অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও কবিতার মানুষ
নিরো (ল্যাটিন নাম: Nero Claudius Caesar Augustus Germanicus;
জন্ম ১৫ ডিসেম্বর, ৩৭
জন্মস্থান অ্যান্টিয়াম, ইতালি
পিতাঃ নেইয়াস দোমিতিয়াস আহেনোবারবাস
মাতাঃ এগ্রিপ্পিনা দি ইয়াঙ্গার
পূর্বসূরিঃ ক্লদিয়াস, সৎপিতা
সৎভাইঃব্রিটানিকাস
স্ত্রীঃ ক্লদিয়া অক্টাভিয়া,পপ্পাইয়া সাবিনা,স্তাতিলিয়া মেসালিনা
সন্তানাদিঃ ক্লদিয়া অগাস্টা
মৃত্যুঃ ৯ জুন, ৬৮ (৩০ বছর) মৃত্যুস্থান রোমের বাইরে
সমাধিস্থল মউসোলিয়াম অব দ্য দোমিতি আহেনোবারবি, পিনসিয়ান হিল, রোম
রাজত্বকালঃ ১৩ অক্টোবর, খ্রিষ্ট-পূর্ব ৫৪ থেকে ৬৮ সময়কালে রোমান সাম্রাজ্যের পঞ্চম এবং জুলিও-ক্লদিয়ান রাজতন্ত্রের সর্বশেষ রোমান সম্রাট ছিলেন।
ক্লদিয়াস নিরোকে উত্তরাধিকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে দত্তক সন্তানরূপে গ্রহণ করেছিলেন। ক্লদিয়াসের মৃত্যুর পর ১৩ অক্টোবর, ৫৪ তারিখে সম্রাট হন। খুব সম্ভবতঃ ক্লদিয়াস নিরো'র মা এগ্রিপ্পিনা দি ইয়াঙ্গার কর্তৃক নিহত হয়েছিলেন। নিরোকে ক্লদিয়াসের পুত্র ব্রিটানিকাসের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ নিশ্চিতকল্পে ইয়াঙ্গার এ পদক্ষেপ নেন।
শাসন ব্যবস্থাঃ
তাঁর শাসনকালে নিরো কূটনীতিবিদ্যায় পারদর্শীতা দেখান। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করে ব্যাপকভাবে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি থিয়েটারের জন্য ভবন নির্মাণের আদেশ দেন এবং অ্যাথলেটিক ক্রীড়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এ সময়ে সফলভাবে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং শান্তি রক্ষার্থে পার্থিয়া সাম্রাজ্যের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। প্রথম রোমান-ইহুদি যুদ্ধ শুরু হয় এ সময়েই।
নিরো'র শাসনামলে অমিতব্যয়িতা লক্ষ্য করা যায় এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথে জড়িত ছিল। তিনি অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। এমনকি তিনি নিজ মাতাকেও সৎভাইকে হত্যা করেছেন। এছাড়াও বিষ প্রয়োগে সৎভাই ব্রিটানিকাসকে হত্যার সাথেও জড়িত ছিলেন তিনি।
রোমের অগ্নিকাণ্ড
তাঁকে জনপ্রিয়তাবিহীন সম্রাটরূপে আখ্যায়িত করা হয়, যিনি রোম পুড়ে যাওয়া অবস্থায় বেহালা বাজাচ্ছিলেন।
পরবর্তীকালে এ কথাটি ভুল প্রমাণিত হয় ও গুজব হিসেবে বিবেচিত হয়। কেননা, তখনও বেহালা বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কার ঘটেনি। কিন্তু তিনি প্রাচীন গ্রীসের উদ্ভাবিত লির বাজাতে পারতেন।
১৯ জুলাই, ৬৪ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে অগ্নিকাণ্ডে (লাতিন: Magnum Incendium Romae) রোম নগরীর অধিকাংশ এলাকা আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। টাসিটাসের মতে, এ অগ্নিকাণ্ডের জন্য নিরো খ্রিস্টানদেরকে দায়ী করেছিলেন।
কিন্তু অনেক রোমান অধিবাসী মনে করেন যে, নিরো স্বয়ং ডোমাস অরেয়া স্বর্ণ ভবন নির্মাণে আগুন লাগানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
তিনি খ্রিস্টানদের প্রথমদিককার উৎপীড়নকারীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাতে আলোর উৎস থেকে আগুন নিয়ে তাঁর উদ্যান পুড়াতে গিয়ে খ্রিস্টানদেরকে আটক করেছিলেন।
প্রেক্ষাপট
প্রাচীন রোমান ঐতিহাসিক টাসিটাসের মতে, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ছয় দিন ধরে জ্বলতে থাকে। প্রাচীন রোমের চৌদ্দটি জেলার মধ্যে মাত্র চারটি আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পেয়েছিল।
তিনটি জেলা পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং বাকী সাতটির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। অন্যান্য সমসাময়িক ইতিহাসবিদদের মধ্যে একমাত্র প্লিনি দি ইল্ডার লিখেছেন যে, এ অগ্নিকাণ্ড স্বল্প সময়ের ছিল।
ঐ সময়ে জীবিত ইতিহাসবিদদের মধ্যে দিও ক্রাইসোসতম, প্লুতার্ক এবং এপিকটেটাস এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। আগুনের ভয়াবহতা সম্বন্ধে সেনেকা পলকে চিঠিতে লিখেছিলেন যে, একশত ত্রিশটি ঘর এবং চারটি ব্লক ছয়দিনের মধ্যে ভস্মিভূত হয়ে যায়। এ হিসাবে কমপক্ষে শহরের এক-দশমাংশ পুড়ে যায়।
ঐ সময় রোমে ১,৭০০ ব্যক্তিগত গৃহ এবং ৪৭,০০০ ইনসুলা ছিল।
ক্যাসিয়াস দিও বলেছেন যে, ঐ সময়ে সম্রাট নিরো মঞ্চের পোশাক পরিহিত অবস্থায় গ্রীক মহাকাব্য ইলাপারসিস থেকে গান গাচ্ছিলেন। এছাড়াও, টাসিটাসের মতে অগ্নিকাণ্ডের সময় নিরো অ্যান্টিয়ামে ছিলেন। টাসিটাস বলেছেন, নিরো লির বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান গাচ্ছিলেন এবং নগর পুড়ে যাবার খবরটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন।
টাসিটাসের মতে, আগুনের সংবাদ শোনে নিরো দ্রুত রোমে ফিরে যান।
ত্রাণকার্য পরিচালনার উদ্যোগী হন ও নিজ তহবিল থেকে যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেন তিনি। অগ্নিকাণ্ডের পর নিরো নিজ প্রাসাদে গৃহহীনদের জন্যে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং দূর্গতদের জন্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।
ক্ষমতাচ্যুতঃ
৬৮ সালে কর ব্যবস্থার প্রতিবাদ জানিয়ে গলে ভিনডেক্সের সহায়তায় বিদ্রোহ এবং হিস্পানিয়ায় (স্পেন) গালবা কর্তৃক আক্রমণের শিকার হয়ে নিরো পলায়ণপূর্বক সিংহাসনচ্যুত হন।
ফাঁসীকাষ্ঠে ঝুলবেন এ আশঙ্কায় ৯ জুন, ৬৮ তারিখে প্রথম রোমান সম্রাট হিসেবে আত্মহত্যা করেন নিরো। তাঁর এ আত্মহননের মধ্য দিয়ে জুলিও-ক্লদিয়ান রাজত্বকালের পরিসমাপ্তি ঘটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।