আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজশাহীতে সরকারি জমি দখল করেছে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ

'... আমাদের আশার কোনো পরকাল নাই'

রাজশাহীতে নির্মানাধীন ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিজস্ব ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে সরকারি জমি দখল করে। নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের দু'টি প্লট দখল করে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে নিজেদের জমির সঙ্গে একীভুত করে নিয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপ। এছাড়া মূল ভবনের নির্মিত অংশের প্রায় সোয়া দুই মিটার সড়ক ও জনপথের জমির মধ্যে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এলাকাবাসী সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ কাজের প্রতিবাদ করলেও রাজনৈতিক প্রভাবে দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলেছে তারা। রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-নওগাঁ সড়কটি প্রশস্ত করার জন্য 1962 সালের 26 ডিসেম্বর এক নির্দেশে নওদাপাড়া বর্তমান বিএডিসি গেটের বিপরীত এলাকায় 1.87 একরের 17 টি প্লট সরকারি নিয়মে অধিগ্রহণ করে সওজ।

1961-62 সালের মূল ভূমি হুকুম দখলের ফাইল অনুযায়ী অধিগ্রহনকৃত প্লটগুলোর মধ্যে 2063 ও 2064 নম্বর প্লট দু'টি পাশপাশি অবস্থিত। এই দু'টি প্লটের পরিমাণ .59 একর। অধিগ্রহণের আগে 2063 প্লট নম্বরের জমিটির প্রকৃত মালিক ছিলেন জীবনকৃষ্ণ মণ্ডলের পুত্র কালিপদ মণ্ডল এবং 2064 প্লট নম্বরের জমিটির মালিক ছিলেন পূর্ণ চন্দ্র মণ্ডলের পুত্র অধীর কুমার মণ্ডল। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও জনপথের এই জমিগুলো বহাল তবিয়তেই ছিলো। বিপত্তি বাধে 2004 সালে।

2003-2004 শিাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করা রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মূল ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য কর্তৃপ নওদাপাড়া বিএডিসি গেটের সামনে সওজ'র জমির পাশে 6 একর জমি কেনে। 2003 সাল থেকেই তারা নিজেদের জমি ঘিরে নিতে শুরু করে। পরের বছর এসে তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত 2063 ও 2064 নম্বর প্লট দু'টিও ঘিরে নেয়। এরপর তারা শুরু করে ভবনের নির্মাণ কাজ। স্থানীয় এলাকাবাসী সেই সময় কয়েকবার বাধা দিলেও তাদের বাধা না মেনেই চলে ওই দখল প্রক্রিয়া।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হলে তিনি সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলেন। বিষয়টির সত্যতা মেলায় সওজ কর্তৃপ ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপকে ওই দু'টো প্লট দখল না করতে কয়েক দফা মৌখিক নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা না মেনে হাসপাতাল কর্তৃপ দু'টি সরকারি প্লটেই মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী সড়ক ও জনপথের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম 2004 সালের 10 মে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপকে এ ব্যাপারে একটি উকিল নোটিশ দেয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক চাপের কারণে এ ব্যাপারে নীরব হয়ে যান সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা।

শনিবার নওদাপাড়া গিয়ে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্মানাধীন 11 তলা ভবনের দণি পাশে সড়ক ও জনপথের অধিগ্রহণ করা সেই প্লট দু'টি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে সেখানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। তবে ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ প্রকল্প পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর সরকারি জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্লট দু'টি তারা হাবিবা খাতুন নামের একজনের কাছ থেকে বিধি সম্মতভাবে কিনে নিয়েছেন। জমিগুলোর খাজনাও তারা পরিশোধ করছেন নিয়মিত। সড়ক ও জনপথের অধিগ্রহণ করা জমি কীভাবে ব্যক্তিমালিকানার সম্পত্তি হিসেবে কিনলেন এ ব্যাপারে তিনি সমকালকে বলেন, তাদের জানা মতে, সওজ প্লট দু'টি অধিগ্রহণ করার পর সেগুলো অব্যবহৃত থাকায় পরবর্তীতে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সরকার সেই জমি হাবিবা খাতুনের কাছে বরাদ্দ দেয়।

পরে তার কাছ থেকেই প্লট দু'টি ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন কিনে নেয়। এদিকে গত বছরের 11 নভেম্বর দখলকৃত প্লট দু'টির ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানা এসি ল্যান্ড অফিসে একটি নামজারি মামলা (নম্বর-1048) করা হলেও জমির মালিকানা নিয়ে আপত্তি থাকার কারণে বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি এখনো। অথচ ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপ দিব্যি দু'টি প্লটই কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে নিজেদের সম্পত্তির সঙ্গে একীভূত করে নিয়েছে। রাজশাহী সওজ'র একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপ দাবি করেছে, তারা এই প্লট দু'টি হাবিবা খাতুন নামে একজনের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে। এ ব্যাপারে তারা যে দলিলটি উপস্থাপন করছে, সেটি 1963 সালের 30 জানুয়ারির (নম্বর 1613 ও 1614)।

সওজ সূত্র বলছে, 1961-62 সালে সওজ ওই জমি অধিগ্রহণ করে। এসবের প্রকৃত রেকর্ডও রয়েছে। এতোদিন ধরে কেউই প্লট দু'টির মালিকানা দাবি করেনি। অথচ 40 বছরেরও বেশি সময় পর একটি দলিল হাজির করে প্লট দু'টি দখলের চেষ্টা রহস্যময় বলে উল্লেখ করে সূত্রটি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিকরুল হক সমকালকে বলেন, খুব অল্প দিন হলো তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন।

বিষয়টি এখনো তার গোচরে আসেনি। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। # প্রতিবেদনটি এ বছরের 5 মার্চ সমকালের শেষের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনটির ব্যাপারে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিবাদও দেননি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.