জীবের বিলুপ্তি সিরিজের লেখাটা শেষ করেছিলাম। এখানে একটু ফলোআপ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন জানতে চেয়েছিল 'বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা' বা 'de-extinction' নিয়ে পাঠকরা কি মনে করেন। অনেক পাঠকই মতামত জানিয়েছেন। গত আগষ্ট মাসের (২০১৩) সংখ্যাটিতে (ছবিটা এপ্রিল মাসের সংখ্যার) প্রকাশ হয়েছে সেগুলি।
পড়তে পড়তে মনে হল বেশ চমৎকার কিছু ভাবনা। কিছু কিছু বিষয় সচলায়তনের পাঠকরাও তুলেছিলেন, সেগুলি মিলে গেছে। আমার এই সিরিজের পাঠকদের সামনেও সেগুলি তুলে ধরছি। (কিছু মন্তব্য হুবহু কপি করিনি। )
এলিসন মেয়ার্স
ফ্রিভিল, নিউইয়র্ক
শুধুমাত্র 'ক্লোনিং করে বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা যায় কিনা' সেটা দেখতে এসব প্রাণী ফিরিয়ে আনার চিন্তা শুধু অবাস্তব এবং অপচয় নয়, বরং পুরোপুরি অন্যায়।
মানুষ দিনদিন বাঘ, হাতি, তিমিসহ আরও কত জীবের সংখ্যা পৃথিবী থেকে কমিয়ে আনছে অঙ্গ কেটে নেয়ার জন্য বা বাসস্থান নির্মানের জন্য। তাই, কোন বিলুপ্ত প্রাণীকে শুধুমাত্র চিড়িয়াখানায় রাখার জন্য বা তাদের জন্য অসুবিধাজনক পরিবেশে সংগ্রাম করার জন্য ফিরিয়ে আনা ব্যাপারটা শুধুমাত্র নিষ্ঠুরই নয়, বরং মানুষের 'মানব-কেন্দ্রিক পৃথিবী' চিন্তাধারারই ফসল।
এন্থনি বার্গ
মেডিসন, উইসকনসিন
যারা ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব এবং শ্রেষ্ঠতমের টিকে থাকার মাধ্যমে প্রাকৃতিক নির্বাচন বোঝেন তারা এটাও বোঝেন যে, কালের বিবর্তনে জীবের যেমন উদ্ভব হবে তেমন বিলুপ্তিও ঘটবে। মানুষ এই ধারার শুধু একটা প্রজাতি মাত্র। আমরা অন্য যেকোন জীবের মতই বিপন্ন।
শুধুমাত্র কোন একটা ভাইরাস, বা কোন প্রলয়ঙ্কারি মহাকাশীয় ঘটনা আমাদেরকে চীরতরে মুছে দিতে পারে। যদিও আমরা মনে করি মানুষই পৃথিবীতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং বুঝদার প্রাণী, তার মানে এই নয় যে আমাদের বিলুপ্তি হতে পারেনা। কোন প্রজাতি মরবে বা বেঁচে থাকবে সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। তবে যদি আমরা চেষ্টা করি, তবে হয়তো শুধুমাত্র ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করতে পারি।
কেনেথ জনসন
লরেন্সভিল, জর্জিয়া
ফিরিয়ে আনাটা দারুণ হবে।
কিন্তু Australopithecus, Homo habilis এবংHomo erectus দের ব্যাপারে কি হবে? আমরা কি তাদের চিড়িয়াখানায় ভরে রাখবো? যদি আমরা এদেরকে মেরে ফেলি তবে সেটা কি খুন বলে গণ্য হবে? তারা কি মানুষ, নাকি অন্য কিছু? তারা কি চাকরি করতে পারবে? ছাত্রবৃত্তি বা সামাজিক সুবিধা নিতে পারবে? যদিও এদের বুদ্ধিমত্তা, সংস্কৃতি এবং ভাষা বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
টম মরুকিয়ান
নর্থ ফোর্ট মেয়ার্স, ফ্লোরিডা
আমার মাথায় একটা সম্পূর্ণ অন্য চিন্তা এসেছে। প্রথমে আমরা যেসব প্রাণী এখনও বেঁচে আছে তাদের রক্ষার চিন্তা করতে পারি। আমরা কি গন্ডারের শিং বা হাতির শুঁড় ক্লোন করতে পারিনা? তারপর এসব অঙ্গের বাজার ক্লোন করা অঙ্গ দিয়ে ভরিয়ে দিলে এসবের জন্য প্রাণী হত্যা আর হবেইনা!
কেনেথ একটারবার্গ
হ্যাসলেট, মিশিগান
বেশ কিছু বছর ধরেই দেখছি পরিবেশে যে ঘটনাই ঘটছে তার প্রধান খলনায়ক হিসেবে মানুষকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। একজন পশুচিকিৎসক হিসেবে আমি জিনেটিক্স, রোগবালাই, শিকার, খাদ্যের উৎস, যৌণ মিলনের সুবিধা ইত্যাদি জিনিসের সমন্বয় একটি প্রাণীর বেঁচে থাকার কারন হিসেবে দেখি।
তাহলে কেন প্রায় প্রত্যেকটি প্রবন্ধেই মানুষকেই অপরাধী হিসেবে দেখানো হয়? আপনি যদি চিন্তায় সত্যিই একজন ডারউইনিয়ান হন তবে মনে রাখবেন- এটা হল 'যোগ্যতমের বিজয়'- যার মানে যখন মানুষ পৃথিবীতে ছিলনা তখনও কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে।
জুডিথ এনট্রোবাস
নিউ ইয়র্ক, নিউ ইয়র্ক
বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা খুব বাজে একটা বুদ্ধি। কারনগুলি স্পষ্ট। বর্তমানে বেঁচে থাকা জীবগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার মত পর্যাপ্ত খাবারই আমাদের হাতে এখন নাই। আমরা 'অঙ্গের জন্য প্রাণী হত্যা' কখনই বন্ধ করতে পারবোনা।
আমরা মাছশিকারীদের জালে আটকে যাওয়া অনাকাঙ্খিত মাছও বাঁচাতে পারবোনা।
নেট কিপার
টলেডো, ওহায়ো
এটা জীববিজ্ঞানকে প্রাচুর্য দেবে সত্যিই, কিন্তু কতদিন ধরে আমরা ফিরিয়ে আনা প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবো? ক্লোনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা জীবের পুরো পপুলেশান এর যায়গায় মাত্র একটা দুইটা হয়তো ফিরিয়ে আনবো। ছোট পপুলেশানের ঝামেলা হল তাদের মধ্যে এমন জিনেটিক ব্যাপার নেই যা দিয়ে প্রাণীগুলি এখনকার পরিবেশে অভিযোজিত হবে, যার ফলে তারা আবার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।