আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বদলে গেছে রামু

সাম্প্রদায়িক হামলার বছর ঘুরে আসার আগেই বদলে গেছে রামু-উখিয়ার বৌদ্ধপল্লী। হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক বৌদ্ধ বিহারগুলো এখন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হামলায় বিধ্বস্ত ১৯টি বৌদ্ধ মন্দির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মাত্র আট মাসে নতুনভাবে জেগে উঠেছে। যেখানে টিনশেড স্থাপনা ছিল সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে দোতলা কিংবা তিন তলা নতুন মন্দির। অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলো করা হয়েছে সংস্কার।

পুরনো স্থাপনায় নতুন ও স্থায়ী মন্দির পেয়ে খুশি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা বলেছেন, আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কাজ করেছে সরকার। সরকারের প্রতি আমাদের অনেক কৃতজ্ঞতা।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সাম্প্রদায়িক হামলায় বিধ্বস্ত রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধ বিহারগুলো পুনর্নির্মাণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো তৈরি করায় ভিন্নমাত্রার এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

পর্যটন সম্ভাবনা মাথায় রেখে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের পাশাপাশি অধিকাংশ স্থানে চমৎকার ল্যান্ডস্কেপিং, প্রতিরক্ষা দেয়াল, গার্ডেনিং করা হয়েছে। ফলে হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য পেরিয়ে নতুন ইতিহাসের সূচনা করেছে রামু-উখিয়ার বৌদ্ধ অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো।

উদ্বোধনের পর থেকেই দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধ বিহারগুলো। সেন্ট মার্টিন বা কঙ্বাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি পর্যটকরা ঘুরে যাচ্ছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিহারগুলোয়। সেই সঙ্গে পুণ্যার্থী ও পূজারীদের আনাগোনায় সরব হয়ে উঠেছে বৌদ্ধপল্লী।

চলছে নিয়মিত পূজা, অর্চনা, আরাধনা। বুধবার পুনর্নির্মিত রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা বিহার, রামু মৈত্রী বিহার, উঃ মংরি (লালচিং) বৌদ্ধ বিহার এবং সংস্কার করা সাদা চিং বিহারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকে শত শত মানুষ পরিবারের ছোট বড় সদস্যদের নিয়ে বৌদ্ধ মন্দিরগুলো দেখতে আসছেন। ঐতিহ্য ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে পুনর্নির্মিত বৌদ্ধ বিহারগুলো এখন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষকেও টানছে। স্থাপনাগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিহারগুলো নতুন আঙ্গিকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত। প্রতিটি বিহারে গ্রামবাসী সমবেত হয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছ থেকে পঞ্চশীল গ্রহণ করছেন।

বিহারগুলোয় পূজা, বন্দনা ও উপাসনা পুরোদমে চলছে। আগের মতো দেশ ও বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হচ্ছে।

রামুর এক যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার ছবি নিয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উগ্র মৌলবাদীরা রামুর বৌদ্ধপল্লীতে তাণ্ডব চালায়। রামুর ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধদের ২৬টি বাড়ি লুটপাট শেষে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া উখিয়ায়ও সাতটি বৌদ্ধ মন্দিরে তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা।

এতে ধ্বংস হয়ে যায় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মূল্যবান বুদ্ধের পবিত্র ধাতু ও তালপাতায় লেখা হাজার বছরের প্রাচীন পবিত্র ত্রিপিটক। লুট করে নিয়ে যায় প্রাচীন বুদ্ধমূর্তিসহ অনেক মূল্যবান প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন। ঘটনার পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিহার ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের স্থাপনাগুলো পুনর্নির্মাণের ঘোষণা দেন। সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অরগাইনাইজেশন (চট্টগ্রাম) ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯টি স্থাপনা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করে দেয়। এদিকে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহারগুলো নির্মাণ করায় এরই মধ্যে রামু পর্যটননগরীতে পরিণত হয়েছে।

তাই পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে পর্যটন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে অল্প সময়ে সুষ্ঠুভাবে বিহারগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করায় ৩ সেপ্টেম্বর বিহার উদ্বোধনের সময় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেনা সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অসাধ্যসাধন করেছেন। আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার কারণে মাত্র আট মাসের মধ্যে এসব বিহারের কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়েছে।

রামু-উখিয়ার বৌদ্ধ বিহার পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উদ্বোধনের পর থেকেই বিহারগুলোয় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করছেন।

পর্যটক আকর্ষণে এ স্থাপনাগুলোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। স্থাপনাগুলো সব ধর্মের মানুষকে আকর্ষণ করছে।

অফসিজনে পর্যটক ডাকছে কক্সবাজার

এদিকে পর্যটননগরী কক্সবাজারে এখন পর্যটনের অফসিজন চলছে। সরকারি সংস্থা পর্যটন করপোরেশনের চারটি হোটেল-মোটেলে ব্যানার টানিয়ে ৪০% হ্রাসে পর্যটক ডাকা হচ্ছে। একটা সময় ছিল পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে থাকার জায়গা পাওয়া যেত না।

এখন বেসরকারি খাতে দেড় শতাধিক হোটেল তৈরি হয়ে একটি বিকশিত পর্যটননগরীর রূপ পেয়েছে কঙ্বাজার। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বেহাল মহাসড়কের কারণে রাস্তায়ই ভ্রমণের আনন্দ মাটি হয়ে যায়। সে জন্য এখন খাঁখাঁ করছে হোটেল-মোটেলগুলো। অফসিজনে তারাও অনেক বেশি ছাড় দিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বললেন, ১ হাজার ৯০০ টাকা বাসভাড়া দিয়ে ঢাকা থেকে ১০ ঘণ্টায় কক্সবাজার পৌঁছেছি।

এভাবে আসা-যাওয়ায় দুই দিন চলে গেলে বেড়ানোর আনন্দটা রাস্তায়ই শেষ হয়ে যায়। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানগুলো আরও কম রেটে যাত্রী পরিবহন করলে এ রুটে তারা বড় বিমান চালাতে পারবে। এটি কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশেও ভূমিকা রাখবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.