যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
যখনই ইমিগ্রেন্টদের কথা আসে - অবধারিত ভাবেই ক্যানাডার কথা এসে যায়। বর্তমান বিশ্বে ক্যানাডা ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে একটা মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রথমত ক্যানাডায় আগতরা স্বেচ্ছায় এসেছে। দ্বিতীয়ত ক্যানাডার সামাজিক ব্যবস্থাটা ইমিগ্রান্টদের জন্যে একটা সহজ যায়গা কারন ক্যানাডা বিশ্বাস করে "Unity in Diversity"-তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় - ক্যানাডার অভিবাসী আর মুলধারার মিলন কি সহজেই হয়ে যাচ্ছে?
উপরে প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে ক্যানাডার সবচেয়ে বড় শহর টরন্টোর সামাজিক অবস্থা নিয়ে কিছু বলা যাক। প্রতিবছর আসা প্রায় দুই লক্ষ অভিবাসীর মধ্যে ৬০% আসে টরন্টোতে।
দ্রুত বর্ধনশীল শহর টরন্টোর আয়তন ৬৪১ র্বগ কিলোমিটার (লম্বায় ৪৩ কিলোমিটার আর প্রস্থে ২১ কিলোমিটার)। তার মধ্যে ছোট বড় মিলয়ে ১৫০০ পার্ক ১৮% জমি দখল করে আছে।
টরন্টো শহরে জনসংখ্যার প্রায় ২৫ লক্ষের মধ্যে পৃথিবীর ১৬১টা দেশের থেকে আসা মানুষ বসবাস করে এবং যার ৮০% মানুষ বাসায় ইংরেজী ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলে। আর ইমিগ্রেন্টেদের এলাকা ভিত্তিক বসবাসকে টরন্টো সিটি সরকার উতসাহীত করে। এখানে লিটল ইটালী, গ্রীক টাউন, চায়না টাউন, ইন্ডিয়ান বাজার বা বাংলা টাউনে গেলে মাঝে মধ্যে ভুলে যেতে হয় আমরা আসলে কোথায় আছি।
এখানে যেমন আছে চার্চ, তেমনি আছে মন্দির, আছে মসজিদ। তারপরও সিটিকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়, যেন কোন ধরনের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তৈরী না হয়। চমৎকার এই শহরেও আছে আইনশৃংখলা জনতি সমস্যা। বর্তমানে টরন্টোতে দু’টা সমস্যাগ্রস্থ কমিউনিটি আছে। একটা হলো তামিল - অন্যটা জ্যামাইকান।
গত বৎসর পর্যন্ত তামিলদের বসবাসকারী স্কারবোরে এলাকায় বাসা ভাড়া ছিল গড়ে ২০০ ডলার কম আর বাড়ীর দাম ছিল গড়ে ৪০,০০০ ডলার কম। প্রতিদিনই খবরে হেডলাইন ছিল খুন আর গোলাগুলি। তখন ২০০০ সালে ফেডারেল সরকারের বিরোধী দলের নেতা সংসদে তামিল টাইগারকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসাবে ঘোষনার দাবী জানালে বেশ সাড়া পড়ে যায়। কিন্তু লিবারেল সরকার কঠোর পথ না ধরে ভিন্ন পথ দিয়ে হাটে। শুনা যায় সরকারের উদোগে তামিল টাগারর্স (এলটিটিই) এক উচ্চ পর্যায়ের নেতা টরন্টো সফর করে এবং কমিউনিটির সাথে বৈঠক করে।
পরদিন দেখা গেল সিটি পুলিশ অস্ত্র জমাদানের জন্যে পুরষ্কার ঘোষনা করে। সেই সময় কমিউনিটির সহায়তায় পুলিশ প্রচুর যুবককে গ্রেফতারে সম হয়। কয়েক দিনের মধ্যে এলাকায় সন্ত্রাস কমে প্রায় শুন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে। এদিকে সিটি সরকার পুলিশে তামিল যুবককে নিয়োগ করে তামিল এলাকায় ডিউটিতে দিয়ে পুলিশের সাথে তামিল কমিউনিটির দূরত্ব কমিয়ে ফেরে - ফলে পুলিশ কমিউনিটির অংশ হিসাবে সকলের আস্থা নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। এই পুরো বিষয়টা হয় ফেডারেল সরকারের ইমিগ্রেশন বিভাগের আর্থিক সহায়তা এবং তত্বাবধানে।
পরে অবশ্য কনজারবেটিবরা ক্ষমতায় এসেই এলটিটিইকে নিষিদ্ধ সংগঠনের তালিকায় যোগ করে।
এবার দেখা যাক - দ্বিতীয় গোষ্ঠী কিভাবে সমস্যা গ্রস্থ হয়েছে। এরা মূলত জামাইকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপ থেকে আসা। ১৯৯০ সালে দেখা যায় শহরে কেন্দ্র স্থল রিজেন্ট পার্কের সরকারী বাসা এলাকায় কালোদের একক বসতী হয়ে গিয়েছে। সেখানে দিনের বেলায়ও পিজ্জা ডেলিভারী দেওয়া হতো না।
রাতে পুলিশ রিজেন্ট পার্ক প্রবেশ পথে বসে মানুষকে সতর্ক করতে দিচ্ছে। সেই সময় একই মাসে সেই এলাকায় কয়েকটা খুন হওয়ার পর সরকারের টনক নড়ে। ফেডারেল সরকার এবং প্রাদেশিক সরকার এগিয়ে আসে সিটির সহায়তায়। পরিকল্পনা অনুসারে ধীরে ধীরে কলোদের শহরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে রিজেন্ট পার্ক এলাকা আর আগের মতো নিষিদ্ধ এলাকা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে না।
কিন্তু তারা শহরে পশ্চিম প্রান্তে— জেন-ফিঞ্চ এলাকাকে সামাজিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করছে এবং অন্যারা বাড়ী কিনে সেই এলাকাকে আবার ক্যারিবিয়ান অঞ্চল বানিয়ে ফেলেছে। ফলে শুরু হয়ে যায় গ্যাং ভায়লেন্স - এই বৎসরের আজ পর্যন্ত টরন্টোয় সর্বমোট ৬৪টা খুন হয়েছে যার মধ্যে ৪৫ টা হয়েছে ঐ এলাকায় এবং যারা খুন হয়েছে তাদের বেশীর ভাগই জ্যামাইকান।
কেন কালোরা সমস্যাগ্রস্থ? এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে মিডিয়াতে। দেখা যায় - সেখানে বসবাসকারী অভিবাসীদের বেশীর ভাগ সিংগেল মাদার - যারা গড়ে পাঁচটি বাচ্চা মানুষ করছে। সেই পরিবারগুলো সরকারী সাহায্য আর স্বল্প ভাড়ার বাসায় অত্যান্ত প্রান্তিক জীবন যাপন করে।
সেখানে বড় হয়ে উঠা বাচ্চাদের জীবন শুরু হয় র্যাপ আর ভিডিও গেম দিয়ে শুরু হয় -শেষ হয় ড্রাগে গিয়ে । নানান মুনির নানা মতের মতো কেহ বলছে কঠিন আইন করতে, কেহ বলছে সিংগেল মায়েদের সামাজিক সুবিধা বন্ধ করে দিতে। কিন্তু টরন্টোর মেয়র কোন ভাবেই সমস্যাটাকে কালোদের বা জ্যামাইকানদের সমস্যা হিসেবে দেখতে রাজী নন। তার মতে এটা টরন্টোর সমস্যা - এবং এটা ক্যানাডার সমস্যা। আমরা আশা করছি সমস্যাটার একটা টেকসই সমাধান হবে এবং টরন্টো আবার তার পুর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে।
(নোট: কানাডায় বসবাস করে সব সময় বাংলাদেশ নিয়ে লিখি এটা কেমন যেন বেখাপ্পা মনে হয়। এখন থেকে ক্যানাডার উপর কিছু লেখার চেষ্টা করবো, অবশ্যই যদি কেন আগ্রহ নিয়ে পাঠ করেন। আপনাদের মতামত অত্যন্তগুরুত্বের সাথে বিবেচিত হবে। যদি কারো কানাডার বিশেষ কোন বিষয়ে জানতে ইচ্ছা হয়..আওয়াজ দেবেন...চেষ্টা করবো সেই বিষয়ে লিখতে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।