আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খেতাব হারানোর শঙ্কা



আমরা দুর্ণীতিতে বার বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটার একটা ধারাবহিকতা ছিল বটে। কিন্তু এখন বোধ হয় তা আর থাকছে না। গেল বছরই এর আলামত টের পাওয়া গেছে। গেল বছর বাংলাদেশ দুর্ণীতিতে প্রথম না হলেও শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় ছিল।

এবার আশংকা হচ্ছে, ওই তালিকায় বোধ হয় নিজের দেশটাকে দেখব না। ভাবতে খারাপ লাগছে। বারবার একই তালিকা দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই অভ্যাসে ছেদ পড়বে। হায় সেলুকাস! কি বিচিত্র দেশে আমাদের বাস! দুর্নীতিতে প্রথম হব না বলে এখন খারাপ লাগছে দেশবাসীর।

কোনো কিছুতে আমাদের সাফল্য নেই। কোনো তালিকায়ও বাংলাদেশ জায়গা করে নিতে পারেনি কখনো। যদিও এক আধবার বিভিন্ন তালিকায় নাম উঠেছে কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। ছিল না কোনো ধারাবাহিকতা। ফুটবলের দিন শেষ, ক্রিকেট মাঝে বাঘের মতো গর্জে উঠেছিল, এখন তার গলায় বিলাইয়ের ডাক।

ওই যে, ধারাবাহিকতার অভাব। কেবল দুর্ণীতিতেই আমরা সফল। বেশ একটা ধারাবাহিকতা ছিল। কিন্তু বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সবকিছু কেমন যেন আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে। ভেস্তে যেতে বসেছে দুর্নীতি প্রকল্প।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ কর্ম দেখে মনে হচ্ছে তারা দুর্নীতি নিমূল না করে ছাড়বেন না। না না, তাদের এটা ঠিক হচ্ছে না। দুর্ণীতি করে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে যে খেতাব পেয়েছি তা আমরা হারাতে চাই না। কোনো ভাবেই আমরা বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হতে পারছিলাম না। তারা আমাদের চিনত দুর্নীতিবাজ হিসেবে, সেখানেও হাত পড়েছে সরকারের।

বিগত বছরগুলোতে দেখেছি এক সরকারকে ক্ষমতায় এসে অন্য সরকারকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে গালাগাল করতে। কিন্তু কেউই নিজেদের দুর্ণীতিবাজ হিসেবে আখ্যা দেয়নি। এখন কি দেখছি, যারা অন্যদের দুর্নীতিবাজ বলত তাদের বেশিরভাগ এখন দুর্নীতির অভিযোগে লাল দালানে। ওদের জন্য আমার সহানুভূতি, আহা! তোমাদের সুকর্মের জোরেই দেশটা দুর্নীতিতে শীর্ষ স্থানে ছিল। তোমরা এখন ময়দানে নেই।

দেশটা কিভাবে এখন শীর্ষ আসনটা ধরে রাখবে। দিনদিন রাজনীতির ময়দান [শুধু রাজনীতি নয় আরো অনেক ময়দান] খালি হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে ধরপাকড় হচ্ছে তাতে করে আর বেশি দিন দুর্নীতিবাজ নেতারা লাল দালানের বাইরে থাকতে পারবে না। দুর্নীতিবাজদের ধরতে ধরতে শেষ পর্যন্ত না দেশ নেতা শূন্য হয়ে যায়। লোম বাছতে গিয়ে যদি কম্বল উজাড় হয়ে যায় তাহলে তো আনন্দের কথা।

কম্বল আর গায়ে দিতে হবে না। আমাদের জানাশোনার গন্ডি বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন প্রবাদ বাক্য, উপমা, অলঙ্কার ইত্যাদিতে পূর্ণ হচ্ছি। দুর্নীতিবাজদের ধরা না হলে এগুলো আমাদের জানা হতো না। এই যেমন, বনখেকো, বনভক্ষক, বনের রাজা শামসু..., তেইল্যাচুরা।

আমাদের প্রজন্মরা এখন শিখবে ‘আমাদের দেশে এক বনখেকো ছিল। তার নাম গণি... [আমাদের দেশে এক গরীব কৃষক ছিল। নাম ছিল তার গণি মিয়া-এর বদলে শিখবে]। বর্তমান সরকার আরেকটা খারাপ কাজ করছে যা বেশিরভাগ সরকারী চাকরিজীবীদের অভ্যাস খারাপ করে দেবে। এই সরকার এত জায়গায় নজরদারি করছে যে তাদের রাতের ঘুম শিকেয় উঠেছে।

অফিসে টেনশনে কাজ করতে হয়, নাজানি কখন গ্রেফতার। এই আতঙ্কে রাতের ঘুম চোখ থেকে উধাও। দিনের বেলা সারাদিন ঢুলু ঢুলু চোখে কাজ করা যায়? অফিসে দেরি করে আসা, ঘণ্টাধরে খবরের কাগজ পড়া, ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দেয়া, ৪টা বাজতেই বাসার উদ্দেশে বের হয়ে পড়া আর এর ফাকে একটু কাজ করা এই ছিল কিছুদিন আগ পর্যন্ত বেশিরভাগ সরকারি চাকরিজীবীদের কাজের ধরন। এখন তাদের এতোদিনের পুরনো অভ্যাসটা পাল্টেছে। এতে তাদের কষ্ট হচ্ছে খুব।

সরকারের কি উচিত হচ্ছে ওই আরাম পিয়াসীদের আরামে হাত দেয়া। তারা যে মনে মনে সরকারকে অভিশাপ দেবে। এগুলো ঘাড়ে নেয়ার কি দরকার। আর এসবের কারণেই তো আমরা শীর্ষ দুর্নীতিবাজ-এই খেতাবটা হারাবো। আমরা এখন খেতাব হারানোর আশঙ্কায় আছি।

বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন। এখন দেখছি ওই জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে ‘খেতাব অর্জনের [শীর্ষ দুর্নীতির খেতাব] চেয়ে খেতাব রক্ষা করা আরো কঠিন’ কথাটি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.