নিরর্থক এই জীবনে অর্থকতার খোঁজে চলেছি অজানায় ফার্স্ট পার্ট পড়ে সবাই একই প্রশ্ন করেছেন - সুকান্ত কি আমি নিজে? না মোটেও না। সুকান্ত কাল্পনিক চরিত্র। আমার অনেক অভিজ্ঞতা লেখার মধ্যে এসেছে তবে আমি সুকান্তর মত আঁতেল ছিলাম না, আমি খেলাধুলা প্রিয় ছিলাম আর কেউ যদি আমাকে "মুরগী " বলে ডাকত তবে সেইদিনই তার মাথা ফাটাতাম। যাই হোক এই পর্ব শুরু করে ফেলি।
(প্রথম পর্বের পর...)
সুকান্ত স্কুল এ এতকাল বন্ধু খুঁজত, ফার্স্ট হওয়ার পর অনেকেই সেধে তার বন্ধু হতে এল।
সুকান্ত মনে মনে খুশি হয় কিন্তু বাইরে এমন ভাব করে যেন তার বন্ধুর কোন প্রয়োজন নেই। কোনমতে তাদের এড়িয়ে যেতে পারলেই যেন সে বাঁচে । কারণ বন্ধুত্বের খাতিরে কেউ তার নোট চেয়ে বসলে তাদের ফিরিয়ে দিয়ে অযথা খারাপ হতে সে চায় না ।
পরীক্ষার রেজাল্ট এর আগে তার মা ঈশ্বর এর নামে অনেকগুলো মানত করেছিল - ছেলে ফার্স্ট হলে এই পূজা,সেই পূজা কত কিছু করা হবে । একে একে সব পালন করা হচ্ছে।
কিন্তু এই মানতগুলোর ভণ্ডামি খুব সহজেই তার চোখে পড়ে। মানত করা হচ্ছে ঈশ্বরের নামে। যেমন খাশি বলি, পায়েস, মিষ্টান্ন ইত্যাদি ঈশ্বরকে উৎসর্গ করা হচ্ছে অথচ পূজার পর সবাই মিলে খাচ্ছে তারা নিজেরাই। তাহলে এইসব পূজার্চনার মানে কি? সবই কি লোকদেখানো নয়?
সবচেয়ে তার মেজাজ খারাপ হয় "পুরুত ঠাকুর " এর উপর । এই লোক কয়টা মন্ত্র পড়ে প্রায় বিনা পরিশ্রমে একগাদা টাকা পারিশ্রমিক নেয়, শুধু কি তাই !! পূজা পড়ানোর আগে ও পরে সে নির্লজ্জের মত নিজের ব্যাগ ভর্তি করে চাল, কলা, গামছা, ছাতা, ধুতি, পূজার প্রসাদ আর উপরি পাওনা হিসেবে পূজার পর সবাই একে একে যখন প্রণাম করে তখন সে আশীর্বাদ করার পাশাপাশি খুশি হয়ে দক্ষিণা গ্রহণ করে।
একবার একজন তো দক্ষিণা কম হয়ে যাওয়ার কারণে দশকথা শুনিয়ে দিয়েছিল । সুকান্তর খুব ইচ্ছা হচ্ছিল তখন টাকলু ব্রাহ্মণটার টাকে একটা কদবেল ফাটিয়ে দিতে।
অবাক করা কাণ্ড হল, পূজা পড়িয়ে এত লাভ অথচ পুরুত হওয়ার জন্য কোন যোগ্যতা লাগে না, শুধু ব্রাহ্মণ হলেই হল। আর এটাও সবাই জানে যে, যাদের দিয়ে লেখাপড়া ও কায়িক পরিশ্রম কোনটাই হয় না তারাই উপাসনালয়ে যাজক হয় শুধুমাত্র বর্ণপ্রথার জোরে । লক্ষণ সেনের এই অন্যায্য বর্ণপ্রথা সুকান্ত কিছুতেই মন থেকে মানতে পারে না, কিন্তু সমাজ তাকে মানতে বাধ্য করে।
পাড়ায় যে সব পরিবার উচ্চবর্ণের তাদের বেশ কিছু ব্যবহার তার চোখে পড়ে। ব্রাহ্মণরা কখনও তাদের বাড়িতে আসলেও খাবার জল পর্যন্ত স্পর্শ করে না। সে কখনও ব্রাহ্মণদের বাড়িতে গেলেও তারা কেমন যেন অস্পৃশ্য ভাব করতে থাকে। সুকান্ত মনে মনে ভাবে, এর চেয়ে ওই মুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা অনেক ভাল ছিল।
সুকান্তকে তার বাবা ফার্স্ট হওয়ার জন্য বল ব্যাট কিনে দেয় ।
কিন্তু বাড়ির বাইরে খেলা নিষেধ । সে বলে " বাসায় এত বড় বারান্দা আছে কিসের জন্য? এখানে প্রাকটিস কর। " সুকান্ত যে লুকিয়ে দু একবার বাড়ির বাইরে বের হয় না তা না। বাবা বাইরে গেলে সে প্রায় ই বের হতে শুরু করে। একদিন লুকিয়ে বাইরে খেলার সময় বল পড়ে যায় নোংরা ড্রেন এ।
এমন সময় বাবা সেখানে হাজির! আর যাবে কোথায় ! কান ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে যায় ঘরের মধ্যে । বাঘের মত গর্জন করে বলে "পই পই করে বলেছিলাম বাড়ির বাইরে না খেলতে। এরপর যদি দেখতে পাই তবে মেরে তক্তা বানিয়ে দেব । " সুকান্ত জানালার গ্রিল ধরে কাদতে থাকে। তার বলটা তোলার জন্য পাশের ডোমপল্লী থেকে একটা ছেলেকে ডেকে আনে তার বাবা।
ছেলেটা বল তুলে ভালভাবে ধুয়ে দেয়। বিনিময়ে বাবা তাকে দুই টাকা ধরিয়ে দেয়। ছেলেটাও খুশিমনে বিদায় নেয়। সুকান্তর মন খারাপ হয়ে যায় , ডোমরাও তো মানুষ তাই না! যে কাজ আমরা করতে ঘৃণা করি তা কেন তাদের দিয়ে আমরা সস্তায় করিয়ে নেই। সুকান্ত অপরাধবোধ করতে থাকে।
একজন লক্ষ্মী(!) ছেলের স্বরূপকাহন -১
(......চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।