অন্যদের ব্যর্থ দিনে আমরা জিতি বা জ্বলে উঠি। কথাটা শতভাগ সত্যের মর্যাদা পেয়ে গেছে আমাদের দেশের ক্রিকেট। কারণ ক্রিকেটে খারাপ দিন বা ব্যাড ডে বলে একটা বিষয় আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা যতই দেখছি ততই মনে হচ্ছে প্রতিটা খেলার দিনই তাদের ব্যাড ডে। [অবশ্য ১০/১৫টা খেলার মধ্যে ২/১টায় তো জেতায় যায়] যেদিন অন্য দল খারাপ খেলে সেদিনই আমরা জিতি।
আমাদের ক্রিকেটাররা ইতোমধ্যে তা প্রমাণ করে ফেলেছেন।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রায় ১৫০ টা একদিবসী ক্রিকেট খেলে ফেলেছে। জিতেছে কয়েকটায়। এ পরিসংখ্যানে অনেকে হয়তো তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন। জয়ের হিসাব তো একেবারে খারাপ না।
তাদের বলি নিচের পরিসংখ্যানটায় চোখ পড়লে আপনার বদহজম বা অরুচি আসতে পারে। কিসে? সেটা না হয় নাইবা বললাম। বড় দল বলতে আমরা হারিয়েছি অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা, দণি আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানকে। এর মধ্যে ভারতকে কেবল দুবার হারানো গেছে। বাকি জয়গুলো এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বলতম দলগুলোর বিপ।
ে টেস্টে যে জয়টা এসেছে সেটাওতো ওই দুর্বল দলের সাথেই। বড় দলগুলো টানা ভালো খেলতে খেলতে একট দিন তাদের খারাপ যেতেই পারে। কারণ, তাদের ব্যস্ততম টানা শিডিউল। এক আধদিন তাদের কান্তি ভর করতেই পারে। সেদিনের সুযোগে আমরা জিতি।
পরের ম্যাচে আমাদের ফলাফল দেখলে বিষয়টা আরো সহজ হয়। কারণ, যে ম্যাচে বড় দল হারে তার পরের ম্যাচে তারা দপ করে জ্বলে ওঠে। হারের ম্যাচটা তাদের চাঙ্গা করে দেয়।
বড় দলগুলোর সাথে একটা ম্যাচ জিতলে আমরা ক্রিকেটারদের দেবতার আসনে বসিয়ে ফেলি। বাংলাদেশের বীর, টাইগার বলতেও তাদের দ্বিধা করি না।
পরের ম্যাচেই আমরা আবার ‘বিলাই’ হয়ে যায়। তখন বিলাইয়ের গলায় টাইগারের ডাক বড় বেসুরো লাগে।
বাংলদেশ খারাপ খেললেও খবরের কাগজে তাদের নিয়ে ভালো ভালো কথা লেখা হচ্ছে। বলা হয় তারা নবীন, এখনো অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। প্রশ্ন আসে, এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে আর কতদিন লাগবে? আর জিতলে তো কথাই নেই।
খবরের কাগজে ফলাও করে তাদের নিয়ে লেখা হচ্ছে। ক্রীড়া সাংবাদিকরা হাত খুলে লেখেন। শতেক আইটেমের লেখা। মাঠের সত্যিকারের খেলা না দেখে খবরের কাগজে খেলার খবর পড়তে ভালো লাগে। টেনশন ফ্রি অবস্থায় পড়া যায়।
আহারে! মাঠের খেলাটা বাংলাদেশকে যদি খেলতে না হতো!
আমাদের ক্রিকেটাররা একটা বিষয়ে বেশ উদার। বিপদলের বোলারকে বেশি কষ্ট করে বল করতে হয় না। ব্যাটসম্যানরা তাদের উইকেট বোলারদের উপহার দিয়ে আসে। আউট হওয়ার আগ মুহূর্তে ব্যাটসম্যান বোলারকে বলে, ‘তুই আমারে কি আউট করবি, আমি নিজেই আউট হব, তুই বল কর!’ (ব্যাটসম্যানদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনুবাদ করলে এটাই দাঁড়ায়) দিনের পরদিন একই ধরনের শট খেলে তারা আউট হচ্ছে। আউট হয়ে ফিরে এসে তারা সংবাদ সম্মেলনে বলে, আজকের আউটগুলো খুব বাজে ছিল।
আগামীতে আমরা এসব ভুল কাটিয়ে উঠে আরো ভালো খেলব। এরপরেও তারা একইভাবে আউট হচ্ছে। আবার সংবাদ সম্মেলনে সে ওই একই কথা। এই কমিটমেন্টটা ক্রিকেটাররা বরাবরই পালন করে চলেছে। মাঠে তাদের বোলিং ফিল্ডিং, ব্যাটিং দেখে মনে হবে তারা বিপ দলকে জিতিয়ে দেয়ার জন্য মাঠে নেমেছে।
বাংলাদেশ জোর করে হারবে এবং হারু পাট্টির মধ্যে [পরাজিত দলগুলোর] মধ্যে প্রথম হবে।
ম্যাচে জিতলেই ক্রিকেটারদের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী ঘোষণা করা হয়। বড় অংকের পুরস্কার ঘোষণা দেয়া হয়, দেয়া হয় বোনাস। ভালো খেললে যদি তারা পুরস্কার পেতে পারে তাহলে খারাপ খেলে দেশের মান ডোবানোর জন্য পুরস্কার প্রত্যাহারও করা যেতে পারে। এ লজ্বাতে হলেও যেন তারা ভালো খেলে।
পাঠক আপনার কানে কানে একটা পরামর্শ দিই। যদি কোনো ক্রিকেটারের সাথে আপনার খারাপ সম্পর্ক থাকে বা তাকে আপনার হিংসে হয়, আপনি যদি তার অমঙ্গল চান আর সে যদি হয় অল্প বয়সী- অবিবাহিত তাহলে তাকে পটিয়ে বা তার পরিবারকে রাজি করিয়ে তাকে বিয়ে দিয়ে দেন, দেখবেন মাস খানেকের মধ্যে সে ফল পাবে। একের পর এক ম্যাচ খারাপ করতে থাকবে। এটাতো ইতোমধ্যে প্রমাণীত। আর আমাদের মাথা মোটা নির্বাচকরা আত্বীয়তার সূত্রে দিনের পর দিন তাদের খেলিয়ে যাবেন।
দেশ-দল রসাতলে গেলেও তাদের কোনো তি নেই। মাস গেলে মোটা অংকের বেতন তারা ঠিকই পান।
মানুষেরর আবেগকে নিয়ে আমাদের ক্রিকেটাররা খেলছে। আবেগটাই তাদের পুঁজি। এ রকম খেলা হতে থাকলে এ আবেগটাও আর থাকবে না।
ক্রিকেটের দিব্বি, আপনারা দেশের মানুষকে আবেগ শূন্য করবেন না। মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, বিনোদন নেই, তাই মানুষ টিকিট কেটে এখানো স্টেডিয়ামে যায়। কোথাও যাবার জায়গা থাকলে ভুলেও মানুষ স্টেডিয়াম মুখো হতো না।
শ্রীলংকা ট্যুরে বাংলাদেশ যে খেলা খেলছে সে বিষয়ে কারুর কোনো মন্তব্য...?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।