সযতনে খেয়ালী!
পরীর দীঘি নামক কোন এক দীঘির ওপর একটা ছোট প্রায় ডুবতে যাওয়া নৌকা। তার ওপর দুজন আরোহী, মনের আনন্দে শাপলা তুলছে। থেকে থেকেই একজন আরেকজনের গায়ে তুলে ছিঁটিয়ে দিচ্ছে দীঘির জল। ... এতোটুকু দেখে ভালোই লাগবে, কিন্ত একটু ধাক্কা খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা লাগবে পরবর্তী অংক পর্যন্ত!
মকবুল শিকদার শিকদার বাড়ির প্রধান হর্তাকর্তা। তাঁর তিনজন বউ।
মেঝজন কোন না কোন ছুতোয় বাপের বাড়ি থেকে যায় কেবলই। ঘর-গৃহস্থালীর সব ধকল যায় বড় বউ এবং কিশোরী বউ টুনির ওপর দিয়ে। টুনি, হঁ্যা এই টুনিকে ঘিরেই বুনা হয় 'হাজার বছর ধরের' কাহিনীর একেকটা সূতা।
প্রায় দাদুর বয়সী মকবুল শিকদারের বউ হয়ে কিশোরী টুনি তাঁর স্বপ্নঘুড়ির সার্থক নাটাই খুঁজে পায় সম্পর্কে দেওর মন্তুর কাছে! ভরদুপুরে শাপলা তোলা, রাতের বেলা অন্যের পুকুরে মাছ চুরি করতে যাওয়া - সব কিছুর মাঝেই টুনি চায় সবসময় মন্তুর কাছাকাছি থাকতে।
প্রকাশ ভঙীটা একটু রক্ষণশীল হলেও মন্তুও হয়তো তাই চায়।
আর সেজন্যই টুনি যখন বাপের বাড়ি যেতে চায় মন্তুর নৌকায় চড়ে, তখন নৌকা মেরামতের দুদিনের কাজটা মন্তু একাই সারারাত ধরে হাড়ভাঙা খাঁটুনিতে সেড়ে ফেলে। সকালবেলা ধুঁকতে ধুঁকতে বাড়ি উঠতে গিয়ে হীরণকে তার 'সই মা'য়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারে টুনি বাপের বাড়ি চলে গেছে। মন্তু বুঝতে পারে টুনি অভিমান করেই চলে গিয়েছে। মনে পড়ে আগের রাতের খেদমাখা কথা, "আমিও নাইওর যাইতে চাইলাম আর তোমার নাও ও নষ্ট হইলো..."!
ইতোমধ্যে করিম শেখের বোন আম্বিয়াকে দেখে মন্তুর মনে অন্যরকম বিচলতা তৈরী হয়। সুঠাম দেহবল্লবীর অধিকারীনী আম্বিয়া যখন পুকুর থেকে গোসল সেড়ে ওঠে তখন মন্তু করিম শেখের দাওয়ায় বসা।
আম্বিয়ার ভেজা দেহের উঁচু-নিচু ভাজ খুব ভালো করে প্রত্যক্ষ করে সে। মনের মাঝে দোটানা ভাব তৈরী হয়, টুনি নাকি আম্বিয়া...।
করিম শেখ এবং তাঁর বাবার জিবনাবসান ঘটার পর 'এতিম আম্বিয়া'র সাথে মন্তুর বিয়ে ঠিক হলে টুনি তা মেনে নিতে পারে না। এক পর্যায়ে দাদুর বয়সী স্বামীকে প্রণোদিত করে আম্বিয়াকে বিয়ে করে ঘরে তুলে আনার জন্য। এই নিয়ে বিতন্ডার এক পর্যায়ে মকবুল শিকদার তার প্রথমা এবং দ্্বিতীয়া বউকে 'বাইন তালাক' দিয়ে দেয়।
এতে মকবুল শিকদারের ছোট ভাই পিঁড়ি তুলে ছুড়ে মারে তার কপালে 'বেয়াক্কেল জানি কোনখানকার' বলে। অবশ্য ছোট ভাই ও চাইছিলো আম্বিয়াকে সে বিয়ে করবে!
দুয়েকদিন ভুগে টুগে মকবুল শিকদার রওনা দিলো তাঁর পূর্বপুরুষদের দিকে। বড় এবং মেঝো বউ চলে গেছে সেই তখনই। টুনির ভেতর অন্তর্দহন বেড়ে গেলো সংসারটাকে অগোছালো করে দেবার জন্য তাও একটা অন্যায় সম্পর্কের কারণে! চপলা টুনি প্রচন্ড গম্ভীরতায় মন্তু কে বলে তাকে বাপের বাড়ি রেখে আসতে।
মন্তুর নৌকা এগিয়ে চলে পরীর দীঘির শান্ত জল কেটে।
মাঝে শান্তির হাট পড়ে সামনে। মন্তুর চোখ জ্বলে ওঠে। এই শান্তির হাটেই সে টুনিকে রেশমী চুড়ি কিনে দিয়েছিলো, টুনির আব্দারের কাছে হার মেনে তাঁকে যাত্রা দেখাতে হয়েছিলো। যাত্রার সময়টাতে ভীত টুনির বাহুর আবদ্ধে ছিলো মন্তু। ফেরার পথে হাজিকে কথা দিয়েছিলো অন্য কোন একদিন 'বউ'কে নিয়ে তার বাড়িতে বেড়িয়ে যাবে...।
উৎসাহী মন্তুর আনন্দে ভাঁটা পড়ে সাদা শাড়ি পড়া টুনির ধীর বাক্যে। 'এইটা আর সম্ভব না মিয়া...'।
নৌকা ঘুরতে থাকে দীঘির মাঝখানে, সূর্য ডুবে যায়, পাখীরা ঘরে ফেরে, আবারো সূর্য ওঠে নতুন দূ্যতি নিয়ে, কেটে যায় অনেক গুলো বছর...। শিকদার বাড়িতে এখনো আগের মতো পুঁথি পাঠের আসর বসে, উঠোন ভর্তি মানুষের মাঝে বড় শিকদারের জন্য চেয়ারটা পাতা থাকে। শুধু সেই চেয়ারে মকবুল শিকদার বসে না, পাশে বসে না মন্তু, দাওয়ায় হীরণের সাথে তার 'সই মা' টুনি থাকে না, থাকেনা যুবতী আম্বিয়াও...।
পরীর দীঘি এখনো আছে, সেই পুকুর গুলোও আছে তেমনি, এখনো প্রচুর শাপলা ফোটে দীঘিতে, শুধু টুনি নেই - মনতু যার জন্য শাপলা তুলতে যেতো। মন্তুর এখন বয়স হয়ে গেছে। শিকদার বাড়ির উঠোনের পর এসে থমকে দাঁড়ায় হঠাৎ সে সময়ের উপত্যকায়। এক এক করে ভেসে যেতে থাকে মুহুর্তগুলো... মন্তু মনেহয় সময় যেনো শেষ হতে চায় না, হাজার বছর ধরে যেনো তা ধেয়ে চলছে... ধেয়েই চলেছে....!
-----------------------------------
-----------------------------------
কালকে রাতে (ইনফ্যাক্ট আজ সকালে) বাসায় ফিরে 'সিম্ফনী অফ এ্যাগোনী' ছবিটার বাকি অংশটুকু দেখতে লেগে গেলাম। প্রথম অংশটার কাজ, ক্যামেরা, গল্প সবদিক দিয়ে জমে গিয়েছিলাম।
তাই দ্্বিতীয় পর্বটার জন্য ঘুম দিয়ে উঠে তারপর দেখা-র জন্য অপেক্ষা করতে পারছিলাম না আর।
জহির রায়হান, যার নামটাই নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। 'হাজার বছর ধরে'-র মতো একটা উপন্যাসের কারণেই হয়তো আমরা তাঁকে মনে রাখতাম যুগযুগ ধরে। 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাস টা কে নিয়ে তৈরী হওয়া ছবিটা দেখছিলাম। ইংরেজীতে নাম 'সিম্ফনী অফ এ্যাগোনী' , ছবিটার উপস্থাপন, কাজ, কলাকুশলীর সবার অভিনয় - নাহ্, মনটা সেডি সেডি হয়ে আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।