ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদানের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে রাজাকারের কোনো স্থান নাই
1975 সালের পনেরো আগষ্ট। দেশের প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানের পাঁচদিন পরে 20শে আগষ্ট জেনারেল শফিউল্লাহ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ফরমেশন কমান্ডার ও প্রধান স্টাফ অফিসারদের এক বৈঠক ডাকেন। মেজর ফারুক ও রশীদ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শফিউল্লাহ উপস্থিত সিনিয়র অফিসারদের এ মর্মে জানালেন যে, প্রেসিডেন্ট মোশতাক ফারুক ও রশীদকে পাঠিয়েছেন 'শেখ মুজিবকে কেন হত্যা করা হয়েছে' তা বর্ণনা করার জন্য। মেজর রশীদ, শেখ মুজিবকে হত্যা করে খন্দকার মোশতাককে কেন তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে, তা বলতে শুরু করলে কর্ণেল শাফায়াত জামিল তাকে থামিয়ে দিয়ে রাগান্বিত সবরে বলেন, মোশতাক আমার প্রেসিডেন্ট নন।
মোশতাক স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট ; তিনি নির্বাচিত নন এবং তার প্রতি আমার কোন আনুগত্য নেই। মোশতাক একজন খুনী, ষড়যন্ত্রকারী এবং প্রথম সুযোগেই আমি তাকে সরিয়ে দেবো। কর্ণেল শাফায়াত জামিলের এই ক্রোধমিশ্রিত বক্তব্যের পরে সভা আর অগ্রসর হতে পারেনি। বৈঠকের ঐখানেই পরিসমাপ্তি।
নানা ঘটনা প্রবাহে 24 শে আগষ্ট জেনারেল শফিউল্লাহ ও এয়ার ভাইস মার্শাল এ. কে. খন্দকারের চাকুরী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয় এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান ও এয়ার ভাইস মার্শাল এম. জি. তাওয়াবকে বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
মাহবুবুল আলম চাষী রাষ্ট্রপতির প্রধান সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্টের নতুন সামরিক সচির হলেন লেঃ কর্ণেল আমিন আহমেদ চৌধুরী। এ. বি. এস. সফদর এন এস আই -এর ডিরেক্টর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেলেন। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্য সচির রাজাকার বাহিনীর সৃষ্টিকর্তা ও রাও ফরমান আলীর ঘনিষ্ট ব্যক্তি শফিউল আজমকে ক্যাবিনেট সচিব হিসাবে নিয়োগ করা হলো। কেরামত আলী হলেন সংস্থাপন সচিব।
আর আইয়ুর-ইয়াহিয়ার প্রিয় ব্যাক্তি কাজী আনোয়ারুল হক হলেন রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা।
জেনারেল (অবঃ) এম. এ. জি. ওসমানী প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাকের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। মওলানা ভাসানী শেখ মুজিবের দ্্বিতীয় বিপ্লবকে সমর্থন করেছিলেন অথচ তাঁর হত্যাকান্ডের পর তিনি খোন্দকার মোশতাককে অভিনন্দন জানালেন।
অন্যদিকে গোলাম আযম জেদ্দা থেকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে উল্লসিত হয়ে নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহবান জানালেন। খাজা খায়েরউদ্দিন, মাহমুদ আলী অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিলেন- আর হামিদুল হক চেীধুরী অভিনন্দন জানিয়ে পত্র লিখলেন খোন্দকার মোশতাককে।
ভুট্টো বাংলাদেশকে 50 হাজার টন চাল ও এক কোটি 50 লক্ষ গজ কাপড় উপঢৌকন পাঠালেন। সেীদি আরব ও সুদান 16 আগষ্ট আর চীন 31শে আগষ্ট বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
তাজউদ্দীন 22শে আগষ্ট নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার হন। সৈয়দ নজরুল ইসলামও গ্রেফতার হন সরকারী বাসভবন থেকে। প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলী আত্মগোপন করেন।
কিন্তু ওবায়দুর রহমান ও শাহ মোয়াজ্জেম কর্তৃক আশ্বস্ত হয়ে তাঁর ছেলেরা আব্বার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেন। মোশতাকের মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রী হতে অস্বীকার করায় 17ই আগষ্ট মনসুর আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হলো। কোরবান আলী, আব্দুস সামাদ আজাদ, কামরুজ্জামান সহ 20 জন নেতা 23শে আগষ্ট নাগাদ গ্রেফতার হলেন। 25শে আগষ্ট গ্রেফতার হল তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক এবং জিল্লুর রহমান।
লেখাটি এম. আর. আখতার মুকুল সম্পাদিত আমিই খালেদ মোশাররফ গ্রন্থ থেকে নেওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।