আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিমেল হাওয়ায়...একদিন

হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায়

[যা বলতে যাচ্ছি তা খুবই সাধারণ। অনেকের জীবনেই এমন ঘটনা ঘটে। তবে যাদের জীবনে এমনটা প্রথম ঘটে -তাদের ক্ষেত্রে এ সাধারণ ব্যাপারটিই অসাধারণ মাত্রাতে চলে যায়...... ] সকাল সকাল বাসা থেকে বের হচ্ছি দেখে ভাবী বললেন, 'কি ব্যাপার! এত সাজুগুজু করে এত তাড়াতাড়ি আজ কোথায় যাওয়া হচ্ছে?' 'এই তো এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে আসি। ' আমার উত্তরে ভাবী যেন সন্তুষ্ট হলেন না। কেমন একটা রহস্যময় হাসি দিলেন।

কাল মাঝরাতে যখন মোবাইলে কথা বলছিলাম ভাবী তা শুনে ফেললেন নাকি? আমি আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। এখন আমাকে অনেক দূর যেতে হবে_খিলগাঁও থেকে মিরপুর। ঢাকাতে আমি তেমন একটা আসি না। তাই অপরিচিত পরিবেশে কেমন যেন অসহায়বোধ করছিলাম। এত দূর কিভাবে যাব? কিন্তু যেতে যে আমাকে হবেই।

আজ এগারটায় ওর সাথে দেখা করার কথা। মিরপুর শেওড়াপাড়া ওভারব্রিজের নীচে আসবে সে। তারপর..আপাতত জানি না। খিলগাঁও থেকে ম্যাক্সি চড়ে মালিবাগ মোড়ে পৌছালাম। তারপর একটা বাসে চড়ে বসলাম।

এটা যাবে ফার্মগেট। আমি জানালার পাশে বসেছিলাম। এত মানুষ, এত ছুটোছুটি! কেমন যেন কান্তিকর মনে হচ্ছিল। ফার্মগেট এসে পড়লাম ঝামেলায়। এখন মিরপুর কিভাবে যাব-তা তো জানি না।

শেষে এক পান বিক্রেতা বললেন, '10 আর 11 নম্বর বাসগুলো মিরপুর যায়। ' বাসে উঠে এবার আর বসার জায়গা পেলাম না। এক হাত দিয়ে মাথার উপরের হাতল ধরে রইলাম। অন্য হাতে পকেট শক্ত করে চেপে ধরলাম পাছে যদি পকেট কাটা যায়! এবারের ড্রাইভার বেশ রসিক মানুষ মনে হল। সে গান বাজাচ্ছিল, 'গুলশান, বনানী আবার জিগায়... তেজকুনিপাড়ায় হালায় আবার জিগায়...।

' শেওড়াপাড়া পৌছে দেখি ঘড়িতে পৌনে এগারটা বাজে। আরো এখনো পনের মিনিট বাকি। কি করা যায়? ওকে একটা ফোন দিলাম, হ্যালো হিমেল! আমি তো চলে এসেছি। -চলে এসেছেন। কোথায় আপনি? -এই তো তোমাদের বাসার গলির ভেতর হাঁটছি।

-কি? যান যেখানে দাঁড়ানোর কথা সেখানে গিয়ে দাঁড়ান। আমি পনের মিনিটের মধ্যে আসছি। অজানা অচেনা জায়গায় কারো জন্য অপো করাটা যে কতখানি বিরক্তিকর তা বলে বোঝানো যাবে না। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। শেওড়াপাড়া বাজার থেকে হেঁটে ওভারব্রিজ পর্যন্ত এলাম।

আবার উল্টো পথে গেলাম। একটু পরে সে এল। বাহ! গতবারের তুলনায় এবার সে অনেক সুন্দর হয়েছে। চুলও বড় হয়েছে। -কি খবর? কেমন আছ? -ভাল।

আপনি? -এই তো। -তারপর কোথায় যাবেন? -আমি কিভাবে বলব? আমি তো এখানকার তেমন কিছুই চিনি না। তুমি যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানেই যাব। এসব ঘটনায় সাধারণত ছেলেটা মেয়েটাকে পথ দেখায়। আমার েেত্র ঘটল উল্টোটা।

হিমেলই চালকের আসনে বসল। আমরা মিরপুর বাঁধের উদ্দেশ্যে রিকশা নিলাম। রিকশার পেছন রিকশা। গাড়ির পেছন গাড়ি। হাজার মানুষের ছুটে চলার মাঝে আমদের রিকশাও এগিয়ে চলল।

দুজনই চুপচাপ। হঠাৎ কেমন যেন সিনেমাটিক ডায়ালগ দিয়ে ফেললাম, তুমি না আগের চেয়ে সুন্দর হয়ে গেছ..অনেক সুন্দর। -কি যে বললেন! মুখে পিম্পলে ভরে গেল। আর আপনি বলেন সুন্দর! সত্যি বলতে কি সেদিন ওকে আসলেই সুন্দর লাগছিল। বলতে দ্বিধা নেই ওর চোখ দুটো আমাকে যেন চুম্বকের মত টানছিল।

ইচ্ছে হচ্ছিল ছুঁয়ে দেখি! আরেকটা জিনিস অনুভব করলাম। এর আগেরবার যখন ও আমার সাথে রিকশায় উঠেছিল তখন আমাদের মাঝে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি দূরত্ব ছিল। অথচ আজ সেটা নেই। মিরপুর বাঁধ আমার কাছে আজব জায়গা বলে মনে হল। শুধু জুটি আর জুটি।

রিকশায় জুটি। রাস্তায় জুটি। পার্কে জুটি। হঠাৎ এক লোক বলল, মামা সইওয়ালা নৌকা আছে। আসেন আপুরে নিয়া নৌকাই ঘুইরা আসেন।

আমি বললাম, নৌকায় উঠবে? হিমেল আমাকে এক বাক্যে না-করে দিল। আমরা বাঁধের উপর বসলাম। সামনে শুকনো নদী। নদীর পাড় ঘেষে ধানের চারা লাগানো হয়েছে। একটা ছোট কার্গোকে দেখলাম ঘুরে ঘুরে বালি তুলছে।

-তারপর কি অবস্থা? কি খবর? আমি বললাম। -কি আর খবর হবে? প্রতিদিনই তো আপনার সাথে কথা হয়। সবই তো জানেন। নতুন কোন খবর নেই। এরপর কি বলব বুঝতে পারছিলাম না।

আসলে এখানে আসার আগে মনে হয়েছিল ওকে সামনে পেলে কথার ঝড় বইয়ে দেব। অথচ এখন বলার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। আমি বললাম, মোবাইলেই তোমার সাথে গল্প জমে। এখন কেমন যেন লাগছে। -আচ্ছা ঠিক আছে।

যান দূরে যেয়ে আমাকে কল দেন আমি রিসিভ করছি। আবার কিছুণ চুপচাপ বসে থাকি। -আচ্ছা তুমি আমাকে আর কতদিন 'আপনি' করে বলবে? আমার এসব আপনি-টাপনি আর ভাল লাগছে না। প্লিজ 'তুমি' করে বল। প্লিজ।

-আচ্ছা বাবা বলব, বলব। পরে বলব। গান শুনবেন। নেন গান শুনেন। হিমেল তার এমপিথ্রি প্লেয়ারের হেডফোনের একটা কড আমার কানে ভরে দিল।

অন্যটা নিজের কানে রেখে দিল। মাহামুদুজ্জামান বাবুর গান বাজছে, আমি বাংলার গান গাই। আস্তে আস্তে সূর্যের তাপ বাড়তে লাগল। এমনিতেই আমার মাথায় চুল কম। তারপর এমন খোলা জায়গায় সরাসরি সূর্যের আলো।

মাথা ঝিমঝিম করা শুরু করল। ওর অবশ্য তেমন একটা লাগল না। কারন আমাকে দিয়ে সূর্যকে আড়াল করে সে বসেছিল। বসুক। বেশিণ সূর্যের আলোয় থাকলে আমার হাত-পা কাঁপতে থাকে।

যাক তারপরও ওকে আড়াল করে রাখারই চেষ্টা করলাম। কেননা আমি যে ওকে ভালবাসি, ভীষণ ভালবাসি। হঠাৎ ওর হাত ধরলাম। এক ঝটকায় ও হাত ছাড়িয়ে নিল। একটু কষ্ট পেলাম।

নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, এটা ঠিক না। এটা ঠিক না। কিন্তু পারলাম না। পরে যে কখন আবার ওর হাত ধরে ফেলেছিলাম তা নিজেই টের পাইনি। এভাবে কতণ যে ওর হাত ধরে ছিলাম তা বলতে পারব না।

দুপুর হয়ে এলে আমার জায়গা পরিবর্তন করলাম। একটা পুকুরের পাশে গাছের নিচে ছায়ায় গিয়ে বসলাম। সত্যি বলতে কি সারাদিন আমাদের তেমন একটা কথা হল না। শুধু চুপচাপ পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে বসে থাকা হল। বেশিরভাগ সময়ই আমি বেহায়ার মত ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

ও প্রায়ই বলছিল, দ্যাখেন, এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। আমার ব্যাপারটা ভাল লাগে না। কিন্তু আমি কি করব? আমি যে কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছিলাম না। শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল। দূরে দেখলাম, আমাদের মত এক জোড়া বসে আছে।

হঠাৎ ছেলেটা মেয়েটাকে জোর করে ধরে একটা কিস দিয়ে দিল। মেয়েটা রাগ করে উঠে গেল। ছেলেটা 'সরি, সরি' বলতে বলতে তার পেছন পেছন ছুটল। আজকের দিন আমার কাছে বছরের সবচেয়ে ছোটদিন বলে মনে হচ্ছিল। এত তাড়াতাড়ি বিকাল হয়ে গেল! ইচ্ছে হচ্ছিল না ফিরে যাই।

তবুও ফিরতে হল। হিমেল রিকশা নিয়ে বাসায় চলে গেল। আমি শেওড়াপাড়া বাজারের সামনে নেমে গেলাম। আবার সেই ফেরার পালা, আবার সেই বাস, 'গুলশান, বনানী আবার জিগায়... তেজকুনিপাড়ায় হালায় আবার জিগায়...।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.