আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগারদের সাথে একত্রে আড্ডাবাজি কিংবা যে ভাললাগার শেষ নেই

জোরে-সোরে মহব্বতের সাথে স্বপ্ন দেখুন। স্বপ্নই সম্ভাবনা। “A dream you dream alone is only a dream. A dream we dream together is reality”.

এর আগের পোস্টে ব্লগারদের একত্রিত হওয়া নিয়ে একটা লেখা দিয়েছিলাম। যার শিরোনাম ছিলঃ সামুভিত্তিক আমাদের একটি সাহিত্য-গ্রুপ থাকা উচিত সেই সূত্রে আমরা কয়েক জন ব্লগার গত শুক্রবার একত্রিত হয়েছিলাম। আমি মনে করি ব্লগাররা অন্য আর দশটা মানুষের চেয়ে কিছুটা হলেও মানবিক।

হয়ত এটা অন্ধবিশ্বাস। কিন্তু এই বিশ্বাসটাকে লালন করতে আমি পছন্দ করি। ভার্চুয়াল জগতে অনেকের সাথেই ব্লগিং করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে। কিন্তু সেই লোকগুলো বাস্তবে কেমন, কিভাবে তারা কথা বলে, কতটা সহজে আমাকে তারা গ্রহণ করে এ ব্যাপারে কিছুটা টেনশন ছিল। কিন্তু সেদিনের পর আমার সব দ্বিধা, সংশয় কেটে গেছে।

ব্লগাররা আসলেই ভাল মানুষ। বন্ধু-বৎসল। তাদের সাথে মাত্র কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে আমি মুগ্ধ। আড্ডার সময়টা কিভাবে যে দ্রুত শেষ হয়ে গেল, টেরই পেলাম না। ব্লগারদের সাথে একত্রে আড্ডা দেয়ার রোমাঞ্চটাই আলাদা।

অশেষ ভাল লাগায় সেই থেকে আমি আচ্ছন্ন হয়ে আছি। সামনের দিনগুলোতে ইনশাআল্লাহ আবারও আমরা মিলিত হব। হতেই হবে। আর যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই আড্ডার সূত্রপাত আশা করি সেটা দ্রুত সফল হবে। যারা আমার আগের পোস্টটি পড়েন নি তারা সেটা পড়ে নিলে আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

আর সামনের আড্ডায় আপনাদের সবাইকে অগ্রিম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম। গত শুক্রবারের আড্ডা থেকে ফিরে ফেবুতে সাহিত্য-আড্ডা গ্রুপ পেইজে একটি লেখা পোস্ট করেছিলাম। সেটাও এখানে দিয়ে দিলাম। আশা করি আপনাদের ভালই লাগবে। প্রিয় বন্ধুরা, আজ সাহিত্য-আড্ডার প্রথম আড্ডা অনুষ্ঠিত হল।

দুপুরের প্রচণ্ড বৃষ্টি মনের মধ্যে ভয়ের বজ্রপাত ঘটাচ্ছিল আড্ডাটা শেষ পর্যন্ত হবে তো? আসতে পারবে তো সবাই? আবার এটাও ভাবছিলাম আমি যদি সবচেয়ে দূর থেকে আসতে পারি তাহলে অনেক কাছে থেকে অন্য সবাই নিশ্চয়ই পারবেন। চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি সময়টা পিছিয়ে দিল। এবং স্থানও বদলাতে বাধ্য করল। ছবির হাটের পরিবর্তে আজিজ সুপারে সবাই একত্রিত হলাম। পাঁচটার পরে একে একে সবাই আসতে শুরু করলেন।

আমি তো তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষাচ্ছিঃ কেউ আসছে না কেন? পাঁচটার পরে প্রথম এলেন ব্লগার সাইফুল ইসলাম সজীব। আহ কী যে ভাল লাগল! নিশ্চিত হলাম, যাক অন্তত একজন হলেও কেউ এলেন শেষ পর্যন্ত। এরপর একত্রে এলেন স্বপ্নবাজ অভি ও জাদিদ নামের একজন। তারপর এলেন মাহতাব সমুদ্র। এবার আজিজের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই রং চা খেয়ে নিলাম।

তারপর ঠিক করলাম পাবলিক লাইব্রেরি চত্ত্বরে যাওয়ার। সেখানে বসার ভাল জায়গা আছে। এর আগে সবাইকে তো জানিয়েছিলাম আজিজে বসতে যাচ্ছি সবাই। তো কুহক ভাই তো তখনও আসেন নি। তাকে কিভাবে জানাই পাবলিক লাইব্রেরি চত্ত্বরে যাওয়ার কথা? তার ফোন নাম্বারও তো জানি না।

ভাবলাম লাইব্রেরি চত্ত্বরে গিয়ে ফেবুতে তাকে জানাব। পথে যাদুঘরের সামনে থেকে সিংগারা ও গরম জিলাপি খাওয়ালেন প্রিয় জাদিদ। আসলে শুধু প্রিয় নয় তাকে সুপ্রিয় বলা উচিত। যে খাওয়ায় তার জন্য ‘সু’টা বেশি বেশিই তো বরাদ্দ রাখা উচিত, নাকি? ওহ, প্রথম চাটা কিন্তু খাইয়েছিল আমাদের আরেক বন্ধু রাজিব। সে কোনো ব্লগার নয় কিন্তু আমার সকল ভাল উদ্যোগের প্রবল সমর্থক।

লাইব্রেরি চত্ত্বরে পৌঁছে যেই ফেবু খুলে লিখতে শুরু করেছি - কুহক ভাই, আমরা আপনার জন্য.... সাথে সাথে অপরিচিত নাম্বারের ফোন। হ্যালো আমি কুহক বলছি। আপনারা কোথায়? বললাম, ভাই আমরা তো পাবলিক চত্ত্বরে। কেন, আপনাদের না আজিজ সুপারে বসার কথা? আমি তো আজিজে এসেছি। স্যরি ভাই।

সবাই আসার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, লাইব্রেরি চত্ত্বরেই ভাল হবে। বসার ভাল জায়গা আছে। ঠিক আছে থাকেন, আসতেছি। আমাদের আড্ডা চলতে থাকল, হঠাৎ অভি জাদিদকে কা_ভা বলে ডেকে উঠল! টিনের চালে কাক আমি তো অবাক! খালি অবাক না হতবাক! এতক্ষণ ভাবছিলাম হয়ত অভির বন্ধু, কোনো একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি বললাম কা_ভা মানে কাল্পনিক_ভালবাসা? বললেন, হ্যাঁ।

ধুরো মিয়া আপনার পানিশমেন্ট হওয়া দরকার। আমি ভাবলাম কে না কে? আরে ভাই সবাই তো কা_ভাকে চেনে, জাদিদকে কে চেনে? অদ্ভুত সারল্যমাখা হাসিতে তিনি তাকে আগে না চিনতে পারার আফসোসটা ঘুঁচিয়ে দিলেন। লম্বা, স্বাস্থ্য ভাল, ফর্সা। সমগ্র অবয়বে তার সরলতা জড়ানো। দেখেই ভাল লাগে।

বন্ধু ভাবতে ইচ্ছা হয়। স্বপ্নবাজ অভি, খুবই রোমান্টিক চেহারার তরুণ। খোঁচা-খোঁচা দাড়িতে ধারাল চেহারার অভিকে চমৎকার লাগছিল। বেচারা বৃষ্টি দেখে ঘর থেকে প্যারাসুট টাইপ কাপড়ের একটা শার্ট পড়ে এসেছিল। বৃষ্টি তো পরে আর ছিল না।

সুতরাং তার গরম লাগছিল এবং বেশ অস্বস্তিতে ভুগছিল। বললাম, বুতাম খুলে দেন। তিনি তাই করলেন। শান্ত ও নিরীহ চেহারার আশরাফুল ইসলাম দুর্জয়। দেখেই মনে হয় নির্বিরোধী মানুষ।

কোনো ক্যাচালে তিনি নেই। মাহতাব সমুদ্র, ছিপছিপে লম্বা তালগাছের মতো। অনেক শুকনা। প্রপিকে তাকে এত শুকনা লাগে নি। কা_ভা বললেন, সমুদ্র আগের চেয়ে অনেক শুকিয়েছে।

হা-হা-হা সাইফুল ইসলাম সজীবকে দেখে আমার জীবনানন্দকে মনে পড়ে গেল। সজীবের অবয়ব, দেহের গঠন তাঁর মতোই কিছুটা। জীবনানন্দ ছিলেন গোলগাল গঠনের। সজীব তাঁর মতোই যেন কিছুটা নিভৃতি পছন্দ করেন। “সকল লোকের মাঝে বসে/ আমার নিজের মুদ্রাদোষে/ আমি একা হতেছি আলাদা” পুরোটা সময় তিনি আসলেই একটু যেন আলাদাই ছিলেন।

আর আমার বন্ধু রাজিব। আমি বলি পৃথিবীর সরলতম ছেলে। এত ভাল এত সরল হয় না আজকাল। তার এই সরলতায় চিরদিনের জন্য আটকে গিয়েছে সিলেটের মেয়ে লিপি। সে কথা আরেক দিন হবে।

ইতোমধ্যে বহু কাঙ্ক্ষিত কুহক ভাই চলে এলেন। দূর থেকেই আমার মনে হল, ইনি কবি কুহক হতে পারেন। পাজামা পানজাবি পড়ে, গলায় দুটি ক্যামেরা ঝুলিয়ে, লম্বা চুলে পিছনে ঝুঁটি বেঁধে প্রকৃত কবিসুলভ চেহারায় তিনি হাজির হলেন। তিনিও ছিপছিপে লম্বা, ফর্সা এবং খুবই সুন্দর মুখাবয়ব। তাকে দেখলেই মনে হয়, কবিদের তো এমনই হওয়া উচিত।

তাকে দেখলে আপনাতেই কবি কবি বলে একটা আন্তরিক সম্ভ্রম চলে আসে। তিনি আমাদের সবার একত্রে ছবি তুললেন। ব্যস্ত মানুষ বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না। কা_ভা বললেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার প্লান আছে। শুনে কুহক ভাই বললেন, অবশ্যই যেন তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনিও যাবেন। অনেক মশা জ্বালাচ্ছিল। প্রত্যেকেই দুয়েকটি করে থাপড়িয়ে মেরে ফেলে ইতোমধ্যেই বীর সেজেছি। সুতরাং সিদ্ধান্ত হল, ছবির হাটে যাওয়ার। সেখানে যেতে না যেতেই মাগরিবের আজান দিল।

আমি আর সজীব ভাই নামাজ আদায় করে আবার আড্ডায় সামিল হলাম। নানাদিকে আড্ডার আলোচনা গড়িয়ে শেষে কিছু বিষয়ে আমরা একমত হলামঃ ১) সাহিত্য-আড্ডা গ্রুপের সদস্যগণ নিজেদের লেখার পারস্পরিক খোলামেলা সমালোচনা করবেন। সে সমালোচনাকে অবশ্যই ইতিবাচক ও গঠনমূলক হতে হবে। ২) গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যারা লেখেন অর্থাৎ যারা সাহিত্য চর্চা করেন তারাই এই গ্রুপের সদস্য হতে পারবেন। ৩) সদস্যকে অবশ্যই সমালোচনা হজম করার মতো সাহস ও ইচ্ছা থাকতে হবে।

কারণ সমালোচনা হবে কঠোর। মোটেই নরম ধরণের নয়। সুতরাং যার গন্ডারের চামড়া নেই তার এই গ্রুপের সদস্য হওয়ার প্রয়োজন নেই। ৪) মাসে অবশ্যই কমপক্ষে একদিন সাহিত্য-আড্ডার আড্ডা হবে এবং সেটা প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে। এছাড়াও আড্ডা হতে পারে যে কোনো দিনই।

সদস্যদের কয়েকজন একত্রিত হতে পারলেই তারা সাহিত্য-আড্ডার ব্যানারে আড্ডা দেবেন এবং সে বিষয়ে গ্রুপে পোস্ট দেবেন। তবে মূল আড্ডা ঐ শেষ শুক্রবার। ৫) গ্রুপের সদস্যরা নিয়মিত গ্রুপে পোস্ট দেবেন। আগে থেকেই ঠিক করা থাকবে কে পোস্ট দেবেন। তিনি পোস্ট দিলে সবাই সেটার সমালোচনা করবেন।

৬) এই গ্রুপটা লেখার প্রশংসা অর্জনের জন্য নয়। এটা লেখার খুঁত খুঁজে বের করার জন্য। প্রশংসা আমরা অন্য জায়গা থেকে অর্জন করে নেব। এবং বাইরে থেকে প্রশংসা অর্জিত হবেও যদি সদস্যগণ সমালোচনার মাধ্যমে বের হয়ে আসা খুঁতগুলো দূর করে নিতে সচেষ্ট হন। ৭) এই গ্রুপ দলাদলির উর্ধ্বে থেকে কাজ করে যাবে।

অর্থাৎ সাহিত্য-আড্ডা দলাদলিমুক্ত একটি দল। আপাতত এই ছিল আমাদের সিদ্ধান্ত। পরে হয়ত আরও যোগ হবে। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি আমাদের সকলের প্রিয় পরিবেশ বন্ধু আড্ডার শুরুতেই ফোন করে আমাদের দোয়া দিয়েছেন, আড্ডার সাফল্য কামনা করেছেন। এবং কানেকানে জিজ্ঞেস করেছেন, পনি আপু কি আসবেন? তাকে আমি আশ্বস্ত করলাম, আজ তিনি আসবেন না তবে সামনের যে কোনো আড্ডায় ঠিকই তিনি আসবেন।

তিনি আমাদের অনেকের চেয়েই অনেক উৎসাহী ও উদ্যমী। (পনি আপু শুনতে পাচ্ছেন?) আজকের আড্ডা থেকে আমরা একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরেছি – নিঃসন্দেহে শীঘ্রই আমাদের আড্ডা অত্যন্ত জমজমাট হয়ে উঠবে এবং এখান থেকে মানসম্মত সাহিত্যিক অচিরেই বাংলাদেশ কাঁপাবে, ইনশাআল্লাহ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.