আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্ক টুয়েনের কথিত পথে

যা বুঝি, যা দেখি, যা শুনি এবং যা বলতে চাই

মার্ক টুয়েন হওয়ার চেষ্টা যে করিনি তা নয়। সৈয়দ আলীকে ধন্যবাদ, উৎসাহটা তিনিই দিয়েছিলেন। মার্ক টুয়েনের গোপন কৌশলটা জানিয়ে বইকেনা নামক একটা রম্য-প্রবন্ধ তিনি লিখেছিলেন। টেক্সটবুক বোর্ড কি ভেবে সেই রম্যলেখা পাঠ্য বইতে দিয়েছিল। যারা পড়েননি তাদেরকে বলি বইকেনার সাথে মার্ক টুয়েনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বই ধারে আনতেন। তারপর ফেরত দিতে ভুলে যেতেন। তবে তার ঘরে বই স্তুপের মত ছড়িয়ে থাকতো। কারণ বইয়ের শেলফ তো কেউ ধারে দেয় না। কিন্তু আমার সমস্যা শেলফে নয়, বই জোগাড়েই।

বাঙালির ঘরে বই কোথায় যে ধার চেয়ে এনে লাইব্রেরি বানাবো। বরং নিজে দু' চারটা বই কিনে আনলে আমাদের পাড়ায় মার্ক টুয়েনের সংখ্যা বেড়ে যেত। আমার ছোটবেলা কেটেছে চা-বাগানে। বাজার-সভ্যতা থেকে দূরে পাহাড়-টিলায়। সেখানে বই কই? স্কুলে শিক্ষকদের কমনরুমে একটা আলমারিতে নাকি কিছু ফাল্গুনি আর নীহাররঞ্জন ছিল।

আরো বড় হয়ে জেনেছি সেসব আপা-ম্যাডামদের দখলেই ছিল। বাসায় পড়ার বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়া কঠোর নিষিদ্ধ। সুতরাং পড়ার বাইরে আমার প্রথম পড়ার বই হলো টেকস্ট বুক বোর্ড অনুমোদিত গার্হস্থ্য বিজ্ঞান। সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্য। বন্ধু নান্টু খবর দিয়েছিল উপরের ক্লাসে নাকি গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে কি এক চ্যাপ্টার আছে যেটা শিক্ষকেরা ক্লাসে পড়ান না, মেয়েদের বলেন পড়ে নিতে।

বইতে আছে অথচ শিক্ষকরা পড়ান না? কী জিনিস? কেন? নানা কৌতুহলে পাশের বাসার দিদিদের পড়ার টেবিলে পেয়েই আমি মার্ক টুয়েন হয়ে যাই। কিন্তু বেশিদিন সামলে রাখতে পারিনি। মায়ের চোখে পরে যায়। সুতরাং আমার প্রথম সংগ্রহ ফিরে যায় আগের অবস্থানে। আব্বা নিজে প্রথম কিনে দিয়েছিলেন দি ফায়ার বার্ড বইটি।

সম্ভবত: রাশান গল্পের ইংরেজি সংস্করণ। আর স্কুলে রচনা লিখে পেয়েছিলাম মাহবুব তালুকদারের 'স্বনাকধন্য'। ইত্তেফাক পত্রিকায় তোমাদের জন্য বই ধরনের কলামে বর্ণনা পড়ে নানাকে কিনে আনতে বলেছিলাম 'বনমোরগ', হাবিবুর রহমানের লেখা। কিন্তু এসবের পেছনে মার্ক টুয়েনের কোনো অবদান নাই। মার্ক টুয়েন হওয়ার আশা পাই ক্লাসের পেছনের বেঞ্চের ছেলে মোবারকের গল্পে।

গন্ড গ্রামে থাকে ও। স্কুল থেকে বহুদূরে। ওদের বাড়িতে নাকি বই আছে। ওর কোনো এক মামা একসময় অনেক বই কিনে আনতেন। এখন তিনি বিদেশে উড়াল দিয়েছেন।

বইগুলো তদারকির মানুষ নেই। অনেকেই ধার নিয়ে যায়, দেয় না। এরকম খবরে আমি প্রবল উৎসাহ পাই। মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা মার্ক টুয়েন আমাকে ক্লাস ফাঁকি দিতে উৎসাহ দেয়। স্কুল শেষ হওয়ার আগেই আবার স্কুলের গেটে ফেরত আসতে হবে।

আমি সোৎসাহে মোবারকের সাথে পা চালাই। কাঁচা রাসত্দা, কাদামাটি, হাঁটু জলের খাল, জংলা ঝোপ ঝাড়, বন-বাদার পার হয়ে হাজির হই ওদের কাঠের দোতালায়। আপ্যায়ন শেষে মোবারক হাজির করে দু'খানা মাত্র বই। একটি 'আনোয়ারা' অন্যটি 'বিষাদ-সিন্ধু'। নজিবুর রহমানের নাম তখন শুনিনি।

বিষাদ-সিন্ধুর অংশবিশেষ পড়েছি পাঠ্য বইগুলোতে। আমি বিষাদ-সিন্ধুটাই নেই। বিষাদ-সিন্ধু মোটা ধরনের বই। ধার নিলে মাস দুয়েকের আগে কেউ ফেরত দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু মাস খানেক পরেই মোবারক এত পথ ভেঙে স্কুলে আসার পরিকল্পনাই বাদ দিয়ে দিলো।

সুতরাং বিষাদ-সিন্ধুর স্বত্ব তখন আমার। তাছাড়া মোবারক আমার বাসাই চিনে না। মনটা খুশি হয়ে গেল। যাক শেষ পর্যন্তমার্ক টুয়েনের দেখানো পথে পা রাখতে পারলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।