতির কারনে, মামলাজনিত হয়রানীতে পড়ার ভয়ও তৈরী হয় তাদের মাঝে । তখন তারা জনগনের ভোট ব্যতীত বিকল্প পথে নির্বাচিত হওয়ার রাস্তা খোজে । আর এই বিকল্প রাস্তা তৈরী করতে গিয়ে, তারা প্রশাসনের সর্ব ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের এমন সব লোকদেরকে পদায়িত করে, যারা আসলে ঐ সকল পদের জন্য উপযুক্ত নহে । ফলে দীর্ঘদিনের এই সকল ধারাবাহিক অনিয়মের কারনে, সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশসমূহ,যেমন- সিভিল প্রশাসন,বিচার বিভাগ ক্রমশ মেধাশূন্য ও চাটুকারে পরিপূর্ন হয়ে যায় ।
তখন যেই দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন ও অসম্ভব হয়ে পড়ে- ঠিক যেমন, একটি গাড়ির সব নাট-বল্টু খুলে নিলে যেরুপ গাড়িটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় । দেশের বর্তমান অবস্থা সেই ধরনের অচল সরকারের একটি বড় উদাহরন । বর্তমান সরকারীদল ও বিরোধীদলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষে, দেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন ব্যতীত, বর্তমান অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধারের কোনই সম্ভাবনা নেই । বরং রাজনীতিতে তাদের উপস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হলে, দেশের বর্তমান অরাজক পরিস্থিতি আরো জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়বে ।
তাই আমি মনে করি যে, বর্তমানের প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক কর্মকান্ড আগামী দশ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে, এক বিশেষ ধরনের সরকার গঠন করে, দেশের রাজনীতিতে একটি সুস্থ ও সঠিক ধারার রাজনীতি চালু করার ব্যবস্থা গ্রহন অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে ।
এই ধরনের সরকার ব্যবস্থায়, সরকার কাঠামোর প্রতিটি স্তরে নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট,যেমন-সৎ ,ন্যায়পরায়ন,নি:স্বার্থবান ও খাঁটি দেশপ্রেমিক ইত্যাদি অনুযায়ী উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সংবিধানে সংযোজন করতে হবে এবং বাছাইকৃত প্রার্থীদের মধ্য থেকে গন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন এর বিধান করতে হবে । আবার নির্বাচিতদেরকে ফি বছরান্তে সরাসরি গনভোটের মাধ্যমে আস্থা অর্জন প্রক্রিয়া চালু করতে হবে, যাতে করে নির্বাচিতদের মধ্যে যারা দূর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে, তাদেরকে মেয়াদ পূরনের পূর্বেই তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় । অর্থ্যাৎ এই ধরনের সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচিতদের উপর জনগনের সরাসরি নিয়ন্ত্রন থাকবে, ঠিক যেমন করে আকাশে উড়ন্ত ঘুরিকে নাটাই ও সূতার মাধ্যমে একটি ছোট বালকও নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে । তবেই কেবল, বর্তমান ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে আমাদের স্থায়ীভাবে উত্তোরন সম্ভব হবে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।