আমাদের চারপাশে নিত্য ঘটে যাওয়া ছোট খাট ঘটনাগুলোও দিতে পারে অনেক অসাধারন শিক্ষা। অন্তর্দৃষ্টি মেলে দেখিনা আমাদের চারপাশে একটু তাকিয়ে............... দীর্ঘদিন পর আজ যে ফোন কলটা পেয়ে রুদ্র’র মনটা অস্থির হয়ে উঠলো তা অপ্রত্যাশিত হলেও অনাকাঙ্খিত নয়, বরঞ্চ দীর্ঘ প্রতীক্ষিত। “তোমার সাথে আমার একটু দেখা করা প্রয়োজন, আসতে পারবে? আর আসার সময় নূপুর জোড়া নিয়ে এসো কিন্তু। ” “কখন, কোথায় আসতে হবে বল” রুদ্র’র সাবলীল উত্তর। এতদিন পর লিসা’র কাছ থেকে ফোন পেয়ে রুদ্র’র স্বর্গ পাবার উপক্রম।
কেননা ওদের সম্পর্কের শেষের দিনগুলো ছিল রুদ্র’র জন্য খুব কষ্টের। লিসা ওর কল রিসিভই করতনা। কিন্তু রুদ্র মনে মনে চাইত নিজেদের মধ্যে সমঝোতা। ওদের খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল(একদা)। রুদ্র গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা অতি সাধারন ছেলে হলেও বাবা-মা প্রগতিশীল বলেই ব্যাক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে সর্বত্র মানিয়ে নেবার মতো অভিযোজন ক্ষমতা ওর পারিবারিক গুনেরই একটি।
অপরদিকে, লিসা বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হলেও বাবার একরোখা সংকীর্ণতার গণ্ডিতে খুব সাদামাটা গ্রাম্য জীবন যাপনে অভ্যস্ত। পাশাপাশি গ্রামে বসতি হওয়ায় দু’জনের প্রেমের গল্পটা অনেকটা পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের কোন এক কাহিনীর মতই ছিল। অঘটনের সুত্রপাত উচ্চশিক্ষার উদ্দ্যেশ্যে দু’জনের রাজধানীতে গমনের পর থেকে। রাজধানীর রঙিন জীবন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু/বান্ধবীদের বৈচিত্র্যময় জীবন যাপন লিসাকে এমনভাবে মোহাবিষ্ট করলো যে ওর অবস্থা ঠিক যেন বাঁধা ষাঁড় ছাড়া পেলে যেমন ছুট দেয়। ওর টালমাটাল গতি সামলাতে রুদ্র প্রায় হিমসিম।
কেননা বাবার অনেক থাকলেও তাঁর কাছ থেকে আনতে হলে হিসেব দেখাতে হয়, কিন্তু রুদ্র’র কাছে চাওয়া মাত্র পাওয়া যায়। ভালবাসার মানুষের ছোট ছোট চাওয়াগুলো পুরন করতে গিয়ে প্রথমত সামস্যা না হলেও আস্তে আস্তে চাওয়াগুলো বড় হতে লাগলো যখন বাধ্য হয়ে রুদ্রকে তখন উপার্জনের পথ খুঁজতে হল। নিজের পড়াশুনার মাঝে কয়েকটা টিউশনি করাতে শুরু করল। লিসার যাবতীয় চাহিদা ও পূরণ করার আপ্রান চেষ্টা করত। সর্বশেষ চাহিদা অনুযায়ী লিসা’র একজোড়া নূপুর খুব পছন্দ হয়েছিলো।
রুদ্র শোনামাত্র চিন্তা করল আপাতত টাকা ধার করে ওটা বানিয়ে দেই, আগামি মাসে টিউশনির টাকা পেলে শোধ করে দেবো। যে চিন্তা সেই কাজ। লিসাকে দোকানে নিয়ে গিয়ে নূপুর তৈরি করতে দিয়ে এলো। এক সপ্তাহ পরে ওটা দেবার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে ওদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলো।
বেশ কিছুদিন ধরেই রুদ্র লক্ষ্য করছিল লিসা খুব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুব বড় রকমের ঝগড়ার পায়তারা করে। শুধু নিজের দিকগুলোই বড় করে দেখে কিন্তু রুদ্র’র দিকে তাঁর কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। রুদ্র ভেবেছিলো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সামান্য ব্যাপার নিয়ে আজ প্রায় ১ মাস দু’জনের যোগাযোগ নেই। রুদ্র অনেকবার ফোন করেছিলো।
লিসা রিসিভ করেনি। তাই আজ লিসা’র কল পেয়ে রুদ্র ভাবল এতদিনের অভিমান বুঝি ভাঙল। যাক কাল তাহলে সব নতুন করে শুরু হবে। এরই মধ্যে রুদ্র দোকান থেকে নূপুরজোড়া এনে রেখেছিলো। সারা রাত রুদ্র’র ঘুম হল খুবই সামান্য।
ও ভাবল কাল লিসা নূপুর পেয়ে খুব খুশি হবে। অভিমানে জড়িয়ে ধরে হয়তো বলবে আমার সাথে ঝগড়া করে কথা না বলে থাকার কষ্টটা বুঝেছ? কথামত পরদিন দু’জনের নির্দিষ্ট স্থানে দেখা হল। “দেখনা, তোমার মনের মতো হয়েছে কিনা?” রুদ্র নূপুরজোড়া লিসার হাতে দিল। লিসা বলল পছন্দ না হলেও যেহেতু আমার জন্য তৈরি করা হয়েছে, সেহেতু এটা আমার কাছে থাকা উচিৎ বলে আমি নিয়ে নিলাম। তবে তোমার আমার আর কখনও দেখা হবেনা… লিসা আর কোন কথা না বলে চলে গেলো।
রুদ্র বোকার মতো ফ্যাল ফ্যাল করে নির্বাক তাকিয়ে রইলো । পরে রুদ্র লিসা’র বান্ধবীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারল যে, রাজধানীতে আসার কিছুদিন পরই ওর কোন এক বান্ধবীর বড় ভাইয়ের সাথে ওর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবং তাঁর সাথেই নাকি এখন ও ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। রুদ্র এখনও বিশ্বাস করে লিসা ওরই আছে। ঘোর কেটে গেলে , ভুল বুঝে ঠিকই লিসা ফিরে আসবে এই আশায় পথ চেয়ে আজও রুদ্র’র রাত যায় দিন আসে...............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।