বিষয়টা বিবেচনাবোধের, সাদিক হামজা ইউসুফের একটা ভিডিও লিংক দিয়েছিলো, সেটা দেখে আবার মনে পড়লো কথাটা, কথাটা আবার মনে পড়লো হামজা ইউসুফের কেনো আমি ইসলাম গ্রহন করলাম ওটা শুনে,
মানুষের বিবেচনাবোধ মানুষকে যা যা ভাবতে বলে ধর্মের মূল বানী সেখানেই, মানুষ মানুষের মধ্যে ঐক্য, সহমর্মিতা, মানবিকতা, ভালোবাসা, কোমল সব অনুভিতির সহাবস্থানের পন্থা খুঁজে নেওয়া, ধর্মের মূল সূর এটাই, বাইরে একটা খোলস আছে, আছে প্রচারকের ছাপ, আর উপসনা পদ্ধতির পার্থক্য আছে।
এই বিষয়টার বাইরে কেউ যদি অন্য কিছু খুঁজে পায় ধর্মে তাহলে সেটা তার উন্নত মস্তিস্কের ফসল। সাধারন মানুষ এবং ধার্মিক মানুষের ভেতরের ঐক্যের জায়গাটা এই মনুষ্যত্ববোধের জায়গায়, এখানে লাল-নীল-হলুদ-সাদা বিভাজন নেই। মানুষের মানবিক অনুভবগুলো কাছাকাছি। সম্মিলনের জায়গাটাও এখান থেকেই শুরু হওয়া উচিত, তবে মানুষের ভেতরে দেয়াল তৈরি হচ্ছে, মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের শেকলে বন্দি হয়ে যাচ্ছে, একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত হওয়ার বদলে একজন মুসলিম, একজন খ্র ীস্টান হতে চাচ্ছে, বিনিময়ের জায়গাগুলোকে এমন মোটা দাগে আঁকালে সব সময় নিষ্পেষনের সম্ভবনাটা তৈরি হতেই থাকে।
মানুষকে ধর্মপরিচয়ে চিহি্নত করার প্রক্রিয়াতে আমরা মানুষকে খন্ডিত করে ফেলছি প্রতিনিয়ত। পোপ বেন্ডিক্ট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষন দিয়েছেন, তার ভাষনের বিষয়বস্তুতে অনেক কিছুই এসেছে তবে মূল আলোচনার জায়গাটা ছিলো, কার্যকরন অনুসন্ধান, বিশ্বাস এবং তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারনা। যেখানে মানুষ বিশ্বাসকে প্রশ্ন করতে পারে, মানুষের চিন্তার বিভিন্নতাকে শ্রদ্ধা করেই তার মতামত প্রকাশ করতে পারে, এমন একটা সুন্দর অতীত বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ছিলো তার।
তার মধুর স্মৃতিচারন, সত্য হতেও সমস্যা নেই, কোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পারস্পরিক ভিন্নমটের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সহ বিতর্ক চলতেই পারে, এখানে কেউ কেউ প্রথাগত ধর্মের বিরোধিতা করতেই পারে, কেউ বলতেই পারে ধর্ম বিষয়টা মূলত লোকগাঁথা সংকলন, ইশ্বরের ধারনা ভাববাদী, এটার বস্তুগত বাস্তবতা নেই। তবে এই নিজস্ব মতামত প্রদানের প্রক্রিয়ায় কেউ কাউকে অসম্মান করছে না।
এই বিষয়টা তুলে আনার সাথে সাথে অন্য একটা উদাহরনও এসেছে সামনে, সেই 1400 সালে কনস্টান্টিনোপোল দখলে সময় এক পার্সি মানুষের সাথে সম্রাটের কথোপথনের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে- যেহেতু বিজয়ী মানুষের দ্্বারা সংকলিত তাই পার্সি মানুষটার যুক্তি সম্পুর্ন আসে নাই, সেখানে সেই সম্রাট ব্যাখ্যা করে বলেছিলো কেনো তার মনে হয়েছে ইসলামি ধর্মবিশ্বাসটার প্রসার হচ্ছে তরবারী দিয়ে, হৃদয় দখল করার আগে মসনদ দখল করেছে ইসলাম।
সমস্ত আলোচনায় এই একটা উদ্ধৃতি ব্যাবহৃত হয়েছে, একজন সম্রাটের ভাষ্য- এবং তার এই ভাষ্যের পেছনের যুক্তিগুলো সেই সম্রাট কিভাবে প্রকাশ করছে।
এটা নিয়ে পাকিস্তানে তুলকালাম চলছে- পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা দিন দিন কমছে, মুসলিমদের ভেতরে বিদ্্বেষ বাড়ছে, এটা প্রকাশিত সত্য- কাল্পনিক জুজুর ভয়ে মুসলিমরা কাতর, তাদের শৈখিন ধর্মবোধ এতই ঠুনকো যে সামান্য বিরুদ্ধ আলোচনায় তা ভেঙে যায়, এমনই হালকা তাদের বিশ্বাস যে তারা পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা না করেই আবারও জ্বালাও পোড়াও শুরু করলো।
সম্পুর্ন আলোচনার বা বক্তব্যের ভিত্তি ছিলো যা- মানুষের ভিন্ন মত থাকতেই পারে, মানুষ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তার ভিন্ন অবস্থান প্রকাশ করতে পারে- এই কাজটা করতে ব্যার্থ হলো। অপরাধী আসলে কারা-
এই যে পৃথিবী জুড়ে মুসলমানদের লোকজন মাথাগরম নির্বোধ, সন্ত্রাসী বলে এটা বলার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে কারা? আমি বেশ কয়েক দিন চিন্তা করছি বিষয়টা নিয়ে, অবশ্য অন্য একজনের কথার সূত্রে- মুসলিম পরিচয়ে পরিচিত একজন মানুষের কথা যে তার ধর্মবোধের এবং ধার্মিক আচরনের বিখ্যাত এবং সম্মানিত- নোবেল পাওয়া মিশরীয় সাহিত্যিক, তাকে কাফের আখ্যা দিয়ে হামলা চালানো হলো- সে হয়তো মুসলিমদের পরিচয় হতে পারতো, তবে ধার্মিক মুসলিমরা তাকে ইসলামের বাইরে ঠেলে দিলো।
আব্দুস সালাম, অন্য একজন মুসলিম বিজ্ঞানী, সম্ভবত পদার্থ বিজ্ঞানের ইতিহাসে একমাত্র মুসলিম বিজ্ঞানী, যদিও বৃহৎ বিচারে সে কাদিয়ানী, তাই তাকেও মুসলিমের খাতা থেকে মুছে ফেলা হলো, গত বছর কিংবা তার আগের বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলো এক ইরানী মহিলা, তাকেও মুসলিমের খাতা থেকে বহিস্কৃত করা হলো। ধর্মের উপর জবরদস্তি নেই, মানুষের বিশ্বাস বদলের জন্য জোড়জুলুম চলবে না এমন একটা বানী এসেছিলো এবং যখন এই বানী রচিত হয়েছিলো তখন মুসলিম জনসংখ্যা ছিলো নগন্য, এটা হিজরতের আগে রচিত সূরা- কোরানের সর্বশেষ সমাপ্ত সূরা - নিসা সেখানে বিশেষ এক পরিস্থিতিতে উচ্চারিত বানীর কথাও বলা যায়- কাফেরদের ধরে ধরে কতল করো, এটার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা না করে একটা আয়াত তুলে দেওয়া যায়- আরও একটা আয়াত চোখে পড়েছিলো- সূরা মনে পড়ছে না- সেটাও একই রকম উদ্দেশ্য প্রণোদিত- যুদ্ধ করার আমন্ত্রন জানানো সেই সব আয়াতকে বুঝতেশবে সেই সময়ের প্রেক্ষিতে- আমি অনেকবারই বলছি কথাটা, শুধু মানবিক বিষয়গুলো সার্বজনীন তবে বাকি সব কিছুই আসলে মুহাম্মদের সমসাময়িক- ইহলৌকিস সমস্যা সমাধানের কল্পে রচিত, বৌদের মধ্যে ঝগড়া- একটা সূরা নাজিল হলো- বৌ যুদ্ধে গিয়েছিলো সাথে, পথে পেছনে পড়ে গেলো, একটা সূরা নাজিল হলো, এই সব ব্যাক্তিগত আখ্যানের ভেতরে কি খুঁজতে যাবে মানুষ।
এমন ভাবেই চুক্তির বরখেলাপের জন্য রচিত আয়াতগুলো, কিংবা মককা বিজয়ের পর যখন মুসলিমরা আর যুদ্ধ করতে চাইছে না, তখন যাদের মনে হচ্ছে মুহাম্মদ যা চেয়েছিলো তা সমাপ্ত হয়েছে, এখন আর যুদ্ধ না, একটু স্থিতু হয়ে বসার সময়, সে সময় যুদ্ধের উদ্দিপনা জাগানোর জন্য ঐশী বিধান হাজির হওয়ার বিষয়টাকে যতই সাদা চোখে ওয়াক ওভার দেওয়ার চেষ্টা করি সন্দেহ বাড়তেই থাকে এই ঐশী গ্রন্থের প্রতি-
কোরানের পরলৌকিক মর্মার্থ ধারন করে থাকা মককায় রচিত সূরাগুলোর সাথে মদীনায় রচিত সূরা সমুহের মৌলিক বিষয়বস্তুর পার্থক্য মুহাম্মদের হাতে ক্ষমতা জমা হওয়ার পার্থক্যদুষ্ট।
আসলে আমার নিজের ধারনা- এই সব ধর্মের পরিচয় মুছে ফেলে একটা সময় মানুষকে নিজের কাছে প্রশ্ন করা উচিত- মানবিক আচরন কি? একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের ব্যাবহার কেমন হওয়া উচিত? এবং সমাজিক অনুশাসন ও সাম্য ওশান্তি বজায় রাখার জন্য মানুষকে কি কি সাধারন নিয়ম মেনে চলতে হবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে যে কেউ যেকোনো ধর্মগ্রন্থ খুলে দেখতে পারে, সব ধর্মেই এই কথাগুলোই বলা আছে, তাহলে আর ধর্মের সংঘাত কেনো। আমরা সবাই মানুষ হয়ে উঠি।
তার পর হয়তো সময় ও সুযোগ থাকলে মুসলিম হিন্দু হয়ে দেখা যাবে কি হয়?
আর মুসলিমদের পরিচয়ের সাথে লেপ্টে থাকা দাগটাকে বারবার অঙ্কনের কিছু নেই। আজ পোপ বেন্ডিক্টের বক্তব্যের পরে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হলো তা আবারও সেই সম্রাটের মতটাকেই প্রমান করলো- প্রামন করলো বেনডিক্টের সন্দেহটাকে, মুসলিমদের ভেতরে যুক্তি আর নিয়মনিষ্ঠতার স্পষ্ট অভাব আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।