আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম প্রসঙ্গে: ইনসাইড আউট এবং আউটসাইড ইন

যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে

"আরজ আলী মাতব্বর: আমাদের সক্রেটিস" পোস্টে ইন্টারেস্টিং এবং স্টিমুলেটিং আলোচনা হচ্ছিল। সেই আলোচনায় হাসান মোরশেদের একটা মন্তব্য এরকম ছিলো (সংক্ষেপে মূল যায়গাটা তুলে দিচ্ছি): "প্রিয় সাদিক, তাহলে মানুষের আর প্রথাগত ধর্মপালনের দরকার কি? ... এসব প্রথামাফিক ধর্মীয় অনুশাসন না মানলেও যদি বেহেশতে যাবার চান্স থাকে, তাহলে এসবের প্রয়োজন কি? আর কমন ন্যায় নীতি বোধ, যেমন সত্য কথা বলা, সৎ পথে চলা, কাউকে অত্যাচার না করা, চুরি না করা এগুলো তো ধর্মীয় শিক্ষা না। মানুষের সাধারন বিবেক বোধ। শুধু এসবের বিবেচনায় যদি স্রষ্টা কাউকে মার্জনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেন, তাহলে খামোখা তার এতো ধর্ম ঝুলিয়ে রাখার দরকার কি?" গরীবের দুই পয়সার ভাবনা। ইনসাইড আউট এবং আউটসাইড ইন কনসেপ্টটা প্রথমে একটু খুলে বলি।

ধর্ম পুরুষদের ব্যক্তিগত যাত্রাটা ছিলো ইনসাইড আউট (ভিতর থেকে বাইরে যাতা্র)। তারা প্রথমে সত্য উপলব্ধি করেছেন নিজেদের ভিতরে। নবী মুহাম্মদের (সালাম) এর উদাহরন দেই (যদিও বুদ্ধা থেকে শুরু করে বাকিসব ধর্মপুরুষদের জীবনেও এই ইনসাইড আউট এ্যাপ্রোচটা দেখা যাবে)। নবী মুহাম্মদ কিন্তু মানুষ হিসেবে যে অসাধারন বিবেকবান একজন মানুষ ছিলেন সেটা কোন বেহেস্তের পুরস্কার বা দোজখের ভয়ে মোটিভেটেড ছিলো না। এই বিবেকবান হওয়াটা প্রতিটি মানুষের ভিতরে প্রোথিত।

ওনারটা অসাধারনভাবে শানিত ছিলো। আমি তার নবী হওয়ার ঘোষণার আগের কথা বলছি। তিনি অসম্ভব ডিসিপ্লিনড মানুষ ছিলেন নিজে ইসলাম ধর্মের বাণী প্রচার করার, এমনকি তার কাছে ওহী আসার অনেক আগে থেকেই। ইন্টারনালাইজেশন প্রক্রিয়া হয়েছে প্রথমে। তারপরে মনুষ্যত্বের জন্য, সমাজের জন্য সেই ইন্টারনালাইজড যে অনুভব সেটাকে এক্সটানর্ালাইজ করতে ধর্ম প্রচার।

তারা ত্যাগী পুরুুষ। তাই নিজের উপলব্ধির সাথে সাথে সমাজের, পৃথিবীর, মানুষের মঙ্গলের জন্য সেটাকে প্রচার করেছেন, এক্সটার্নালাইজ করেছেন। নিজেদের আধ্যাতি্বক উপলব্ধি এবং সুন্দর জীবনের জন্য যে ভিশন সেটাকে সবার জন্য ছড়িয়ে দিতেই ধর্মের অনুশাসন। স্রষ্টাকে উপলব্ধির (ইনসাইড ডাইমেনশন) পরে, যে পথে (আউটসাইড ডাইমেনশন) সেই উপলব্দি সেটাকে অন্যদের পাইয়ে দেওয়ার জন্য ডিসিপ্লিন, জীবনের অনুশাসন সেগুলোকে প্রচার করা, আলোচনা করা, শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করা (আউটসাইড ডাইমেনশন)। এখন হাসান মোরশেদের কথা ছিলো, ' মানুষের আর প্রথাগত ধর্মপালনের দরকার কি?' কারন সাধারন মানুষ প্রত্যেকেই উপলব্দি, মাত্রা, ক্যাপাসিটি এবং ক্যাপাবিলিটি, সুযোগ সমান না।

(ডাইভারসিটি সৃষ্টির সৌন্দর্য্য)। তাদের জন্য তাই আউটসাইড ইন এ্যাপ্রোচটাই অনেক বেশি প্রযোজ্য, প্র্যাকটিক্যাল। এক্সটার্নাল ডিসিপ্লিন, অনুশাসন, ভালো মন্দের ভিতরে ডিসক্রিমিনিমেশন করতে শেখানো, মানুষের ভিতরে ভাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা - এ সবগুলো আউটসাইড থেকে পালন করে ইনসাইডে যাত্রা। যে যাত্রা সীমাহীন। যে যাত্রা স্রষ্টাকে উপলব্ধি করার যাত্রা।

স্পিরিচুয়ালিটি হলো ইনসাইড আউট এ্যাপ্রোচ। প্রথমে উপলব্ধি। প্রথমে বোঝা। প্রথমে জানা। অন্ধত্ব থেকে বেরিয়ে এসে ভিতরের উপলব্ধি।

প্রিকনসিভড ভুল ধারনার শিকল ভেঙ্গে নতুন করে বুঝতে শেখা। অনেকের জন্য স্পিরিচুয়াল এ্যাপ্রোচ খুব ভালো। যারা ইয়োগা ফিলোসফির সাথে পরিচিত তারা Jnana Yoga বা 'জ্ঞান যোগ' সাথে রিলেট করতে পারেন এটা। 'ভক্তি যোগ' (Bhakti Yoga) হলো আরেকটা পথ যেটা অনেক সাধারনের জন্য বেশি প্রযোজ্য কারন তারা জানতে, ইন্টেলেকচুয়াল ভাবে স্রষ্টা বা ধর্মকে এ্যাপ্রোচ করার চাইতে ভক্তি, তীব্র বিশ্বাসকেই বেশি গ্রহন করতে পারে। একজন অল্প শিক্ষিতকে তাই ভয়াবহ দোজখের ভয়ংকর বর্ণনা দিয়ে সহজেই মোটিভেট করা যায়।

এক্সটার্নাল রিলিজিয়াস প্র্যাকটিস আউটসাইড ইন এ্যাপ্রোচ। এখানে সেই অনুশাসন, আচরন, নিয়মিত প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে যার হাত ধরে ঠিক একই পথেই যাত্রা করা সম্ভব। শুধু সুবিধার জন্য মেথডটা ভিন্ন। আমি হাসান মোরশেদের এই কথাটা মানতে পারছি না: "আর কমন ন্যায় নীতি বোধ, যেমন সত্য কথা বলা, সৎ পথে চলা, কাউকে অত্যাচার না করা, চুরি না করা এগুলো তো ধর্মীয় শিক্ষা না। মানুষের সাধারন বিবেক বোধ।

" আমি বলবো এগুলো যুগে যুগে সব ধর্মের শিক্ষা। ধর্ম এবং বিবেকবোধ আলাদা নয় বলেই আমরা বলতে পারি এগুলো বিবেকের শিক্ষা। কিন্তু "এগুলো ধর্মের শিক্ষা নয়", এটা ভুল স্টেটমেন্ট। সাধারন বিবেক বোধ ভোঁতা হয়ে যায় যখন মানুষ স্বেচ্ছাচারীতায়, "রিলিজিয়াস এন্ড স্পিরিচুয়াল যে কালেক্টিভ নলেজ, প্রজ্ঞা", যে প্রজ্ঞা মানব সভ্যতায় হাজার বছরের বয়ে আনা প্রজ্ঞা সেটাকে বাদ দিয়ে নিজের মতো করে খুব বিবেকবান হওয়ার প্রচেষ্টা করে। পশ্চিমা বিশ্ব সেই এক্সপেরিমেন্টের খুব প্রথম দিকে আছে।

ফলে নিজের মতো বিবেক পরিচালনার ফলাফলগুলো আস্তে আস্তে প্রকাশিত হচ্ছে। ইনসাইড আউট এবং আউটসাইড ইন এ্যাপ্রোচের আরেকটা (খুব ডাউন টু আর্থ) উদাহরন দেই। কেন ধর্ম পালন সাধারনের জন্য দরকার। লাইব্রেরিতে প্রচুর বই আছে। ইউনিভার্সিটি না গিয়েও একজন বিজ্ঞানী, ডাক্তার, প্রকৌশলী হতে চাইতেই পারে।

তার যুক্তি থাকতেই পারে ইউনিভার্সিটিতে গেলে যে পড়া পড়াবে, আমি বই থেকে একই জিনিস আমার ঘরের বারান্দায় বসে পড়তে পারি। ইউনিভার্সিটিতে যাবো কেন? কেরানী আইনেস্টাইনের পদ্ধতি বা বাউন্ডুলে বালক বরীন্দ্রনাথের পদ্ধতি সবার জন্য না। তাদের এ্যাপ্রোচ হলো ইনসাইড আউট। আর সর্বসাধারনের জন্য আউটসাইড ইন। কিন্তু এর মানে এই না যে বাকিরা কেউ আর সেই এ্যাপ্রোচে হাটবে না।

হেটেছেন অনেকে, এখনও সফলতার সাথে হাটছেন। আইনেস্টাইনের কাছ থেকে অথবা আরো বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে শিখো। অত:পর নিজেকে গড়ে তোলো। দুইজনই একই বিজ্ঞানের সত্য জানছে। একজন নিজেকে ভেঙ্গে চুরে সেই সত্য জানার পরে সেটাকে পদ্ধতিগতভাবে জানার সুযোগ করে দিয়ে গেছে।

বাহ্যিক ধর্মপালন ঠিক সেই পদ্ধতিগুলো। এ কারনে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইনসাইড আউট এ্যাপ্রোচ যে কেবলমাত্র মহাপুরুষদের জন্য তা নয়। যে কারো জন্যই এ্যাপ্রোচটা খোলা। ধর্মের ক্ষেত্রে: দীর্ঘদিন ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করে মুসলিম কনভার্টরা খুব ভালো উদাহরন।

ইসলামের সত্যকে ইন্টারনালাইজ করতে পেরে, জীবনের জন্য ঐ অনুশাসনগুলো কেন এবং কতটা রেলিভেন্ট সেটা বুঝতে পেরেই তারা ইসলাম গ্রহন করছে। তবে পৃথিবীর সব মানুষের বা সবার জন্য ঐ এ্যাপ্রোচটা ঠিক কাজ করে না। বেশিরভাগ মানুষই নাওয়া, খাওয়া, ঘুম, ফুর্তি নিয়ে বেশি ব্যস্ত কি না! তাদের "কি করতে হবে" বলে দিলেই তারা খুশি। তাই তাদের জন্য আউটসাইড ইন এ্যাপ্রোচ। তাদের (এবং সবার জন্য তাই) ধর্ম পালন করার অনুসাশনটা কমন।

কারন ডীপ ডাউন, এগুলোর পেছনে সাইকোলজিক্যাল, সোশ্যাল এবং স্পিরিচুয়াল অনেকগুলো তাৎপর্য, সুস্পষ্ট প্রজ্ঞা এবং কারন আছে। আর যে প্রথমে উপলব্ধি থেকে অনুশাসন পালন করে তার জন্য ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়। এজন্য নবীর একটা বাণী খুব রেলিভেন্ট: Religion is very easy and whoever overburdens himself in his religion will not be able to continue in that way. So you should not be extremists, but try to be near to perfection and receive the good tidings that you will be rewarded. দু:খিত, অনেক কিছু বলার থাকলেও এখানেই খতম করি। শেষ করি এক লাইনের স্টেটমেন্ট দিয়ে : Religion

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.