আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপেক্ষিত (ছোট গল্প)

দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী! কনভোকেশনের রেজিস্ট্রেশন করে ফেলার পর থেকে হাসান পরে গেল চিন্তায়! কনভোকেশনে যাবো? লোকে কি বলবে? আমি কি এই ভার্সিটির যোগ্য ছিলাম? এইখান থেকে পাওয়া শিক্ষা তো কাজেই লাগাতে পারলাম না। এই সব সাত পাঁচ চিন্তা ভাবতে ভাবতে হাসানের দিন যেন কাটছে। আর সবচেয়ে বড় চিন্তাটা মাথায় ধাক্কা দিচ্ছে তা হল ভার্সিটির লাইফের উপেক্ষিত এই ছেলেটাকে সবাই কি চোখে দেখবে সেদিন। হাসানের যে পেশা তা থেকে সে কিছুদিনের বিরতি নিয়েছে, ফলে তার দিন কাটছে দুইভাবে, এক কনভোকেশনের তারিখের দিন গুনে আর দুই কনভোকেশনের দিনটা কি করে কাটাবে এই ভেবে। স্যাররা দেখে কি বলবে, বিশেষ করে এসএইচ স্যার, তিনিতো মনে হয় ডিরেক্ট অপমান করবেন, খনখনে গলায় লাস্ট বোর্ড ভাইভায় স্যারের বাক্যটা ছিল, “এই যে ছেলে তোমাকে দিয়ে তো ইঞ্জিনিয়ারিং এর কিস্যু হবে না, কি করলা এই চার বছর, কিবা করবা তুমি?” হাসান যতটা ভাবে ততটা উপেক্ষিত হয়ত ছিল না তার ভার্সিটি জীবন, ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টের যে ভাবে কাটে সে ভাবে কাটত আর কি।

বলতে গেলে খেলার মাঠে পারদর্শী ছিল না, রেজাল্ট সেকেন্ড ক্লাস ছিল, কোন প্রোগ্রাম এরেঞ্জ করার জন্য কেউ তাকে ডাকতো না, স্যারদের চোখে সেভাবে পড়েনি। তবে হলের রুমমেট গুলো হাসান কে বেশ ভাল চোখে দেখত আর বছরের ডিপার্টমেন্টাল অনুষ্ঠানে হাসানের ডাক পড়ত নাটকের রোল করার জন্য। বাস্তব জীবনে অভিনয় না পারলেও ঐ মঞ্চে উঠে পারতো। কিন্তু তবুও নাটক শেষে অনেকেই বলত গড়পড়তা পারফরম্যান্স। এইভাবে কাটত তার ভার্সিটি জীবন।

বন্ধুগুলো সে বন্ধুই মনে করত। আর প্রাণ দিয়ে ভালবাসত রুয়েট কে। ৮ম সেমিস্টারের রেজাল্টের পর রুয়েটের জন্য মন খারাপ হলেও হাফ ছেড়ে বাচলো হাসান। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেও ফেলত কিন্তু নিজের ভাগ্যের গুনে বা দোষে যেন উল্টে পালটে গেল সব! দেখতে দেখতে দিন চলে আসলো। ঢাকা থেকে রাজশাহীর পথে যাত্রা।

ফেসবুক গ্রুপে চোখ রাখার ফলে হাসান জেনেছিল কি কি অনুষ্ঠান হবে, কারেন্ট সিরিজ কি করবে তাদের নিয়ে , কনভোকেশনের সিরিজ গুলোর কি প্ল্যান! এক সময় ভাবল ধুর বেকার চিন্তা করছি। মনের মত করে দিন কাটাবো। কাউকে সেভাবে বলেও নি যে কনভোকেশনের যাচ্ছে এমন কি অন্যসময় নিজের সাথে যারা থাকে তাদের কেও না। ধীর পায়ে ঢুকলো রুয়েটের মধ্যে। সাজ সাজ রব।

একটু খানি বদলেছে রুয়েট, পাশে নতুন শহীদ মিনার কিন্তু তবুও যেন সেই চিরোচেনা রূপ। অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে থাকল হাসান। চোখে পড়ল সোহাগ কে, ক্লাসের সেকেন্ড বয় ছিল, জার্মানিতে পিএইচডি করছে, ইলেক্ট্রিক্যালের মনসুর, ওদের ব্যাচমেট, টিচার এখন রুয়েটের কিন্তু সমাবর্তনের দিনে শিক্ষক থেকে যেন ছাত্রজীবনে চলে গেছে । ফারজানাকে দেখে একটু লজ্জা পেল, এক ব্যাচ জুনিয়র সি এস সির স্টুডেন্ট, দেশের নামকরা ফ্রিল্যান্সার । এই মেয়েকে প্রপোজ করতে চেয়েছিল একদিন কিন্তু সাহসে কুলায়নি।

কারেন্ট সিরিজের পিচ্চি গুলান কে দেখেও মজা পেল। যেন আজকে ওদেরই কনভোকেশন। অবাক হল নিশান কে দেখে, এখনো ভাবে চলে সেইরকম, কোন এক ব্যাংকের ভাল পোষ্টে আছে। মনে পরে গেল নিশান লাস্ট ইয়ারে থাকতে প্রথম নামলো একটা মুভি বানাতে, কে যেন বিদেশ থেকে ভাল ভিডিও ক্যামেরা আনছে তা দিয়ে। সবার মধ্যে হইচই পরে গেছিলো।

লজ্জা না পেয়ে হাসান ছুটে গেছিল , একটা ছোট্ট পার্ট যেন তাকে দেয় এই আবদারে। আফসোস নিশান দেয়নি আর একা পেয়ে হালকা অপমানও করেছিল। সে কথা ভুলেই গেছিলো হাসান কিন্তু নিশানকে দেখে মনে পরে গেল আবার। আরে ঐ তো দূরে এসএইচ স্যার, দেখে ফেললে আবার অপমান করবে না তো। হটাৎ চোখে পড়ল হিমেল কে।

ছেলেটা বেশ, কোনদিক না তাকিয়ে নিজেই একটা ডিজাইন ফার্ম খুলেছে। হাসান হিমেলের প্রতি কৃতজ্ঞ , কারন সে ছিল তার থিসিস পার্টনার। কেউ কি তার সাথে থিসিস করবে এই ভয়ে হাসানের বেশ কিছুদিন কাটছিলো আর কি। এমন সময় হিমেলের চোখে পড়ল হাসান কে। দেখেই চিৎকার করল, “ আরে হাসান! তুই”।

চারপাশে হাসান চৌধুরী হাসান চৌধুরী বলে রব উঠে গেল অল্পক্ষণেই। হিমেল এসে জড়িয়ে ধরল ওকে। জুনিয়ররা ঘিরে ধরে ফেলেছে ততক্ষণে। হাসান দেখল সোহাগ দ্রুত পায়ে আসছে ওর দিকে, ফারজানা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখেছে। মনসুর এগিয়ে এসেছে কাছে কিন্তু তার আগে এসএইচ স্যার এসে হাত বাড়িয়ে দিল, ভয়ে ভয়ে হ্যান্ড সেক করল হাসান, স্যার বলে উঠল, “ হাসান চৌধুরী ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনে না যেয়ে ভালই করেছো।

গর্ব করতে পারি যে তোমাকে নিয়ে”। কথাটা শুন হেসে ফেলল হাসান। মনটা হয়ে গেল ভারমুক্ত। হাসান চৌধুরী, পুরো নাম বললে সবাই চিনে ফেলে। বাংলাদেশের সিনেমা জগত টা কে তোলপাড় করে ফেলেছে যে ছেলে।

তার অসামান্য অভিনয় গুনে মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত সবাই ছুটছে হলে। পরিচালক প্রযোজকদের আশা তার হাত ধরেই নতুন মাইফলক পাড়ি দিচ্ছে বাংলা সিনেমা। সম্প্রতি হলিউডের মুভিতে সহ অভিনেতার পার্ট করে এ্যাওয়ার্ড জিতে দৈনিক পত্রিকার গুলোর নিয়মিত মুখ। কনভোকেশনের দিনটা জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ-দিন হয়ে উঠল হাসানের। অটগ্রাফ, ফটোগ্রাফ আর প্রশংসায় ভেসে গেল।

বর্তমান হাসান চৌধুরীকে আর কোন ভাবেই উপেক্ষা করা যায় না যে। খালি একটাই কষ্ট হাসানের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাটাকে কাজে লাগাতে পারছে না কোনভাবে। -আশিকুর রহমান [রুয়েটের কনভোকেশন উপলক্ষ্যে লিখেছিলাম। কিছু কারনে কনভোকেশন টা হয়নি] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।