আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবেকের আয়নায় মনটা সাজাই

আমাদের চারপাশে নিত্য ঘটে যাওয়া ছোট খাট ঘটনাগুলোও দিতে পারে অনেক অসাধারন শিক্ষা। অন্তর্দৃষ্টি মেলে দেখিনা আমাদের চারপাশে একটু তাকিয়ে............... এক্সকিউজ মি, আপনার........... শেষ না করতেই ছোট্ট এক টুকরো কাগজ ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দিল মেয়েটি। এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! এমন অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিতে ছেলেটির খুশির মাত্রা সীমা ছাড়ানোর উপক্রম। অন্তত মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের গন্তব্য ফেলে আরো দুই স্টপেজ অতিক্রম করে আসার লোকসানটা পুষিয়ে নেবার মত। ওহ! শুরুটাইতো বলা হলনা।

অফিসে যাবার পথে তড়িঘড়ি করে বাসে উঠেই শ্যামলের চোখ আটকে গেল এক তরুনীর চোখে। অপরুপা না হলেও মোটামুটি সুন্দরী বলা যায় মেয়েটিকে। সারা বাসে একটি মাত্র সীট ফাঁকা তাও মেয়েটির পাশে। প্রথমত একটু ইতস্তত করলেও সাহস করে বলে ফেলল,”এখানে বসতে পারি?” উত্তর এলো ” অবশ্যই, বসুন। ” এরপর দু’জনের কোন কথা না হলেও চোখে চোখ পড়েছে অনেকবার।

কোন এক জড়তায় শ্যামল কথা বলার সাহস না পেলেও কি এক অজানা মোহে আবিষ্ট হয়ে নিজের গন্তব্য কখনযে ফেলে এসেছে তার কোন খেয়ালই নেই । শেষ পর্যন্ত মুচকি হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে যখন দু’জনের আবেশ কাটলো ততক্ষনে শ্যামল নিজের গন্তব্য ফেলে আরো দুই স্টপেজ অতিক্রম করে এসেছে। অফিসে পৌছে হাজিরা খতায় লাল কালির দাগটাকে হৃদয়ে ভালোবাসার তীরের মতই লাগল যখন পকেটে মেয়েটির দেওয়া কাগজ টুকরোর কথা মনে পড়ল যাতে লেখা আছে একটি সেলফোন নম্বর। অফিসের সময় আজ যেনো আর শেষই হয়না, ৮ ঘন্টা কি ১৬ ঘন্টা করে দিলো নাকি! কোন প্রকারে অফিস শেষ হতে না হতেই দে দৌড় । বাসায় পৌছেই রুমের দড়জা বন্ধ করেই পকেট থেকে চিরকুটটা বের করে কাঁপা হাতে সেলফোনটা নিয়ে ডায়াল করল।

এক আশঙ্কাও কাজ করছিল, নম্বরটা সঠিকতো? হ্যা, রিং তো হচ্ছে, কিন্তু নম্বরটা কি ঐ মেয়েরই? অবশেষে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সুন্দর কন্ঠে প্রশ্ন এল,” আপনি কি বাসে দেখা সেই লোক?” হ্যা ,কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন? কি করে বুঝলাম তা না হয় পরে শুনলেন। আপাতত নিশ্চিততো যে এটা আমারই নম্বর? সেভ করে রাখেন। আমি একটু ব্যাস্ত আছি, পরে সুযোগমত আমিই আপনাকে ফোন করব। এই ছিল শুরু। কিন্তু শেষটা ভবিষ্যত জানে।

মাঝের যেটুকু আমার জানা তা হল ওরা এরপরে পরষ্পরকে চিনল,জানল (ওদের মত করে)। শ্যামল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, মেয়েটি একটি মেডিকেলের শিক্ষানবীশ ডাক্তার নাম অনামিকা (দু’টোই ছদ্মনাম)। পথের দেখা ফোনালাপের মাধ্যমে প্রেমে রূপ নিতে খুব বেশি সময় নেয়নি। তাদের প্রেমের গভীরতার কাছে মাঝে মাঝে দেখা করা,আর কিছু সময় একসাথে থাকা খুবই ছোট হয়ে যাচ্ছিল দিন দিন। আবেগের জোয়ার তাই তাদের একদিন ভাসিয়ে নিয়ে গেল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।

বিয়েবহির্ভূত মধুচন্দ্রিমা বেশ ভালোই কেটেছিল। ওদের ভাষায় অসাধারন হয়েছিল মধুচন্দ্রিমা। অনামিকার বাড়ি থেকে জানত যে সে হলে আছে, কিন্তু রুমমেটরা জানত সে এক বান্ধবীর বিয়েতে গেছে। বিয়ে ব্যাতিরেকে মধুচন্দ্রিমা যখন হয়ে গেছে তখন আর বাঁধা কিসে! মাঝে মাঝেই ওরা হারিয়ে যেত বিভিন্ন অজুহাতে। বেশ সুখেই কাটছিল দিনগুলো।

বাদ সাধল বিয়ের প্রসঙ্গ আসতেই। অনামিকা বলল ”আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয় যদি না তুমি ধর্মান্তরিত হও। ” শ্যামলের কথাও ”বাবা মাকে ছেড়ে স্বধর্ম ত্যাগ করে তোমার কাছে আসা আমার পক্ষে অসম্ভব,কিন্তু তুমি যদি ধর্মান্তরিত হও তবে আমার বিয়ে করতে আপত্তি নেই”। তাহলে কি হবে আমাদের? দু’জনই সারাজীবন বিয়ে না করে এভাবেই কাটিয়ে দেব। এই ছিল ৩ বছর আগের কথা (দু’জনের প্রেমপ্রতিজ্ঞা)।

কিন্তু এখনতো দিনবদলের পালা। অনামিকা বাবা মায়ের পছন্দের এক ডাক্তার ছেলেকে বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছে ,পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায় গভীর মনযোগ দিয়েছে। আর শ্যামল মোটা বেতনের ভাল চাকরী করছে। এখন পাত্রীর সন্ধানে আমাদেরকেও মাঝে মাঝে খোচাচ্ছে। অবশ্য তা না হলে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো জানতে পারতামনা।

দ’ুজনই স্বধর্মের আচার অনুষ্ঠান একনিষ্ঠ ধার্মিকের ন্যায় পালন করে চলেছে। খুব সাদামাটা একটা ঘটনা, যা আমাদের চারপাশে হামেশাই ঘটছে। তাই সবাই ভাবছেন, এটাকি একটা লেখার মত বিষয় হল? কিন্তু এই সাধারন ঘটনাই আমার মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যা’র উত্তর আমি ওদের কাছে পাইনি। তাই আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। খুঁজে দেখুন উত্তরগুলো জানা আছেকি/না-----।

শুধু ধর্মই যদি ওদের দু’জনের ঘর বাঁধার বড় অন্তরায় হবে তবে কেন ধর্মের প্রশ্নটা পরিচয়পর্বের সূচনালগ্নে আসেনি? নাকি তখন প্রেমের জোয়ার এমনই প্রবল ছিল যে তার আঘাতে ধর্মীয় অনুভ’তি ভোতা হয়ে গিয়েছিল? তাই যদি হবে তাহলে এতসবকিছুর পরে এসে কিভাবে সেই ধর্মীয় অনুভ’তিগুলো আবার এত তীক্ষè হল? মানুষ উচ্চশিক্ষিত হলে সাথে সাথে তার চিন্তা ,ভাবনা ,ব্যাক্তিত্তে¦র বিকাশ ঘটে। কিন্তু চলতি বাসে এক মুহুর্তের দেখায় কারো প্রেমে পড়া কোন ধরনের ব্যাক্তিত্ত¦? মেডিকেলে পড়–য়া একজন ছাত্রীর পক্ষে একজন সম্পূর্ন অপরিচিত একটা ছেলেকে না চাইতেই সেলফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া কি সুস্থ মানসিকতার লক্ষন? যদি না হয় তবে ধরে নিতে হবে সে মানসিকভাবে অসুস্থ। আর একজন মানসিক রোগী কিভাবে অন্যের চিকিৎসা করবে? সর্বোপরি অনেকেই হয়তো প্রযুক্তিকেই দায়ী করবেন এ ধরনের ঘটনার জন্য। কেননা সেলফোন নম্বরটিই ছিল ঘটনার মূল। কিন্তু অযথা দোষারোপ না করে যেকোন প্রযুক্তি ব্যবহারের পূর্বে বিবেকের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কি পারিনা মনটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে ,যাতে করে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি?? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।