আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুপকথা : উপন্যাসের খসড়া (পর্ব ৮)

ব্লগের আমি ব্লগের তুমি ব্লগ দিয়ে যায় চেনা

৫.২ জালাল ভাইয়ের বাসা থেকে বেরোতে বেশ রাত হয়ে যায়। নিজের ঘরে ফিরে ফোনের কলার আই ডি দেখি, অচেনা দুটো নাম্বার। অ্যানসারিং মেশিনে কোনো মেসেজ নেই। কাপড় পাল্টে হাতমুখ ধুয়ে নিই। মাঝেমধ্যে দেশ থেকে পুরনো বন্ধুবান্ধব ফোন করে, তার জন্যে আমি অপেক্ষা করে থাকি।

আর অপেক্ষা মুনিয়ার ফোনের জন্যে। জানি কোনো কারণ নেই, তবু আশা করি। এমন নয় যে নিয়মিত ফোন করতে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তা সম্ভব নয়, উচিতও নয়। মাঝেমধ্যে আচমকা ফোন করে সে, এসএমএস পাই, ইমেলও কদাচিৎ।

গত দু’সপ্তাহ কিছুই আসেনি। তার ঘরসংসারের ব্যস্ততা আছে, নিজস্ব জীবনবলয় ও প্রাত্যহিকতার দায় আছে। সেসব সম্পূর্ণ হলে তারপরে সুযোগমতো আমাকে ফোন করা তার সম্ভব হয়। ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশ থেকে এখানকার সময়ের পার্থক্যও হিসেবে রাখতে হয়। এই যোগাযোগ পুরোটাই মুনিয়ার নিজের শর্তে, সেটিই সঙ্গত, আমার মতো দায়শূন্য জীবন তার নয়।

আমার বিশেষ কোনো অনুযোগও অবশ্য নেই। এইটুকু যোগাযোগও তো থাকার কথা ছিলো না, আছে এই ঢের! এক শয়নকক্ষবিশিষ্ট আমার এই ছোটো অ্যাপার্টমেন্টটি একা মানুষের জন্যে আদর্শ। ঢাকার জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে একা একটি কক্ষের মালিকানা পাওয়া হয়ে ওঠেনি, তার আগেই দেশত্যাগী হয়েছি। নিউ ইয়র্কে একা বাসা ভাড়া করার সামর্থ্য ছিলো না, ভাড়া সেখানে অতিশয় বেশি, দুই বেডরুমের একটি বাসায় চারজন ভাগাভাগি করে থাকা। এই শহরে আসার পর নিজের মতো করে একা থাকার সুযোগটি আসে।

মূল শহরের একটু বাইরে এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে আমার বাসা দোতলায়, পুব-উত্তর ফাঁকা। শয়নকক্ষের উত্তরের জানালা খুলে দিলে দেখা যায়, কিছু ফাঁকা জায়গা ছেড়ে ছোটো লেকসহ একটি পার্ক। জগিং ট্রেইলও আছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে পার্কের বেঞ্চে বসে খানিকটা সময় কাটানো যায়। আমার প্রাতঃভ্রমণে উৎসাহী হয়ে ওঠার পেছনে বড়ো বড়ো গাছপালায় ঢাকা এই পার্কেরও একটি ভূমিকা আছে।

মৌসুমী ফুল ফোটানো হয় যত্ন করে, বসন্তকালে বুনোফুলের প্রতাপ। পূর্ণ চাঁদের রাতে গিয়ে দেখেছি, লেকের শান্ত পানিতে নরম আলো ছড়িয়ে যায়, চাঁদের আলোয় বড়ো বড়ো গাছের ছায়া পড়ে থাকে সেখানে, চারপাশ ঘিরে থাকে বইয়ে পড়া রূপকথার মতো মায়াবী রাত। এই সময়ে আমার অবধারিতভাবে আরেকটি রাতের কথা স্মরণ হয়। Can you hear the drums, Fernando? I remember long ago another starry night like this In the firelight, Fernando You were humming to yourself and softly strumming your guitar I could hear the distant drums And sound of bugle calls were coming from afar They were closer now, Fernando Every hour every minute seemed to last eternally I was so afraid, Fernando We were so young and full of life and none of us prepared to die And I am not ashamed to say The constant roar of cannons almost made me cry There was something in the air that night The stars so bright, Fernando They were shining there for you and me For liberty, Fernando Though I never thought that we could lose There’s no regret If I had to do the same again I would my friend, Fernando… যুদ্ধের সময় শেষ হেমন্তের একরাতে দেখা হয়েছিলো অপার্থিব পূর্ণ চাঁদের রাত। ঠিক মাথার ওপরে পরিষ্কার নীল আকাশের গা বেয়ে অঝোরে ঝরা চাঁদের আলোয় চরাচর ধুয়ে যাচ্ছিলো।

বিগত-বর্ষার শীর্ণকায় নলামারা নদীর পাড়ে সাদা বালুকারাশি চাঁদের আলোয় মহার্ঘ্য ধাতুর মতো চকচক করে। আলোয়ানের তলায় সশস্ত্র আমরা পাঁচজন। দলনেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্রের ছাত্র মাজেদ, তার কাছে স্টেনগান আর দুটি হ্যান্ড গ্রেনেড। নজরুল, আকবর, প্রণব আর আমার কাঁধে রাইফেল। আরো একজন আমাদের সঙ্গী, তবিবর, আমাদেরই বয়সী নৌকার মাঝি, তার হাতে লগি ও বৈঠা।

নদীর ঘাটে বাঁধা ছোটো একটি ডিঙি নৌকা। দলনেতা ছাড়া গন্তব্য আমাদের কারো জানা নেই, তাতে কিছু আসে যায় না। আমরা নিঃশব্দে নৌকার দিকে হাঁটি। এমন মনোহর চাঁদের রাত আর কখনো কি দেখবো? মনে হয়, এই অপরূপ দৃশ্যের জন্যে পৃথিবীতে বারংবার ফিরে আসা যায়। এই পৃথিবীতে আমার বসবাস খুব অল্প দিনের নয়, পূর্ণ চাঁদের রাত আরো কতো শত শতবার দেখা হয়েছে, অথচ সেই রাত্রির সঙ্গে আর কোনো রাতের তুলনা হয় না।

তেমন অলৌকিক ও মায়াবী চাঁদের রাত আর কোনোদিন দেখা হয়নি। হবে না। অপরিমেয় জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া একটি হেমন্তরাত আমার সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে থেকে গেলো। আমার শয়নকক্ষে মাঝারি বিছানা, বইয়ের শেলফ আর কমপিউটারসহ পড়ার টেবিল। লাগোয়া বাথরুম, ক্লজেটে কিছু কাপড়চোপড়।

বসার ঘরে কোনোমতে ভদ্রগোছের সোফা, টিভি-ভিসিআর ও গান শোনার একটি যন্ত্র। রান্নাঘরের মতোই একটি রান্নাঘর, ফ্রিজসহ। তার পাশে ছোটো গোলাকার গ্লাসটপ খাওয়ার টেবিল। এই আমার সংসার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.