। । । ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো । ।
।
রাত সাড়ে বারোটায় ছোট ভাইয়ার ফোন কল।
- কেমন আছো তুমি?
- হুমম... কে ভাইয়া? ভালো আছি... (তখনো 90% ঘুমভাব)
- কোন সমস্যা হচ্ছে?
- না তো, কোন সমস্যা নাই!
- মিলিটারী গন্ডগোল তোমাদের ওদিকে আছে?
- ওগুলো মূলত: সাউথ থাইল্যান্ডের দিকে। সারা বছর টুকটাক ওরকম হয়... (এগুলো আমার মুখস্ত কথা, সবাই জিজ্ঞেস করে, আমি একই কথা বলি)
- না! আজকে যে মিলিটারি কূ্য হইলো, তার কথা বলছি।
এবার আমি চোখ কচলাই।
- তাই নাকি?
- হঁ্যা, বিবিসি নিউজ দেখো...
তারপর সামান্য আলাপের পর আমাদের কথোপকথন শেষ হয়।
বিবিসি নিউজে দেখি - ব্রেকিং নিউজ - থাইল্যান্ডে কূ্য - সংবিধান বাতিল - মিলিটারি সব দখল করে নিয়েছে - প্রধান মন্ত্রী থাকসিন জাতিসংঘের সম্মেলনে নিউ ইয়র্কে আছে - ওখান থেকে তিনি ঘোষনা করেছেন, তিনি এখনো প্রধান মন্ত্রী। বিবিসি-র ব্যাংকক রিপোর্টার জোনাথনকে দেখলাম মাথায় ছাতা দিয়ে লাইভ রিপোর্ট দিচ্ছে। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। থাই চ্যানেলগুলোয় দেশাত্ববোধক গান চলছে।
সকালে অফিসে আসলাম। গুটি কয়েক কলিগ টেলিভিশনের সামনে খবর দেখছে। আর সামান্য ক'জন নিউজপেপার পড়ছে। আমি এর সাথে কথা বলি, ওর সাথে কথা বলি, কেউ কিছু বলতে পারে না। যারা পারে - তাদের আইডিয়াও খুব লিমিটেড।
ব্যাংককে গন্ডগোল হয়েছে। ব্যাস... এর বেশী কিছু নয়। আমার অবাক লাগে। দেশে এত বড় ঘটনা ঘটছে - কারো কোন বিকার নেই, প্রতিক্রিয়া নেই। শেষে কথা বললাম - ফিলিপিনো কলিগ নেইলের সাথে।
ও বললো - থাইল্যান্ডে মিলিটারি "কুপ" (!) নতুন কিছু নয়। সাধারণ জনজীবনে এর কোন প্রভাব পড়বে না, কেবল প্রশাসনিক লেভেলে পরিবর্তন আসবে।
এরপর বাংলাদেশ থেকে ঘনঘন কয়েকটা ফোন কল পাই। উদ্্বিগ্ন নিকটজনরা পরিস্থিতি জানতে চায়। আমি তখন কাদির কল্লোল কিং বা ওয়ালিউর রহমান মিরাজ-
- হঁ্যা।
কূ্য হয়েছে। ব্যাংককের পরিস্থিতি কিছুটা আশংকাজনক। কি হচ্ছে তা এখনো ঠিকমতো বলা যাচ্ছে না। বিদ্্রোহী মিলিটারী গ্রুপ বলছে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে থাকসিন এখনো তার কর্তৃত্ব প্রকাশ করছে।
খবরে দেখলাম ব্যাংককের বড় রাস্তাগুলোয় মিলিটারী পাহারা আছে। সরকারী অফিসগুলো আজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
- সাধারণ জনজীবনের কী অবস্থা?
- ব্যাংককের কথা ঠিক বলতে পারছি না। তবে পাতায়ায় সবকিছু স্বাভাবিক। প্রাইভেট অফিসগুলো খোলা আছে।
তেমন কোন শংকা দেখা যাচ্ছে না।
- মানুষের প্রতিক্রিয়া কি?
- তেমন রাজনীতি সচেতন কারো সাথে এখনো কথা হয়নি। তবে আজকের প্রধান সংবাদপত্রগুলোর হেডিং -এ কেবল একটি শব্দ - "কূ্য"। ওখানে পাবলিক রিঅ্যাকশন কলামে দেখা যাচ্ছে অনেকেই খুশি। থাকসিনের কথিত দূর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক মানুষ ক্ষুব্ধ!
- তাহলে এ মিলিটারী শাসন কি সাসটেইন করবে?
- এটা এখনো ঠিক বলা যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী থাকসিন এখন নিউ ইয়র্কে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান থাকসিনের জন্য প্লাস পয়েন্ট। দেশের বাইরে থাকায় থাকসিন বিশ্ব জনমত আদায়ের সুযোগ পেয়ে গেল। সুতরাং পুরো ব্যাপারটা এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বলয়ে আঁটকে গেলো।
- দোআ করি - ভালো থাকো।
সুপত ও হামিদের গল্প:
এখানে আমি যে লজে থাকি, সেখানে একজন গার্ড আছে, নাম সুপত। ছোটখাটো মানুষ। ইংরেজী যতটুকু পারে - তাতে করে আমার অনেকগুলো অবসর সময় ওর সাথে আলাপী আড্ডায় চলে যায়। সে এখন বাংলা 1 থেকে 10 পর্যন্ত গুনতে পারে। সালাম, খোদা হাফেজ, ভালো আছি - বলতে পারে।
ব্যক্তিগত জীবনে নিজেকে সুখী মনে করে সে। কাজ শেষে নিজের মোটরবাইকের পেছনে বৌ-কে বসিয়ে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায়। বাচ্চাটা স্কুলে পড়ে। সুপতের ইচ্ছা - ওর বাচ্চা ভালো ইংরেজী বলবে। তাই এখন থেকে ইংরেজী ওয়ার্ড বুক কিনে দেয়।
ছুটির দিনে সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। কারাওকে-তে গান করে। এ.টি. এম কার্ড ইউজ করে। মোবাইলে এম.পি. থ্রি-তে গান শুনে। রাজনীতি কিংবা সমাজ নিয়ে তার কোন ভাবনা নেই।
মিলিটারি কূ্য হলে তার কি এসে যায়? বেশ তো, চলছে যেমন চলুক না!
সুপতকে দেখে আমাদের ঢাকার বাসার গার্ড হামিদের কথা মনে পড়ে। দেশ বিদেশের সব খবর হামিদের জানা। ইরাকে কয়জন মারা গেল, আফগানিস্তানে কয়টা হামলা হলো, গায়ক আসিফ বিএনপি থেকে নমিনেশন চাইতে পারে, সৌরভ গাংগুলী কবে দলে ফিরবে কিংবা পূর্ণিমা-রিয়াজের মাঝে বিয়ে হবে কিনা - সব ব্যাপারে সে আপডেটেড। প্রায়ই সন্ধ্যায় আমি বাসায় ফিরতেই সে খবর দিতো - ভাইয়্যা, কালকে আবার হরতাল দিসে। বাজার থেকে এসে বলতো - বাজারে আগুন, দাম কমার কোন লক্ষণ নাই! সব নাকি সিন্ডিকেট।
তেল খাওয়া বাদ দিতে হইবো।
সুপতের কাছে যেগুলো জীবনের বেসিক চাহিদা, হামিদের কাছে ওগুলো স্বপ্ন। দেশ বিদেশের খবর রেখে এত্তো কিছু জেনে - কি হবে হামিদ? ভোট দিয়ে সরকার পালটাবা, হৈ চৈ করবা - কিন্তু তুমি কি কখনো এ.টি.এম কার্ডে টাকা তুলে মোবাইল হেডসেট লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে বৌ-বাচ্চা নিয়ে ভালো একটা রেস্টুরেন্টে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারবা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।