হীরক রাজার দেশে যে সময়ের ধারাবাহিকতায় নির্মিত হয় ঠিক একই রকম একটা উটকো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানে। জরুরী অবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে। বর্তমান নির্দেশনা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রায় ঐশ্বরিক একটা আবহ নিয়ে এসেছে- কোনো রকম প্রশ্ন করা যাবে না, কোনো রকম মত প্রচার করা যাবে না যার রাজনৈতিক একটা ভবিষ্যত আছে। মানুষ মাত্রই রাজনৈতিক চরিত্র ধারন করে অতএব মানুষের সবগুলো আলোচনার ভিতরে কোথাও না কোথাও রাজনীতির গন্ধ আছে। মানুষ কি তবে আলোচনা বন্ধ করে দিবে?
প্রধান উপদেষ্টা তার উদ্্বোধনী ভাষণে যা বলেছিলেন তা থেকে আচমকা সরে এসেছেন।
যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার সংবাদ পত্রের স্বাধীনতার সীমিত লঙ্ঘন হবে অনুমান ছিলো সেখানে এখন ভয়ংকর একটা নির্দেশ জারি হয়েছে। এবং এই আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য দ্্রুত বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অবশ্য আমার মূল প্রশ্ন আসলেই বাংলাদেশে জরূরি আদেশ জারীর বাস্তবতা আছে কি না? রাজনৈতিক সমাবেশের উপর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারীর কোনো প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি না? তত্ত্ববধায়ক সরকার কোন ধরনের প্রতিরোধের আশংকা করছেন? তাদের পরবর্তি সিদ্ধান্ত কি কোনো না কোনো ভাবে জনরোষ উস্কে দিবে এমন আশংকায় তারা শঙ্কিত? রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিরোধ করতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত কি তত্ত্ববধায়ক সরকার নিতে যাচ্ছেন? তবে যদি তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেয় যা জনস্বার্থ বিরোধি সে পদক্ষেপের বিপক্ষে উঠা গনউত্থানকে কি তত্ত্ববধায়ক সরকার সামাল দিতে পারবে?
যদিও স্পর্শকাতর একটা সময়ে নিষিদ্ধ সম্পদকীয়র মতো এ লেখা লিখছি তবে এর পরও আমার বিশ্বাস সমালোচনার অধিকারটা আমার আছে। এখানে আমি নিজস্বমতামত প্রকাশ করি যা আমি নিজস্ব পরিমন্ডলেও করতে পারি, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আমি তত্ত্ববধায়ক সরকারের সমালোচনা করতে পারলে যেখানে আমি ভাবনা লিখে রাখি সেখানে আমি কেনো তত্ত্ববধায়ক সরকারের সমালোচনা করতে পারবো না কেনো? ব্যক্তিগত জার্ণালে আমি কেনো আমার অসন্তোষ লিখতে পারবো না?
তত্ত্ববধায়ক সরকারের এমন উদ্ভট সমালোচনার অধিকার কেড়ে নেওয়ার স্বেচ্ছাচারিতা অনেকটা স্বৈরতান্ত্রিক এবং এসব উপাদান থাকে একনায়কতান্ত্রিক আবহতে। এর জন্য তত্ত্ববধায়ক সরকারের সমালোচনা করার প্রয়োজন আছে।
তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য সহায়ক হতে পারে এমন যেকোনো বিধিনিষেধ আমি নিজস্ব বিচারে মেনে চলতে আগ্রহী তবে নীতিগত ভাবে অগনতান্ত্রিক কোনো অনাচারের প্রতিবাদও করতে চাই আমি। তাদের এউ কর্পোরেট রীতিতে দেশ পরিচালনা করার সমালোচনা করা প্রয়োজন। কোনো একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো দেশ চলতে পারে না। এমন স্বৈরতান্ত্রিকতা আদতে অহেতুক নিপীড়ন বয়ে আনতে পারে। আর সরকারি প্রেসনোটগুলো স্বভাবতই অপূর্ণ এর প্রযোজ্যতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্টতা না থাকার দরুন আমার অধিকারের সীমারেখা যখন আমি নিজে নিশ্চিত নই তখন সে সংক্রান্ত আলোচনার প্রয়োজন নেই এমন অহেতুক ভীতিতে জীবনযাপনের কোনো অর্থ নেই।
তত্ত্ববধায়ক সরকার ঠিক কোন ধরনের প্রশাসনিক রীতি চালু করবেন? প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিক নিশ্চিত ভাবেই এই 11 জন মানুষের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নন। তাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত তা পালনের জন্য এমন কোনো কঠোরতার প্রয়োজন নেই। আদৌ নেই- যেকোনো সুস্থ চিন্তার মানুষ একটু বিশ্লেষন করলেই এ সত্যে উপস্থিত হতে পারবেন। মহাজোট যে দাবিতে গনআন্দোলন করছিলো সে আন্দোলনের বৈধ্যতা দিয়েছেন ইয়াজউদ্দিন সাহেব তার সর্বশেষ প্রদত্ত ভাষনে। এখন তারা আর কোনো রজানৈতিক কর্মসূচি দিবে না।
চার দলীয় জোট নিজেও অগ্রহনযোগ্য কোনো কর্মসূচি দিবে না এখন। এবং দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যে রকম ছিলো তেমনই আছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার কোনো যথাযোগ্য কারন না থাকা সত্ত্বেও সুশীল সমাজ এটাকে মেনে নেওয়ার জন্য একটা চাপ সৃষ্টি করছেন এখন।
রাষ্ট্রকতৃক নির্মমতা বাদ দিলে আসলে স্বাভাবিক জীবনে যেমন প্রচলিত অব্যাবস্থা তা সংশোধন ও নিরাময়ের জন্য জরুরী অবস্থার কোনো প্রয়োজন নেই। এবং এই অপ্রয়োজনীয় একটা ব্যাবস্থা বা অবস্থা তারা কিভাবে অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন? কেনো নিলেন? সংশয়উদ্্রেক কারী আচরন তারা কেনো করছেন?তাদের গৃহীত নীতিমালার কোনো স্বচ্ছতা নেই কেনো? তারা কোন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন এটা বলতে এত ঢাকঢাক গুরগুর কেনো? তাদের আচরনে মনে হচ্ছে তার ভীত, ভীষন ভাবে ভীত।
কিন্তু এমন অহেতুক ফোবিয়া কিসের জন্য? কিংবা এই ফোবিয়া কেনো জাগলো এটা বোঝার কোনো উপায় নেই।
তবে তত্ত্ববধায়ক সরকারের সামপ্রতিক কর্মকান্ডে স্পষ্ট তারা ভীষনরকম ভীত সন্ত্রস্ত, তারা নিজস্ব আচরন নিয়ে সংশয়ী বলেই হয়তো এই অহেতুল শঙ্কা তাদের ভেতরে। যদি তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেয় যা তাদের ভাবমুর্তি নষ্ট করবে তাহলে এতসব বিধিনিষেধ দিয়েও সেই ভাবমুর্তির ক্ষতি তারা সামাল দিতে পারবে না। কিন্তু তারা কিজন্য এমন আশংকা করছেন যে তাদের প্রতি বিদ্্রুপ বর্ষিত হবে কিংবা তারা ব্যাঙ্গের মুখোমুখি হবে এমন একটা অহেতুক শঙ্কা কেনো তাদের ভেতরে?
সন্দেহ গাঢ় হয় এসব অসচ্ছ আচরনের জন্য। তারা যতবেশী নিজেদের আড়াল করবেন যত বেশী অসচ্ছতা আনবেন আচরনে ততবেশী সংশয় জন্ম নিবে।
তারা হয়তো নিজস্ব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের খুবই দক্ষ ব্যাবস্থাপক তবে একটা প্রতিষ্ঠান চালানো আর একটা দেশ চালানোর ভেতরে বিস্তর ফারাক। এই বিষয়টা যত তাড়াতাড়ি তারা উপলব্ধি করবেন ততই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।
তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে তারা সচেতন তাদের আচরনে এমন প্রতীয়মান হচ্ছে না। মিডিয়ার কল্যানে তাদের মুখ প্রতিনিয়ত জনগনের সামনে আসছে। তারা একই রকম কথা বলছেন নিয়মমতোই তবে তাদের সামগ্রিক গৃহীত পদক্ষেপে তেমন সদিচ্ছা নেই।
তাদের দায়িত্ব আসলে কি, অহেতুক তোষন বাদ দিয়ে , সুশীল সমাজের ধারনা প্রচারকারীএবং বিপননকারী বিভিন্ন সাংবাদ মাধ্যমের আসলে টা পরিস্কার করে বলা উচিত। তারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত এবং সুশীল ঘারানার বলে তারা পরস্পর যোগাযোগ করতে পারবেন সফল ভাবে।
তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব দেশকে গনতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়া। গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে সুসংহত করা, তারা নিরপেক্ষ এবং গ্রহনযোগ্য একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করা , এবং এই নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য প্রয়োজন নির্বাচন কমিশনের সংস্কার। তারা এই একটা কাজ গত এক সপ্তাহ ধরে অবহেলায় ফেলে রাখছেন।
বিবৃতি দিচ্ছেন গনমাধ্যমে, কিন্তু যেহেতু অনেক অনেক কথা হচ্ছে এবং কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না তাই আন্তরিকতা নিয়ে একটা প্রশ্ন চলেই আসছে।
ভোটার আই ডি না জাতিয় পরিচয় পত্র এ নিয়ে অনেক দিল ছেলে খেলা হলো, অবশেষে এখন নিশ্চিত ভোটার আই ডি হবে। নিশ্চিত ভাবেই কোনো একটা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে এটার দায়িত্ব দেওয়া হবে। দেশের ভেতরে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান কেনো নেই এটা নিয়েও প্রশ্ন করা যাবে না, কারন এটাও আসলে কোনো না কোনো ভাবে তত্ত্ববধায়ক সরকারের কর্মকান্ডের বিরোধিতা করা। কিংবা সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা, 21শে জানুয়ারী আজিজ পদত্যাগ করার পর নির্বাচন কমিশন এখন ঘোড়া ছাড়া জুরি গাড়ি, অথচ নতুন একটা নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ না দিলে যে নির্বাচন কমিশন কোনো ভাবেই ক্রিয়াশীল নয় এই বিবেচনাটা তাদের নেই।
তারা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ভাবছেন? যতদিন গ্রহনযোগ্য একটা প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগপ্রাপ্ত না হবে ততদিন ভোটার টালিকা সংশোধন, ভোটার আই ডি প্রদান এসব কাজের নির্দেশ দেওয়া যাবে না। তিনি যদি কোনো যোগ্য লোক খুঁজে না পান তাহলে কি অনির্দিষ্ট কাল এই একই কুমির ছানা দেখিয়ে তারা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন না। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না?
তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবেন, ভারপ্রাপ্ত লোকগুলো বেহায়া নির্লজ্জ নির্বোধ, তাদের সাংবিধানিক পদ থেকে পদত্যাগের অনুরোধ করতে পারেন, করেছেন এবং তারা যখন পদত্যাগ করছেন না তখন তারা রাষ্ট্রপতির কাছে আব্দার জানিয়েছেন। এখনও আইন উপদেষ্টা কেনোপ্রচলিত আইনে জনস্বার্থক্ষুন্ন করার অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য এবং তাদের পদত্যাগে বাধ্য করানোর জন্য সুপ্রিম কোরথটকে অনুরোধ করেন নি। এসব নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় প্রায় অবহেলিত, গত 1 সপ্তাহ ধরে এমনটাই চলছে।
তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক নন এমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। যোগ্য পরিস্থিতির উদ্ভব হয় নি, জরুরী অবস্থা জারি করতে হবে, কঠোর করতে হবে, এসব একই কুমির ছানা বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখানোর চেয়ে একটা নির্বাচনমুখী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তাদের।
এমন অহেতুক কালক্ষেপন করেছিলো বলেই অবরোধ সহ যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি দীর্ঘায়িত হয়েছইলো। কোনো এক অজ্ঞাত কারবে বর্তমান তত্ত্ববধায়ক সরকারের ঘাড়ে চেপে আছে ইয়াজউদ্দিনের ভুত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।