আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিবাসীদের দেশ কানাডা - পর্ব ২.২ (অভিবাসনের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত)

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

কেন আপনি কানাডায় অভিবাসী হিসাবে আসবেন না : কানাডায় মাইগ্রেশনের আগে নীচের বিষয়গুলো একটু ভেবে দেখতে পারেন - যাতে কানাডার নেতিবাচক দিক এবং তার ব্যাখ্যা দেওয়া হলো: ১) সমন্বয়হীন ইমিগ্রেশন পদ্ধতি: কানাডার ইমিগ্রেশন হলো পয়েন্ট ভিত্তিক - যা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকুরীর অভিজ্ঞতা, বয়স এর উপর ভিত্তি করে গননা করা হয়। কিন্তু যখন আপনি কোন প্রফেশন্যাল কোটায় কানাডায় মাইগ্রেট করবেন - তখন আপনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার প্রফেশনের কাজ পাবেন না। তখন আপনাকে হয়তো পিজ্জা ডেলিভারী, রেস্টুরেন্ট বা ফ্যাক্টরীতে কাজ করতে হবে। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার ধারনা থাকতে হবে। ইমিগ্রেশনের বিষয়টা দেখাশুনা করে ফেডারেল সরকার।

তারা ওভাল অল মার্কেট পরিসংখ্যান নিয়ে প্রফেশনাল কেটাগরী অন এন্ড অফ করে। আর প্রফেশনাল অর্গেনাইজেশন গুলো পরিচালিত হয় প্রদেশ ভিত্তিক। যেমন ওন্টারিওর প্রফেশনলালস রা হয়তো কুইবেকে কাজ করতে হলে নতুন ভাবে রেস্টিষ্ট্রেশন করতে হবে - সেই ক্ষেত্র হয়তো তাদের নতুন কোন বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হতে পারে। একটা উদাহরন দেওয়া যাক, ওন্টারিও প্লাম্বার (কল মিস্ত্রী) কুইবেকে এতোদিন কাজ করতে পারতো না - এতে প্লাম্বাররা যুগ যুগ ধরে ক্রশ প্রভিন্স একটা ট্রিটি করে ভিন্ন প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করাতো। গত মাসে দুই প্রিমিয়ার এক চুক্তি সই করে - এখন দুই প্রভিন্সেই এক লাইসেন্সে কাজ করা যায়।

সুতরাং যদি কেহ ধরে নেন যে, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কোন পেশাকে অনুমোদন দিলেই সেটা কাজের জন্যে যথেষ্ঠ - সেটা ভুল ধারনা। ইমিগ্রেশনের মূল্যায়নের সাথে প্রফেশনাল লাইসেন্সের কোন সম্পর্ক নাই। ২) উচ্চ জীবন যাত্রার ব্যয়- এখানে জীবন যাত্রার ব্যয় অতি উচু। বিশেষ করে বাড়ী ভাড়া অত্যান্ত বেশী। টরন্টোতে মাত্র এক বেডরুমের একটা এপার্টমেন্টের জন্যে মাসে ৮৫০ থেকে ১০০০ ডলার গুনতে হবে।

এটা জি-৮ দেশের তুলনায় একটু বেশী। এ ছাড়াও ইউটিরিটি যেমন - টেলিফোন, ক্যাবল, সেল ফোন বাবদ অনেক অর্থ গুনতে হয়। যাতায়াত ভাড়াও তুলনামূলক ভাবে বেশী। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসা একটা ছোট পরিবার বা ব্যাচেলারদের জন্যে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে বাড়ীর বেসমেন্টগুলো বেশ ভাল কাজ করে। সেখানে ক্ষেত্র বিশেষ ভাড়া ৪০০ থেকে ৬০০ ডলার দিতে হয়।

পরবর্তীতে আর্থিক অবস্থা ভাল হলে নিজেরাই একটা বাড়ী কিনে ফেলা যেতে পারে। পরিবহন ক্ষেত্রে টরন্টো ট্রানজিট একটা ভাল মাধ্যম্। ট্রেন, বাস এবং ট্রামের সমন্বয়ে এই পরিবহন ব্যবস্থা। এক টিকিটে একমুখী ২ ঘন্টা ভ্রমনের জন্যে ভাড়া ২.৭৫ ডলার। মাসিক এবং সাপ্তাহিক টিকিটে খরচ কিছু কম।

ইদানিং মাসিক বা সাপ্তাহিক পাশগুলোকে হস্তান্তর যোগ্য করার ফলে - যে কেহ একই পাশ ব্যবহার করতে পারে। নিজস্ব পাড়ী কেনা সহজ - কিন্তু বীমা খরচ অনেক বেশী। একজন নতুন ডাইভারের জন্যে ২৫০ থেকে ২৮০ ডলার প্রতিমাসে গুনতে হতে পারে। সেই তুলনায় ১০০ ডলারের একটা পাশ অনেক বেশী সাশ্রয়ী। ৩) স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ত্রুটি: কানাডার বড় শহরগুলোতে এখন পারিবারিক ডাক্তারে স্বল্পতা চলছে।

কারন হিসাবে বলা হচ্ছে - উচ্চ আয়ের সুবিধার জন্যে কানাডার ডাক্তাররা আমেরিকায় চলে যাচ্ছে। কিন্তু একটা বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা কানাডাকে জি ৮ এর মধ্যে ব্যতিক্রমী দেশ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। ৪) উচ্চ হারে কর প্রদান: এখানে সর্বনিম্ন ৩৪% আয়কর দেওয়া থেকে শুরু হয় ট্যাক্স প্রদানের পালা। তারপর আছে ৭% জিএসটি (গুডস সার্ভিস ট্যাক্স) আর ৭% পি্এসটি (প্রভিন্সিয়াল সার্ভিস ট্যাক্স)। এটা নতুন ইমিগ্রান্টদের জন্যে প্রাথমিক ভাবে একটা বড় শক হিসাবে দেখা দিতে পারে।

যেমন ধরুন - আপনার পকেটে ১.০০ ডলারের চেঞ্জ আছে আর কফির দাম দেখলেন ৯৮ সেন্ট। ভাল মনে করে কফির অর্ডার দিয়ে যখন পে করতে যাবেন - তখন আপনার কাছে চাওয়া হবে - ১.১৪ সেন্ট। সুতরাং যে কোন জিনিসের গায়ে লেখা দামের সাথে ১৪% যোগ করে বাজেট করাটা শিখতে একটু সময় লাগবে। তারপর আছে বাড়ীর ট্যান্স, গাড়ীর ট্যাক্স ইত্যাদি ইত্যাদি। ৫) অর্থলোভী সরকার: সমগ্র বিশ্বের কানাডিয়ান এম্বেসী গুলো সাধারন মানুষের মধ্যে কানাডা সম্পর্কে একটা স্বপ্ন তৈরী করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এর কারন কি, বিদেশী অর্থ? একজন অভিবাসী যখন ক্যানাডায় আসে - তাকে কমপক্ষে ১০,০০০ ডলার আনতে হয়্। যদি ২ মিলিয়ন মানুষ আসে তবে - সরকারের ২ বিলিয়ন ডলার আয় হয়। এই অভিযোগের ভিত্তি খুবই দূর্বল - কারন, ইমিগ্রেশন হয় বিভিন্ন ভাবে - রিফিউজী, স্টুডেন্ট, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্যাটাগরী আর বিজনেস ক্লাশ। এছাড়া আছে স্পসরশীপের আওতায় স্বামী/ম্ত্রী, বাবা/মা বা স্পাউজ আসার একটা বিরাট অপশন আছে। সুতরাং সরকারের ২ বিলিয়ন ডলারের আয়ের চেয়ে রিফিউজীদের আইনী সহায়তা, তাদের আবাসন এবং মাসিক ভাতা দিতে বছরে এর চেয়ে অনেক বেশী খরচ হয়।

এই বিষয়ে ২০০৫ সালের হিসাবে দেখা যেতে পারে। সেই বছর ২.২৬ লক্ষ অভিবাসী আসে। যার মধ্যে স্কীল ওয়ার্কাস গ্রুপে এসেছে ১.১৩ লক্ষ। প্রতিটা পরিবারে গড়ে ৪ জন সদস্য হিসাবে এরা এনেছে ২৮ মিলিয়ন ডলার। এই আইন করা হয়েছে প্রাদেশিক সরকারের উপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে - যাতে কমপক্ষে ৩ মাস অভিবাসীরা সোসাল এসিসটেন্সে চলে যেতে না পারে।

৬) কানাডা একটা সংস্কৃতিহীন দেশ: কানাডার নিজস্ব কোন একক সংস্কৃতি নেই। এদের টিভিগুলো আমেরিকান টিভি নির্ভর, মুভি মানেই হলিউড আর নিজস্ব কোন সংগীত নেই। ফলাফল - কানাডার সকল নাগরিকের দুইটি পরিচয় থাকে। যেমন বাংলাদেশী কানাডিয়ান বা সিরিয়ান কানাডিয়ান। এটা অনেকের কাছে ভাল লাগলেও - অনেকে পছন্দ নাও করতে পারে।

৭) বাজে আবহাওয়া: কানাডার সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এর আবাহাওয়া। বছরের ৭ মাসই এখানে শীত থাকে। বিশেষ করে অক্টোবরে শুরু হওয়া শীত - ডিসেম্বরে তীব্র আকার নেয়। কোন কোন দিন তাপমাত্রা - ৪০ ডি: সে: এর নীচে নেমে যায়। এই বাজে অবস্থা চলে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।

তারপর শীত কমে গিয়ে গরম কাল আসে মে মাস থেকে যা চলে সেম্টেম্বর পর্যন্ত। এই বাজে আবহাওয়ার দিকে লক্ষ্য রেখে এখানকার পাবলিক ট্রেনজিট, মল আর অফিসগুলোতে পর্যাপ্ত গরম রাখা হয়। ২১ ডি. সে, ঘরের তাপমাত্রা ভাড়াটিয়ার অধিকারের মধ্যে পড়ে। তবে যারা গরম অঞ্চল থেকে কানাডাতে মাইগ্রেট করে তাদের জন্যে প্রথম কয়েক বছর বেশ কষ্টই হয়। ৮) খারাপ চাকুরীর বাজার: তুলনামূলক ভাবে কানাডার চাকুরীর বাজার অনেক ছোট।

সেই দিকে লক্ষ্য রেখে প্রাদেশিক প্রফেশনাল অর্গেনাইজেশনগুলো বিদেশ থেকে আগত উচ্চ শিক্ষিতদের জন্যে চাকুরীর বাজারে প্রবেশ পথ কঠিন করে রেখেছে। প্রচুর ধৈর্য্য আর সুনির্দিষ্ঠ লক্ষ্য না থাকলে বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে আসা পেশাজীবিদের অড জব করেই জীবন কাটাতে হয়। ফুটনোট: কানাডায় আসা বিষযটা নেওয়া হয়েছে কানাডার ইমিগ্রেশ মন্ত্রনালয়ের প্রচার বিভাগ থেকে। আর না আসার বিষয়গুলো নেওয়া হয়েছে - নো কানাডা ডট কম ওয়েব সাইট থেকে। এখানে কিছু বিশ্লেষন ও মতামত দিয়েছি - অবশ্যই নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে।

বাংলাদেশে বসে সন্তানদের ভবিষ্যত গড়ার জন্যে কঠিন শ্রম বা নানান আজুহাতে অবৈধ উপার্জনের বিপরীতে কানাডায় কয়েক বছর কষ্ট করে একটা সুন্দর ভবিষ্যতের পথটাই মনে করি যৌক্তিক। এখন প্রচুর বাংলাভাষী বসবাসের কারনে সহযোগীতা এবং ভাল পরামর্শ পাওয়া অনেক সহজ হয়েছে। তারপরও যারা কানাডায় অভিবাসনে আগ্রহী হবেন - তাদের জন্যে পরামর্শ একটা চমতকার স্বপ্ন এবং প্রচুর জীবনী শক্তি নিয়ে আসুন - যাতে কমপক্ষে তিন বছর একটা যুদ্ধ করার মতো মনোবল অটুট থাকে। আর আসার আগে মানসিক ভাবে কানাডাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে বিবেচনা করেই প্লেনে উঠুন - এতে দুই নৌকায় পা রাখার বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন এবং এখানে এসে অল আউট যুদ্ধ করা যাবে। সবশেষে - বলি, পৃথিবীর অনেক দেশ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে - সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি - সামাজিক, মানবাধিকার আর অগ্রসরতার দিক দিয়ে কানাডা একটা মহান দেশ...আমি একজন কানাডিয়ান হিসাবে সেই গর্বের অংশীদারও বটে।

( পরের পর পর্ব - অভিবাসী হিসাবে জীবন শুরু)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.