ব্লগের আমি ব্লগের তুমি ব্লগ দিয়ে যায় চেনা
১০.২
আসমানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে লোকজন ভালোই হয়েছিলো। আমেরিকানরা বাচ্চাদের জন্মদিনে তাদের কিছু বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে পিৎজা প্ল্যানেট বা ওই জাতীয় কোথাও নিয়ে যায় কয়েক ঘণ্টার জন্যে। সেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলার দেদার আয়োজন, খেলা হয়ে গেলে ভরপেট পিৎজা ও কেক খেয়ে বাড়ি যাও। বাবা-মায়েরা সেখানে আমন্ত্রিত হয় না। ছোটো ছেলেমেয়েদের জন্যে আয়োজন এইরকমই হওয়া উচিত, ওদের আনন্দ-ফুর্তি হলেই হলো।
কিন্তু বাঙালি বাবা-মা নিজেরা নিমন্ত্রিত না হলে এবং পাতে পোলাও-বিরিয়ানি-মাংস না পেলে অসন্তুষ্ট হয়, অতৃপ্ত থাকে। হোক তা বাচ্চাদের জন্মদিনের অনুষ্ঠান! একবার বারো বছর বয়সী এক মেয়ের জন্মদিনে গিয়ে দেখি, মেয়েটির একটিমাত্র বান্ধবী উপস্থিত, কয়েকটি শিশু বাদ দিলে বাকি পঁচিশ-তিরিশজন মানুষের সবাই বয়স্ক, মেয়েটির বাবা-মায়ের বন্ধুবান্ধব।
আসিফের লিভিং রুমে সোফায় অনেক লোকজন গাদাগাদি করে বসেছে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে কিছু বাড়তি চেয়ার বসানো হয়েছে, তারই একটিতে বসে পড়ি। উপস্থিতদের কয়েকজনকে চিনি, অধিকাংশ অপরিচিত।
আমি মানুষ হিসেবে তেমন মিশুক নই, এতো বছরেও এই শহরে বেশি মানুষকে চেনা হয়নি। বাবুলের সঙ্গে অনেকদিন পরে দেখা, মাথায় চুল কমেছে, ওজন বাড়তির দিকে। জানালো গ্যাস স্টেশনের ব্যবসা তার, দুটি ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। পরিচিতদের সঙ্গে কিছু মামুলি কুশল বিনিময় করি। পর্বটি সংক্ষিপ্ত হয়, কেননা তখন রাজনীতির কথা হচ্ছে, যা নির্ভুলভাবে উত্তাপ অর্জন করে থাকে।
আশ্চর্যের বিষয়, এইসব আলোচনা কেউ নিচুকণ্ঠে বা স্বাভাবিক কথা বলার ঢঙে করে না। হয়তো পারা যায় না। এমনকি, সিএনএন-এর রাজনীতি বিষয়ে বিতর্কের অনুষ্ঠান ক্রসফায়ার, সেখানেও দেখি সিনেটররা গলা চড়ায় - চোখমুখ লাল হয়ে ওঠে, চিৎকার করে গলার রগ ফুলিয়ে প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডানোর চেষ্টা করে।
তর্কটি এখনো চিৎকারের পর্যায়ে যায়নি, তবে তার সমস্ত লক্ষণ ও উপাত্ত মজুত আছে দেখতে পাই। তিন-চারজনে মিলে যথারীতি দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে।
আর সবাই শ্রোতা। আলোচনাটি মনে হয় আগেই শুরু হয়েছিলো, অবধারিতভাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির শ্রেষ্ঠত্বের তত্ত্ব ও তর্ক। শেখ মুজিব না জিয়া বড়ো, হাসিনা-খালেদার মধ্যে কে শ্রেয়তর - এইসব গড়িয়ে কেমন করে প্রসঙ্গ চলে যায় বাংলা ভাই-এ, তারপরে র্যাব-রক্ষীবাহিনীর তুলনামূলক বিচার। কখন আবার প্রসঙ্গ পাল্টে গেছে খেয়াল করিনি, আসলে শোনার ইচ্ছেও ছিলো না। যার যার পছন্দ ও মত প্রতিষ্ঠা করার জন্যে অকারণ হৈ চৈ।
দেশে এখন কীরকম জানি না, খুব আলাদা হওয়ার কথা নয়, তবে পরবাসী বাঙালিদের মধ্যে অন্যের রাজনৈতিক বিশ্বাস বা আনুগত্য বিচারের পদ্ধতিটি খুব অদ্ভুত। বেশ কয়েক বছর আগের কথা, তখনো ইন্টারনেটে বাংলা দৈনিকের আবির্ভাব ঘটেনি। একদিন বাঙালি মালিকানার একটি দোকানে নিউ ইয়র্কের বাংলা সাপ্তাহিকের খোঁজে গেছি। একটিমাত্র পত্রিকার কয়েকটি কপি পড়ে আছে, অন্যগুলো, বিশেষ করে আমি যেটি নিয়মিত কিনে থাকি, নেই। দোকানে বসা ভদ্রলোকটি অপরিচিত।
জিজ্ঞেস করি, আর কাগজগুলা কি আসে নাই?
ভদ্রলোক জানালেন যে, সব বিক্রি হয়ে গেছে এবং যে পত্রিকার কপি অবশিষ্ট আছে সেটির কথা উল্লেখ করে জানালেন, এইটা নিয়া যান, সবচে বেশি চলে।
আমি বলি, এই পত্রিকা আমার বিশেষ পছন্দের না।
ভদ্রলোকের মুহূর্তমাত্র লাগে সিদ্ধান্তে আসতে। জিজ্ঞেস করেন, আপনে কি আওয়ামী লীগ করেন?
সেই দোকানে আর কোনোদিন যাওয়ার উৎসাহ আমার হয়নি।
এখন হঠাৎ একজনকে বলতে শুনলাম, তাহলে আমরা বলতেছি না ক্যান হানাদার বাহিনী বলতে আমরা কাকে বুঝি? তাদের নামনিশানা পরিচয়টা কি?
প্রতিপক্ষ অতি উচ্চকণ্ঠ এবং যাবতীয় জ্ঞানের আধার, এমন ধারণা দিতে উদগ্রীব।
তিনি বলেন, না বললে বোঝা যায় না? আর কবে কী ঘটছে, সেইসব নিয়া এখন আর টানাটানির দরকার কী?
তাহলে ইতিহাসের দরকার নাই বলতেছেন?
তা বলি নাই, ইতিহাসের জায়গায় ইতিহাস। কিন্তু রেষারেষি হানাহানি হইতে পারে, সেইসব কথা না তুললেই হয়।
প্রথমজন যুক্তি দেন, সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের ক্রিমিনালদের তাহলে এখনো খোঁজ করে ক্যান? তাতে হানাহানির কথা কেউ বলে না। কিন্তু গোলাম আযমের নামে, রাজাকারদের নিয়া কিছু বললে আপনাদের জান পোড়ায়।
তারাও তো আমাদের দেশের মানুষ।
আমাদেরই ভাই-বেরাদর।
তা আপনার পেয়ারের ভাই-বেরাদরগুলি যুদ্ধের সময় কই ছিলো? কী করছিলো? দেশ স্বাধীনের পরে পলায়া ছিলো ক্যান? তারা যাদের মারছিলো তারা কোন দেশের মানুষ ছিলো, বলেন তো?
সবজান্তা অন্য কথা বলেন এবার, আরে রাখেন মিয়া, ইন্ডিয়ান আর্মি স্বাধীন কইরা দিছিলো বইলা...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।