আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিসাবের ভুল

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই বিরক্ত জয়নাল নিজের উপরে, হিসাবে এমন একটা ভুল কিভাবে করলো ও? শফিক লীগের মিছিলে লোক পাঠাইছে, হাওদা নিছেলীগের অফিস থেকে এই খবর পাওয়ার পরও কিভাবে ও 2 এ 2 এ 4 করতে পারলো না। শফিকের উপর হিট আসবে এইটা ও যদি বুঝতে না পারে ও তো এমনি এমনি মারা যাবে এই জংগলে। কামাল ফোন দিছিলো বিকালে, দিয়া বললো ধলা শফিকরে ফেলায়া দাও। ওর নামে টেন্ডার উঠছে 5 লাখ দিবো। জয়নাল কথাটা শোনার পর পল্লবির ওসিকে ফোন দেয়, রহমত ভাই একটা ঝামেলা হইছে, শফিকের খবর জানেন? মিনিস্টার ওকে খুঁজতেছে, আমাকে একটা রিং দিতে বইলেন ওরে পাইলে।

টেন্ডার পড়া মানে এক সপ্তাহের মধ্যে শফিক ডাউন হয়ে যাবে, ও কাজটা না করলে ওর উপরও একটা চোট আসবে, এই দিকে জুনিয়র গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা, সিদ্দিক তলতলার হিসাব চায়, তালতলার রনির সাথে শফিকের খাতির। যদি এক সাথে 2 জনকে ফেলানো যায় তাহলে সিদ্দিকের সাথে ঝামেলাও থাকবে না। জয়নাল বুঝতেছে এখন যদি ও গুটি ধইরা রাখতে চায় তাহলে ওর ভড়াডুবি হবে। এইখানে ঢুকে যাওয়া যত সহজ টিকে থাকা তত সহজ না। ম্যাশিন চালাইতে জানলেই হয় না, ম্যাশিন ঠিক মতো ইউজ না করলে ম্যাশিনের কোপে মইরা যাইতে সময় লাগে না।

যেমন মাসুদ গেলো যশোরে। সময়মতো নিজেরে সরাইতে পারছিলো বলে টিপু এখন ঢাকায় ম্যাশিন ভাড়া দিয়ে চলতেছে, অথচ মাসুদের হাতে এই সব ম্যাশিন ছিলো 2 বছর, তখন ও ম্যাশিন ভাড়া দিয়ে মাসে কত টাকা কামাইছে তার হিসাব নাই। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হওয়ার পরফাই কমান্ডের মধ্যে ঝামেলায় এর ওর মধ্যে খুনাখুনি সামলায়া চলছিলো মাসুদ। কিন্তু বিয়া করলো ভুল সময়ে, বিয়া করার পর মাসুদের হিসাবের বুদ্ধি কমে গেলো। টিপু ডাইক্যা নিয়া গেলো যশোরে, এর পর মাসুদের সব ম্যাশিন গেলো টিপুর কাছে, মাসুদের বউ এখন টিপুর সাথেই ঘর করে।

বিয়া করে নাই টিপু, বাধা মেয়ে মানুষ। কামাল আগেই বলছিলো ম্যাশিন লাগলে টিপুরে ফোন দিতে, ওর কাছে ম্যাশিনের অর্ডার দেওয়া আছে। ডেলিভারি কিভাবে নিবে এইটা জয়নালের বিষয়। টিপুর নাম্বার ছিলো ওর কাছে, টিপুর কাছে ম্যাশিন নাই তেমন, একটা 5 স্টার আছে, বীচি আছে । চেয়ারম্যান ইলেকশন চলে টিপুর ম্যাশিন সব ভাড়ায় গেছে আসতে আসতে মাস পার হয়ে যাবে।

তত দিন ঠেকায়া রাখতে গেলে ওর নামেও টেন্ডার বাইর হবে এইটা ভালো মতোই বুঝে জয়নাল। সিদ্দিককে ডেকে বলে টিপুর কাছ থেকে ম্যাশিন আনতে। রহমত ভাই ফোন দিছিলো সন্ধ্যায়, ধলা শফিক সেনপাড়ার ঠ্যাকে থাকবে, ওর নামবার দিছে জয়নাল কে। জয়নাল শফিককে ফোন লাগায়। কি খবর বস, আপনি এই দিকে আসাই ছাইড়া দিলেন, ছোটো ভাইকে এখন মনে পড়ে না আর? কি দরকার জয়নাল ভাই, বলেন কিভাবে আপনার কাজে আসতে পারি? শফিকের গলা শুনে বুঝে যায় শফিকের কাছেও ওর টেন্ডারের খবর গেছে, না শুনলাম টেন্ডার পড়ছে আপনার নামে, একটু সাবধানে থাকবেন, রনির ঐ খানে উঠে যান,ওর এলাকায় কেউ যাইবো না আপনেরে ঘাটাইতে, আমি কি করুম এইটা আপনার কাছে জানতে হইবো না, হিসাব ঠিক কইরা রাখছি, মিনিস্টার বাঞ্চোত পালটি খাইবো এইটা আগেই বুঝছিলাম, আমি রাজ্জাক ভাইরে বলছি, ওরাই প্রোটেকশন দিবো আমারে।

খানকির পোলার জন্য কমতো করি নাই, 2টারে ফেলাইলাম ইলেকশনের আগে, কমিশনাররের পুরা গ্রুপটারে কবজা করলাম,এখন খানকির পোলা আমারে দেখি চিনে না। কমিশনার আমারে খুঁজতেছে, মিনিস্টারও বিলা হইলো এখন। রাজ্জাক ভাই ম্যানেজ করতে পারলে করবো না তো গিয়া মিনিস্টাররে গাইড়া দিমু। সাপের ল্যাজ দিয়া কান চুলকানোর মজা বুঝবো তখন হালায়। জয়নাল ফোন রেখে ওয়ারলেসের কালা বাবুলের সাথে দেখা করতে যায়।

টেন্ডারের একটা পয়সাও ওর দরকার নাই, একবার ঝামেলা বাধলে এই ঝামেলা মিটতে মিটতে 6 মাস, 6 মাসের ব্যাবসা নষ্ট, এর চেয়ে ভালো ও অন্য কাউকে টেন্ডার দিয়া দিবে, জুনিয়র গ্রুপের লাগে এই সময়টায় ভালো খাতির রাখা দরকার, কাউরে ডাউন দিতে হইলে ওরা জুনিয়র গ্রুপরে দিয়াই ডাউন দিবো, ওগোরে হাতে না রাখলে সমস্যা। --------------------------------------- একজন এসেছিলো তোমার কাছে, একটা চিঠি দিছে, তোমার টেবিলের উপর পাবা। গতকাল সন্ধ্যা থেকেই উর্মি ক্ষিপ্ত ওর উপরে, ওর ছোটো বোনের বিয়েতে যেতে পারে নি আন্দালিফ, সেই ঝড় এখনও অব্যাহত। এইসব সামাজিক অনুষ্ঠান রীতিমতো অপচয় মনে হয় আন্দালিফের কিন্তু মানুষের আয়োজনের শেষ নাই। কোনো ফোন নাম্বার দিয়েছে যতটা মোলায়েম করে বলা সম্ভব বলার চেষ্টা করে আন্দালিফ।

না বলেছে নাম বললেই চিনবে তুমি, চিঠিটা রাখা আছে নিজেই পড়ে নাও না। আর খাবার দেওয়া আছে, খেয়ে নিও, আমি ঘুমাতে গেলাম। চিঠিটা হাতে নিতে গিয়েও আবার ফিরে আসে শোবার ঘরে। উর্মি টয়লেটে, সেখান থেকে আবার ফিরে আসে। চিঠিটা হাতে নেয়।

2 লাইনের চিঠি। আন্দালিফ ভাই কালকে 12টায় হাজিরা আছে, কোর্টকাচারিতে, দুপুরের খাবারটা আমার সাথে খান জয়নাল ------------------------------------ রাতে শফিকের ওখান থেকে খবর আসলো, সেনপাড়ায় যেতে হবে, সিদ্দিক আর সুনিলকে নিয়ে রওনা দিলো। শফিক ভাই সালাম বস। শুনালম সন্ধ্যায় বাবুলের লগে দেখা করছো , কি কথা কইলা ওর লগে। আমরা সবাই একটা মিটিং করতে চাচ্ছি, জয়নাল যতটা নম্রভাবে বলা প্রয়োজন ততটা নম্র হবার চেষ্টা করে।

শফিকের পা কাঁপছে, ও পুরা মাতাল, আর সাথে 5 জন , যদি সামান্য হিসাবে ভুল হয় তাহলে আর এই খান থেকে ফিরে যেতে হবে না। এখন যে রকম অবস্থা তাতে যদি আমরা নিজেরা নিজেদের সামলায় না চলি তাহলে সবাই সবাইকে খুন করে ফেলবো। উত্তর বাড্ডা, গুলশান মোহাম্মদপুর, লালবাগ ওয়ারি, ট্যানারির মোড়, সব খানেই খবরপ াঠাইলাম। পরশু দিন রাতে মিটিং, ওখানেই ঠিক করবো কি করতে হবে। শফিকের চেহারা থেকে টানটান ভাবটা সরে যাওয়ায় নিশ্চিত বোধ করে জয়নাল।

আপনি রনি ভাইকে একটু বলবেন যেনো আপনার সাথে যায়। মোহাম্মাদপুর গ্রুপের সাথে ওর বনিবনা নাই, কিন্তু এখন এই সব ঝাামেলার কথা মাথায় রাখলে চলবে না। ফিরতে ফিরতে 12টা বেজে যায় জয়নালের। শফিকের সাথে রনির যোগাযোগ হবে, বাবুলও রনিকে খবর পাঠাবে বলেছে, কামালের সাথে জয়নালের কথা হয়েছে, ও রনিকে বলবে কোনো ঝামেলা নেই এখন ওর সাথে, ও মোহাম্মদপুরের উপর দিয়ে গেলেও ওকে কেউ কিছু বলবে না। বুড়ির সাথে শেষ পর্যন্ত আপোষ হয় নি, ছেলে মরায় পুলিশ মামলা করেছিলো বাদী হয়ে সেই মামলার শুনানি, মামলা উঠিয়ে নেওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই এখন, অন্য কোনো উপায় ভাবতে হবে।

সিদ্দিক সালাম দিয়ে উঠার সময় জয়নাল সিদ্দিককে বললো। বুড়ির মাইয়ারে উঠায়া লইবি কাইলকা সকালে, একটা টোকাও দিবি না, শুধু উঠায়া নিয়া রুষ্টমের ঘরে থউইবি, আমি বুড়ির লগে কথা কমু সকালে ঘু থেইক্যা উইঠ্যা। এর আগে কাম হওন চাই। ল টাকাটা রাখ, খরচের দরকার হইলে বলিস। খালাম্মা দেখেন আপনের ছেলে মরছে আমার দোষে মরছে এমনও না, মরছে সে নিজের দোষে, ওকে মানা করছিলাম, কিন্তু শুনলো না ও, যদি আমার ল্যাজে পাড়া দিয়ে ঝামেলা বাজায় তাইলে আমি তো চুপ কইরা থাকুম না, আপনেরে কইছিলাম 2লাখ দিবো আরও 50 হাজার বাড়াইয়া দিলাম, আর আপনের মাইয়ারে কিছু করবো না, ঐ আমার ছোটো বোইনের মতো, কিন্তু যদি উলটা পালটা কিছু করেন তাইলে আমার কিছু করার থাকবো না, বুঝেনই তো অআমি যদি মামলায় ফাইস্যা যাই তাইলে আমার কোনো দাম থাকবো না ওগো কাছে, ওরা আমারে পাত্তা না দিলে আমার নিষেধ শুনবো ক্যান।

উঠতি রংবাজ, কিছু কইরা বইলে আমি প্রোটেকশন দিতে পারবো না। বুড়ি মা মনে করেন আমি আপনার ছেলে আপনার কাছে হাত জোড় কইরা ক্ষমা চাই। আপনি শুধু গিয়া বলবেন এই মামলা আমি করতে চাই না। তাইলেই হবে। সাজেদ রেন্ট এ কার থেকে একটা মাইক্রো নিয়ে জনসন রোডে রওনা দিলো যখন জয়নাল তখন 11টা বাজে।

উকিলের সাথে কথা বলা আছে আগেই। জামিনের আবেদন করবে পরে, মিউচুয়াল করবো আউট ওফদা কোর্ট। মীমাংসা হয়ে গেলে মামলা উঠায়া নিবে, রহমত ভাইয়ের সাথে কথা বলা আছে, সব রেকর্ড মুইছা দিবে সে। কোনো মামলা থাকবে না তাহলে আর। কোর্ট থেকে জামিন নিতে কোনো সমস্যা হয় নি জয়নালের , বুড়ি বলছে পুলিশ যেই জয়নালের নামে কেস দিছে এই জয়নাল সেই জয়নাল না।

এই জয়নালের সাথে তার ছেলের কোনো ঝামেলা ছিলো না, বরং সে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, সাধ্যমতো চেষ্টা করছে ওরে বাচাইতে। আল্লাহর হুকুম ছিলো না তাই বাঁচে নাই। জামিন নিয়ে বের হতে হতে 2টা বেজে যায়। আন্দালিফের সাথে দেখা হয় নি জয়নালের। পরদিন দুপুরে আবার সব হিসাব করে জয়নাল, দাবার চালে একটা ভুল হলে সব ভন্ডুল হয়ে যাবে।

কল্যানপুরের জাবেদ সুজনকে খবর দেওয়া হয়েছে, শফিক যদি রনিকে নিয়ে না আসতে পারে তাহলে ওরা এই হিসাব শেষ করবে। কামাল টাকা নিয়ে আসবে রাত 10টায় খিলগাঁও বস্তিতে। জয়নাল শফিকে ফোন দেয়, শফিক ভাই পুলিশের ঝামেলা বাড়ছে, মিটিং ধানমডিটে হবে না, মিটিংয়ের জায়গা বদল হইছে, যাত্রাবাড়ীর খানের হোটেলে বসবে সবাই, আপনি সন্ধ্যায় ওখানে চলে যাবেন। আমার একটু দেরি হবে, আজকে হাজিরা ছিলো, ঐখানে দেরি হচ্ছে। শফিক রনিকে নিয়ে খানের হোটেলে পৌছালো 7টায়, বাবুল টিককা আর শাবি্বর ওখানে ছিলো।

একটু পরে আসলো জয়নাল সিদ্দিককে নিয়ে। ম্যাশিন আনে নাই সাথে, এই ভুলটা বুঝতে পারার পর জয়নালকে বললো, ছোটো ভাই তুমি পিঠে ছুড়ি মারলা আমার। কাঁচপুর ব্র ীজের ঢালে পরদিন সকালে 2টা লাশ পাওয়া যায়। শ্যামপুর পুলিশ ফাঁড়ির লোকজন অজ্ঞাত পরিচয় লাশ হিসেবে দাফন করে এবং থানায় অপমৃতু্যর মামলা করে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.