[অন্যর দোষ না খুঁজে আগে যদি সবাই নজের দোষটা খুঁজত তাহলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত]............... [পথের শেষ নেই, আমার শেষ আছে, তাইত দ্বন্দ্ব] http://mamunma.blogspot.com/
যখন কিছুই ভাল লাগেনা, ভাল লাগেনা একাকীত্বও।
অথচ এই একাকীত্বের প্রেমে পড়েই সেই সেবার বসন্তের বাতাসে একা দাঁড়িয়ে ছিলাম বেড়ি বাঁধের সেই কোনাটাতে। হিমেল বাতাসে উড়ছিল লাল ওড়না । তাকিয়ে ছিলাম। চোখে ঝরছিল তার সদ্য বেদনার জল।
সে চলে যাচ্ছিল আমার কাছে চূড়ান্ত প্রত্যাখিত হয়ে। একাকীত্ব আমাকে সেদিন এতই উদ্বেল করেছিল , তার চোখের সে বিরহ কান্নার জল একটুও আলোড়িত করেনি। মনেই পড়েনি এই এখানেই এই বাঁধের উপর দাড়িয়ে আরও মাস ছয়েক আগে এক মেঘলা বিকেলে ও নারীই আমাকে বলেছিল ভালবাসার অমোঘ বাণী। তারপর দ্বৈত মুহূর্ত কত কেটে গেছে এখানেই এই নির্জনে। সরল বিশ্বাসে হাতে হাত সমর্পন তার কখন যে ঠোঁটের সমর্পনে পৌঁছেছিল ভাবার সময়ই ছিলনা কারও।
ওর বিয়েটা ভাঙার সাহস হয়নি, যদিও ও সাহসে কোমল হৃদয় ভরিয়েই এসেছিল আমার কাছে। কেঁদেছিল মনের সরোবর উজাড় করে। বেশী কিছু বলতে হয়নি। কেবল বলেছিলাম, এখনও মনে পড়ে স্পষ্ট, আমি ভালবাসি একাকীত্ব, বিয়ে দূর সেতা ভাবিইনি। বন্ধু হলে থাক।
চলে গিয়েছিল। একাকী বাতাসে সুখ খুঁজে নিয়েছিলাম।
আজ কিছুই ভাল লাগেনা। ঢাকায় সকাল থেকে দুপুর চাকুরী করে কেটে যায় দিনের পর দিন। ছুটির দুদিনে ছুটে যাই চিরচেনা সেই বেড়ি বাঁধের ধারের আপন নিবাসে আমার চেনা মফস্বলে যখন আজকাল , বিস্তর একাকীত্ব আমাকে তুষ্ট করতে ছুটে আসে।
ভাল লাগেনা। মনে হয় এ একাকীত্ব যেন আমার নয় , এ যেন কারও চোখ হতে ঝরে পড়া কান্নার দান। দানের একাকীত্ব কি আর আপন হয়। সে তো প্রভুর গুনকীর্তনই করে বারংবার। সেতো দৃষ্টিতে ফুটিয়ে তোলে কেবলই লাল ওড়না উড়তে থাকা এক দৃশ্য।
এক নারীর অবনমতি মাথায় হেঁটে চলেছে কাঁদতে কাঁদতে।
স্মৃতিতে আজকাল কেবলই ভেসে ওঠে সেই নারীর মুখ। সেই নারী আমার একাকীত্ব চুরি করে নিয়েছে আমৃতু্য। মনের সাগরে আজকাল স্পষ্ট ঠাওর করি এক ভালবাসার বিলম্ব আলোড়ন ।
দেখা হয়ে যায় কদিন আগে এক শুক্রবারে।
দাঁড়িয়েছিলাম সেই কোনায় বেড়ি বাঁধের। একাকীত্ব খুঁজছিলাম বরবারের মতো। আর বিফল হচ্ছিলাম। ওর সাথে ছিল এক বয়স্ক যুবক। আমার চেয়ে অন্তত দশ বছর বেশী তো হবেই।
দামী পজেরোটা পার্ক করেছিল বাঁধের নিচে পাকা রাস্তার ধারে। নীল শাড়ি পরে ছিল। হেঁটে আসছিল বাঁধের উপর নদীর কিনারে। জোড়ার মাঝে কোন মানানসই মিল খুঁজে পায়নি আমার দৃষ্টি। কেতাদূরস্ত পোষাক আর দামী গাড়ি বলে দিচ্ছিল ওর অপরূপ সৌন্দর্যের যথার্থ মূল্য দেয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে ঐ বয়স্ক যুবার।
পাশ দিয়ে যাবার সময় চোখে চোখ পড়েই গিয়েছিল। সে চোখে ঘৃণা ছিল নাকি ভালবাসা বোঝার মতো যোগ্যতা আমার ছিলনা। তবে একাকীত্ব হননের ছাপ দেখেছিলাম স্পষ্ট। লতায় পাতায় সম্পর্কের ভাই পরিচয়টা করিয়েই দিয়েছিল ভদ্রতায় বড়োলোক স্বামীর সাথে। অনেক ক্ষণ কথা হলো ।
জানলাম অর্থ চিন্তায় ভরপুর হৃদয়ের একজনের বানিজ্য প্রসারের নানা কথা। জানালাম আমার তুচ্ছ চাকুরী। কথা সীমানা পাল্টেই নি। উনি তো অর্থ ছাড়া কিছু বোঝেই না।
অবাক হয়েছিলাম।
এমন একজন কাঠ খোট্টা মানুষের সাথে ভালবাসয় ভরপুর হৃদয় নিয়ে কি করে বসবাস করছে ও। তাও একই ছাদের নিচে। ভাবছিলাম কতক্ষণ আর সময় দিতে পারে দ্বিগুন বয়সী ব্যবসায়ী মানুষটা তাকে।
ফোন আসছিল বারবার । এঙ্কিউজ মি বলে দূরে গিয়েছিল একটু উনি কোন গোপন ব্যবসায়ীক আলোচনায়।
নিরব দাঁড়িয়ে একাকীত্বের বাতাস গায়ে মাখছিলাম দুজন। মনে হচ্ছিল এই তো সেই একাকীত্ব । কিছুক্ষণের জন্যে হলেও যেন আজ এসছে কাছে। নিরবতা ভেঙে এক ফাঁকে জিজ্ঞেস ও করে ফেলেছিলাম বোকার মতো , ' অনেক সুখে আছ না?' বলেছিল, ' দেখছোনা সোনা দানায় মুড়ে আছি, সুখে থাকবোনা কেনো?'
প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন ভাবিত করেছিল। বুঝেছিলাম এ সুখ নয়।
আর কোন কথা হয়নি। উনি ফিরে আসার আগ মুহূর্তটুকু আমি একাকীত্বের মাঝে ডুবে গেলাম এবং সম্ভাবত সেও ডুবে গেলো তার কাঙ্খিত দ্বৈত বোধে। কিন্তু তারপর চলে যেতেই , হাত নাড়া শেষ হতেই , সেই পুরানো ধরণ জীবনের।
কেউ একাকীত্ব খুঁজে খুঁজে আজ একাকীত্বের কাছেই পরাজিত, একাকীত্বই জাগায় কষ্টকর দ্বৈত বোধ। আর কেউ দ্বৈত মিলন, দ্বৈত বোধ খুঁজতে খুঁজতে আজ কত একা , কি ভীষন একাকীত্বে ডুবন্ত।
সবই আমার জন্যে , আমার ভুলে।
কিছুই ভাল লাগেনা আজকাল আর। আমার তাকেই যেন প্রয়োজন , প্রয়োজন তার অযাচিত একাকীত্ব।
----------
ছবিঃ আমার তোলা , মহেশখালিতে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।