আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাপের নাচ

বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা

(বধ্যভূমির ছবি: নৃশংসতার স্বাক্ষর) মাঝে মাঝে মনে হয় এক বিশাল সরীসৃপ সাপ পেঁচিয়ে রেখেছে প্রিয় স্বদেশকে। বেদনায় কন্ঠরুদ্ধ হয়ে আছে সচেতন জনতার কন্ঠ। বিষাক্ত সাপের ছোবলে আমরা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি, ভুগছি জাতীয় অ্যাম্নেশিয়াতে। যদি বলি আজ 14ই ডিসেম্বর। বিজয় দিবসের ঠিক দু'দিন আগে এদেশ হারাবে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

কি মর্মান্তিক ঘটনা। আজকের এই দিনে বধ্যভূমিগুলোতে 71'এর দেশদ্রোহী রাজাকার-আলবদরা এদেশের কৃতী সন্তানদের একে একে নৃশংসভাবে হত্যা করবে। 35 বছর পর সেই স্মৃতি কি ম্লান হয়ে গেছে? রায়ের বাজারের বধ্যভূমি কি এখন আমাদেরকে আর শোকার্ত করে না? মনে পড়ে সেসব সূর্যসন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবিদের নামগুলো? প্রশ্নগুলো আমার নতুন প্রজন্মের কাছে। এই নতুন প্রজন্ম পারবে কি তাদের অথর্ব পূর্বসূরীদের ভুল শুধরাতে? 1971 সালের ডিসেম্বরে সাহসী মুক্তিসেনারা নয় মাস ধরে যুদ্ধ করছে। শেষ মুহুত্তের্্ব বিজয় আসি আসি করছে।

পলায়নপর পাকিস্তানীসেনা ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদররা রাতের অন্ধকারে শুরু করলো হত্যাযজ্ঞ। আত্মসমর্পণের ঠিক দু'দিন আগে কেবল ঢাকা শহরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তাসহ প্রায় দেড় শ' বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিকে অপহরণ করে মিরপুর এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। চলুন স্মরণ করি সকল বুদ্ধিজীবীদের। যাদের মধ্যে রয়েছেন_ অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাবি্ব, ডা. মোহাম্মদ মোতর্ুজা, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডা. মোহাম্মদ শফি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্ল্লা কায়সার, নিজামউদ্দিন আহমদ, খোন্দকার আবু তালেব, আনম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, সৈয়দ নাজমুল হক, জহির রায়হান, আলতাফ মাহমুদ, ড. আবদুল খায়ের, ড. সিরাজুল হক খান, ড. ফয়জল মহী, ডা. আবদুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, হবিবর রহমান, মেহেরুন্নেসা, গিয়াস উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। বাংলাদেশের কৃতী বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তুলে দেয় তৎকালীন জামাতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ কুখ্যাত আল বদর ও আল শামস বাহিনীর হাতে।

ডিসেম্বরের 10 থেকে 14 তারিখ পর্যন্ত সেই তালিকা ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘৃণ্যতম অপকর্মটি করে ওই ঘাতক গ্রুপ। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সান্ধ্য আইন চলাকালে রাতের অাঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। 18ই ডিসেম্বর রায়েরবাজারের বধ্যভূমি আবিস্কৃত হয়। এদেশ তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের রক্তে স্নাত হয়ে বিজয়ের পতাকা উওোলিত করে 16ই ডিসেম্বর। অনেক রক্ত আর ত্যাগের ইতিহাস মিশে আছে এদেশের প্রতিটি মাটির কণার সাথে।

হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের চিএ খুব বেশী রক্তাত্ব। তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর বাহিনীর অপকর্ম আরও অনেক বেশী ঘৃণা ও ধিক্কার জাগিয়ে তোলে। মনে আছে, চিএশিল্পী কামরুল হাসানের সেই বিখ্যাত দৈত্য ইয়াহিয়ার ভয়ংকর ছবিটির কথা। সেই ছবির নামকথা ছিল: "এই জানোয়ারদের হত্যা করুন। ওরা মানুষ হত্যা করছে।

আসুন আমরা জানোয়ার হত্যা করি"। 71'এর ধিকৃত জানোয়াররা চেহারা বদলে ফেলেছে। না, তারা মানুষের পোশাক পড়লেও মানুষ হতে পারেনি। তারা হয়েছে সরীসৃপ সাপ। এসব রাজাকার আলবদরের সদস্যরা এখন সাপের মতো পেঁচিয়ে রেখেছে বিজয়ের পতাকাকে।

সেজেছে দেশপ্রেমী আর জাতীয়তাবাদী। না, এসব সাপেরা যাবে না বধ্যভূমিতে, যাবে না স্মৃতিসৌধে। কি দিয়ে ঢাকবে এরা এদের লজ্জা? কি ভাবে এসব অভিশপ্ত সাপেরা রেহাই পাবে ধিক্কার থেকে? সাপের নাচ উপভোগ্য হতে পারে, কিন্তু কখনও নিরাপদ নয়। সর্পরাণী সাপের নৃত্য দিয়ে সম্মোহিত করতে পারে জনতার সারিকে। কিন্তু যারা সাপের দংশনে আপনজন হারিয়েছে, তারা কি কখনও ক্ষমা করতে পারবে? "অতীতে এসব সাপেরা জিতেছে বহুবার।

কিন্তু এখন সেই সময়, সচেতন মানুষ! এখন আর ভুল ক'রো না- বিশ্বাস ক'রো না সেই সব সাপেদের..." সুকান্ত ভট্রাচার্য।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.