বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।
দেশে মৌলবাদী শিক্ষার চারণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি ঘোষণা করেছে সরকার। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট ও জোটের বিবেচনা থেকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের (ইসলামি শিক্ষা/আরবি সাহিত্য) সমমান দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সোমবার তার কার্যালয়ে জোট সমর্থক আলেমদের ডেকে এনে তাদের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন। এসময় তিনি শিগগিরই আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমানের করারও আশ্বাস দেন।
সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা সরকারের এ সিদ্ধানত্দের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, এর ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে চরম অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা ও মানগত অবনমনের সৃষ্টি হবে। যার পরিণতিতে চাকরিক্ষেত্রেও দেখা দেবে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। কারণ প্রাচীন ধারার আরবি শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম ও প্রায়োগিক মূল্য শিক্ষার্থীদের জাগতিক জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে অবদান রাখে সামান্যই। কার্যক্ষেত্রে মূলধারার শিক্ষার মানের তুলনায় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার মান অনেক বেশি পশ্চাৎপদ এবং অকার্যকর।
ফলে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জাগতিক জ্ঞানের এই ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে পাঠ্যবই, পাঠ্যক্রম ও পরিচালনা পদ্ধতি আধুনিকায়ন না করে শুধুমাত্র কাগুজে স্বীকৃতি প্রদান সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি বয়ে আনবে বলে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও সমাজতাত্তি্বকরা মনে করেন।
বর্তমান বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোট কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর জোরালো চাপ সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে ইসলামী ঐক্যজোট চারখণ্ডে বিভক্ত হলেও কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি প্রশ্নে তাদের অবস্থান অভিন্নই আছে। জোট শরিকদের জোরালো চাপ সত্ত্বেও নানা বিতর্ক থাকায় তাদের অবাসত্দব এ দাবি কার্যকর না করে সরকার আশ্বাস দিয়ে সময় পার করছিল। কিন' ভোটের রাজনীতি বিবেচনায় রেখে সাজানো আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে তাদের দাবি পূরণ করলো সরকার।
মূলত ধর্মীয় আরবি শিক্ষাকে ভিত্তি করে ব্রিটিশ শাসনামলেই কওমি মাদ্রাসার যাত্রা শুর" হয়। এ ধারার শিক্ষায় 90 শতাংশ আরবি এবং বাকি 10 শতাংশ বাংলা, ইংরেজি ও অংক পড়ানো হয়ে থাকে। সরকারের কোনো রকম আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াই মূলত দান-খয়রাত থেকে প্রাপ্ত অর্থে পরিচালিত হয়ে আসছে এসব কওমি মাদ্রাসা। দেশে কওমি মাদ্রাসার সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে দেশে বর্তমানে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় 20 হাজার, শিক্ষক লাখখানেক এবং ছাত্র সংখ্যা 25 লাখের মতো।
তবে কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী দেশে কওমি মাদ্রাসা রয়েছে 10 হাজার। আর শিক্ষক সংখ্যা 70 হাজার। আবার খেলাফত মজলিশের মতে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা হবে 15 হাজার, ছাত্র সংখ্যা 25 লাখ। অন্যদিকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বলেছে দেশে 20 হাজারের বেশি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি প্রদানের যে সিদ্ধানত্দ নিয়েছে সরকার তা কোনো একাডেমিক সিদ্ধানত্দ নয়।
এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধানত্দ। এ সিদ্ধানত্দ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমাজের ওপর অত্যনত্দ বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, দেশের শিক্ষক সমাজ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা বা মতবিনিময় না করে এ ধরনের সিদ্ধানত্দ গ্রহণ শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব, বিশ্বের আর কোথাও নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর শরিফ উল্লাহ ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মোঃ আখতার"জ্জামান গতকাল এক বিবৃতিতে এ ব্যাপারে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারের একক ও অনিয়মতান্ত্রিক এ সিদ্ধানত্দ শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। তারা বলেন, কোনো শিক্ষাধারার পাঠ্যসূচি ও সময়কাল, শিক্ষার ধরন ও মান, প্রায়োগিক মূল্য প্রভৃতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও আলোচনা ছাড়া শুধু ক্ষমতার জোরে একতরফা ঘোষণার মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন ধারার শিক্ষার ডিগ্রির যে সমতা প্রদান করেছে তা দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে এবং কালক্রমে জাতিকে মেধাশূন্য করে পরনির্ভরশীলতার দিকে ঠেলে দেবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধানত্দ দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে বলেও তারা মনত্দব্য করেন। শিক্ষক নেতারা শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির সমতা আনয়ন, সংস্কার, পরিমার্জন, সংযোজন, সংশোধন প্রভৃতি সংক্রানত্দ যে কোনো গুর"ত্বপূর্ণ সিদ্ধানত্দ নেওয়ার আগে এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা এবং শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মতামত ও সুপারিশ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
11 দলের পরিচালনা পরিষদের এক সভায় ক্ষমতার মেয়াদের শেষলগ্নে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দানের ঘোষণাকে রাজনৈতিক ও দেশের আলেম-ওলামাদের খুশি করে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করার হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে এ সভায় গৃহীত প্রসত্দাবে বলা হয়, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে এভাবে সরকারি স্বীকৃতিদান সংবিধান, শিক্ষানীতি এবং বিশ্বমানের শিক্ষার পরিবেশ বিরোধী।
11 দল আরো বলেছে, দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
আর এই অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাক্রম ইতিমধ্যেই এসব মাদ্রাসাকে জঙ্গি সৃষ্টির কারখানায় পরিণত করেছে। সে কারণে ওই শিক্ষাকে সংস্কার এবং আধুনিক যুগোপযোগী না করে স্বীকৃতি দান সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎকেই বিপর্যসত্দ করে তুলবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক ও একাডেমিক পর্যায়ে আরো বিসত্দারিত আলোচনার ওপর গুর"ত্বারোপ করে নির্বাচনের আগে এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে 11 দল।
The Daily Bhorer Kagoj
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।