প্রখ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন চলে গেলেন। তার প্রয়াণে দেশের মানুষ শোকাহত, বিষণ্ন। অথচ শিল্পীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেই। শিল্পী সমিতিতে শোকবই খোলা হয়নি। তার মরদেহ এফডিসিতে আনা হলে শিল্পীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল না। বিশেষ করে শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান শ্রদ্ধা জানাতে আসেননি। এমনকি জানাজায়ও অংশ নেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন চলচ্চিত্রকাররা। নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে হলেও শাকিব খানের উপস্থিত থাকা উচিত ছিল। প্রবীণ চলচ্চিত্রকারদের প্রতি এ প্রজন্মের শিল্পীদের এ অবহেলা বড়ই কষ্ট দেয়। আনোয়ার হোসেনের জানাজায় এ প্রজন্মের কোনো শিল্পী উপস্থিত হয়নি। তাই ধরে নিতে হবে আমরা মারা গেলেও তারা আসবে না। থাক, তাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের দু-একজন আত্দীয়স্বজন তো আছে। তারাই আমার লাশ কাঁধে নেবে।
অভিনেতা প্রবীর মিত্র বলেন, শিল্পীদের গুরু চলে গেলেন। কিন্তু তাকে শ্রদ্ধা জানাতে হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পী এসেছেন। কেন এমন হবে। এটা উচিত নয়। শিল্পীদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ ও সহমর্মিতা থাকা উচিত।
প্রবীণ অভিনেতা মঞ্জুর হোসেন বলেন, আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কাজ করেছেন এমন অনেক শিল্পীই শ্রদ্ধা জানাতে বা জানাজায় আসেননি। শিল্পীদের মধ্যে সহযোগিতার অভাব চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমান বলেন, শিল্পী সমিতিতে একটি শোকবই খোলা উচিত ছিল। এতে প্রখ্যাত এই শিল্পীর প্রতি সবাই শ্রদ্ধা জানাতে পারতো। যা অমর হয়ে থাকত। শুধু আনোয়ার হোসেন নয়, সব প্রয়াত শিল্পী, নির্মাতা, কলাকুশলীর জন্য স্ব-স্ব চলচ্চিত্র সংগঠনের শোকবই খোলা উচিত। চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে এখন মমত্ববোধের বড়ই অভাব। আনোয়ার হোসেনকে এফডিসিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা চলচ্চিত্রকাররা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান আনোয়ার হোসেনকে দেখতে হাসপাতালে পর্যন্ত যাননি। শুধু আনোয়ার হোসেন নয়, কোনো শিল্পী বা চলচ্চিত্রকারের মৃত্যু হলে কাজের অজুহাতে শাকিব খান দূরে সরে থাকেন। এটি সত্যিই দুঃখজনক।
পরিচালক সমিতির সভাপতি ও চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, কোনো চলচ্চিত্রকার দুস্থ অবস্থায় পড়লে বা মৃত্যু হলে সব দায়িত্ব যেন এই সমিতির। আর কাউকে তেমন এগিয়ে আসে না। চলচ্চিত্র পরিবারের কারও মৃত্যু হলে সেদিন শুটিং বন্ধ রাখা উচিত। যাতে শুটিংয়ের অজুহাতে কেউ অনুপস্থিত থাকে।
চলচ্চিত্রকার মতিন রহমান বলেন, দিনে দিনে এ শিল্পে অবক্ষয় বাড়ছে। বেঁচে থাকতেই এক শিল্পীর খবর অন্য শিল্পী নেয় না। আর মারা গেলেতো জানাজায় পর্যন্ত ুআসে না। অথচ একটা সময়ে এক শিল্পীর দুর্দিনে পুরো শিল্পী পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়ত। কোনো শিল্পীর মৃত্যু হলে তার দাফন না হওয়া পর্যন্ত এফডিসি এবং আউটডোরে চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকত। আর এখন বেঁচে থাকতেই একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নেই। মৃত্যুর পরতো আর কিছুই আশা করা যায় না। তাছাড়া কেউ এগিয়ে এলেও অন্যরা তার সমালোচনা করে। সত্যিই চলচ্চিত্র পরিবারের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ অবস্থার অবসান হওয়া উচিত।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।