বেঁচে থাকার খুব বেশি যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আমার ছিল না। তাই, যখন মরে যাবার চিনত্দাটা মাথায় এলো, একেবারেই অবাক হইনি। আট মাস আগে চাকরি খুইয়েছি, দুইমাস হলো প্রেমিকা। সারাদিন রাসত্দায় ঘুরি। প্রথম প্রথম বেশ লাগত, দসত্দয়ভস্কির উপন্যাসের সব চরিত্রই এমনটি করে।
কিন্তু ঐ যে, রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন, "বিধাতার রাজ্যে ভাল জিনিস যত কম হয় ততই মঙ্গল, নাহলে ভালর ভীড়ে ভালটাই হয়ে যাবে মাঝারি। " একসময় সেই ভালটাই বোর লাগতে শুরু করল। প্রতিদিন একই রুটিন, একই প্রত্যাশা নিয়ে পত্রিকার রাশিফল দেখা, একই স্বপ্ন, একই সম্ভাবনা - প্রাপ্তিটুকুই শুধু নেই।
তাই, একদিন হুট করেই সিদ্ধানত্দটা নিয়ে ফেললাম। কী আশ্চর্য, মরে যাবার দিনণ যখন প্রায় ঠিক করে ফেলেছি, তখন থেকেই জীবনটাকে আশ্চর্য রকমের ভাল লাগতে শুরু করল।
বিছানায় ফেলে রাখা আমার আধাভাঁজ করা কম্বল, এ্যাসট্রে উপচে পড়া ছাই, আধ ইঞ্চি ময়লা জমে যাওয়া কীবোর্ড, চায়ের কাপ বেয়ে সারি বেঁধে চলতে থাকা পিঁপড়ে সব সব কিছু অসাধারণ শিল্পময় মনে হলো। এমনকি পাশেই কনষ্ট্রাকশন শুরু হওয়া নতুন বিল্ডিংটা - যার ইট, কাঠ, হাতুড়ির শব্দে প্রতিদিন সকালে আমার দু'ঘন্টা ঘুম বাকি থাকে - সেই আধো সমাপ্ত বিল্ডিংটার সমাপ্তি দেখে যেতে পারব না বলেও মনের মধ্যে হাহাকার শুরু হলো।
নিজেকে বোঝালাম, সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছি তার প্রতি সৎ থাকতে হবে। যে কোনো কিছু ছেড়ে যেতেই কষ্ট হয়। এটাই জগতের নিয়ম।
শার্টটা গায়ে চাপিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। ফাঁকা রাস্তা- মাঝে মাঝে একটা দুটো গাড়ি হুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি চারদিকে চোখ বুলালাম - কোণের দিকে একটা চায়ের দোকান এত রাতেও খোলা। সারারাতই খোলা থাকবে বোধহয়। আলতো পায়ে হেঁটে দোকানে এলাম।
গোল্ডলীফ? না, আজ বরং বেনসনই হোক। শেষ সিগারেট - একটু দামি হলে খুব বেশি ক্ষতি নেই।
শীত শীত লাগছে। মরে যাবার আগে মানুষ অনুভূতিহীন হয়ে যায় - কথাটা তাহলে ডাহা মিথ্যে। অনেকদূরে কতগুলো ছেলে আগুন পোহাচ্ছে।
হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে বসলাম সেখানে। নতুন অতিথির ব্যাপারে ওদের খুব একটা আগ্রহ নেই। আমি কিন্তু খুব আগ্রহভরে ওদের দেখতে লাগলাম। একটি ছেলের পা ভাঙা - এ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল বোধহয়। আর একজন ঘুমে অবচেতন - সারাদিন নিশ্চয়ই অনেক খাটাখাটনি করেছে।
সবচেয়ে ছোটটি 6 বছরের --- অন্ধ। যে জায়গায় চোখ থাকবার কথা সে জায়গায় পিং পং বল সাইজের দুটো গর্ত। আগুনটা নিভে যেতেই বন্ধ চোখদুটোর সাহায্য না নিয়ে পাশে রাখা কিছু কাগজ সে আগুনের মধ্যে ফেলল। লকলক করে আবার জ্বলে উঠল শিখা। আগুনের ওম পেয়ে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
চাওয়া নেই, পাওয়া নেই - শুধু উষ্ণতার জন্যই কি বেঁচে থাকা যায়? এভাবে?
যায় বোধ হয়। তাহলে? আরও কিছুদিন বেঁচেই দেখি না - উষ্ণতা খুঁেজ পাই কি না?
[প্রতিটি ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।