আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙালি জাতির কলঙ্কিত অধ্যায় ২

ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে রাজাকারের কোনো স্থান নাই

২৬শে সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা যাবেনা এই মর্মে একটি অর্ডিন্যান্স জারী করেন। এরপর উপদেষ্টাদের পরামর্শে১৬ই অক্টোবরবঙ্গভবনে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার উদ্দেশ্যে জাতীয় সংসদের সদস্যদের বৈঠক আহবান করেন। এই বৈঠকে সংসদ সদস্য সিরাজুল হক মোশতাককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা আপনাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সম্বোধন করতে পারি না। কোন্ আইনের বলে মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়েছেন জনাব হক তা জানতে চান। মোশতাক সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে প্রবল বিরোধীতার সম্মুখীন হন।

এটা এমন এক সময়, যখন মেজর ফারুক ও রশীদ অন্যান্যদের নিয়ে বঙ্গভবনে বসবাস করা ছাড়াও প্রায়শঃই সেনাবাহিনীর প্রতি নির্দেশ জারী করতেন। মেজর ফারুক প্রেসিডেন্টের সাদা মার্সিডিজ গাড়ী পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার শুরু করেন। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী মেজরদের এইরূপ আচরণে উর্ধতন অফিসারগণ ক্ষুদ্ধ হন। ক্রমশ এই ক্ষোভ সেনাবাহিনীর সকল স্তরের অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রেক্ষিতে বিদ্রোহী মেজরগণ অক্টোবরের শেষের দিকে সম্যক উপলব্ধি করতে পারেন যে, সেনানিবাস থেকে পাল্টা অভ্যূত্থান অত্যাসন্ন হয়ে পড়েছে।

অক্টোবরের শেষের দিকে মোশতাক, ওসমানী, জেনারেল খলিল, ফারুক ও রশীদ আসন্ন পাল্টা অভ্যূত্থান সম্পর্কে ঐক্যমত পোষণ করেন। কে বেশী বিপজ্জনক? খালেদ অথবা জিয়া এ নিয়ে প্রায় প্রতিরাতেই বঙ্গভবনে আলোচনা সভা চলতে থাকে। মহল বিশেষের মতে এসময় ফারুক ও রশীদ খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনুগত সৈন্যদের নিয়ে একটি ব্রিগেড গঠন করে জিয়া, খালেদ ও অন্যান্য বিরোধী অফিসারদের গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব ভেবে পরবর্তীকালে বাতিল করা হয়। উল্লেখ্য, যে কারণেই হোক, জেনারেল ওসমানী কিন্তু জেনারেল জিয়াকেই বেশী বিপজ্জনক বলে মনে করতেন।

এরই জের হিসাবে ২রা নভেম্বর রাতে জেনারেল ওসমানী জেনারেল খলিলকে সঙ্গে করে মোশতাকের কাছে যান এবং বলেন যে, সম্ভাব্য পাল্টা অভ্যূত্থান এড়ানোর জন্য জিয়াকে অবশ্যই সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। রশিদ সেসময় উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ আগে শাসনতন্ত্র (সংবিধান) ও জনগণের রাজনৈতিক অধকারের প্রশ্নে মনোরঞ্জন ধরকে প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ রচনার দায়িত্ব দিয় ক্যাবিনেট সাব-কমিটির দীর্ঘ বৈঠক শেষ হয়েছে। প্রকাশ, মধ্যরাতে ওসমানী খলিলকে সঙ্গে করে মোশতাককে এই মর্মে উপদেশ দিচ্ছিলেন যে, জিয়াকে অবশ্যই সেনাবাহিনী প্রধানের পদ থেকে সরাতে হবে। রশিদ এই প্রস্তাবের জোর আপত্তি তোলেন এবং বলেন যে, জিয়া নয়, বরং খালেদ ও শাফায়াত জামিলই বিপজ্জনক।

মোশতাকের কানে কানে রশিদ বললেন, জিয়াকে সরানোর প্রস্তাবের পেছনে ওসমানীর গভীর ষড়যন্ত্র আছে। মোশতাক এমর্মে জবাব দিলেন, ঠিক আছে, যদি জিয়াকে সরানো হয় তাহলে পরবর্তী সেনাপ্রধান কে হবেন? রশীদ ভাবলেন, ওসমানী নিশ্চয়ই খালেদের নাম বলবেন। ওসমানী যদি খালেদের নাম প্রস্তাব করেন, তাহলে এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, ওসমানী খালেদের পক্ষের লোক। ওসমানী পরদিন নতুন সেনাপ্রধানের নাম প্রস্তাব করবেন বলে বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। লেখাটি এম. আর. আখতার মুকুল সম্পাদিত আমিই খালেদ মোশাররফ গ্রন্থ থেকে নেওয়া।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.