আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক পাঠাতে অনুর

বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা যাচাইয়ে পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেছি। গতকাল নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত সংবাদসম্মেলনে দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খোলামেলা মত প্রকাশের সময় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গ ছাড়াও এ সময় তিনি আগামী নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধের বিচার, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি, টকশো ও সুশীল সমাজের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাব দেন। জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে জোট পরিত্যাগ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে এলে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কোনো রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হবে না। ২০০১ সাল ছাড়া বাংলাদেশে আর কখনোই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। কেবল আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সব নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমি দেশের স্বার্থে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন চাইলে তারা নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বান কি-মুন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, 'এমডিজি অর্জনে যে গুটিকয়েক দেশ দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ তার অন্যতম।' দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুসংহত করতে তার সরকারের নিরলস প্রয়াসের জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এমন একটি ব্যবস্থা করতে চাই যেখানে অবাধ, মুক্ত ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হবে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায়। আমাদের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে গণতন্ত্র সমুন্নতের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত পৌনে ৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অনেক সুনাম অর্জিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা এ জন্যে বাংলাদেশকে পুরস্কৃতও করেছে। এতদসত্ত্বেও গত ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিপর্যয় ঘটার অনেক কারণের একটি হচ্ছে মিডিয়াগুলোর নেতিবাচক প্রচারণা। মিডিয়ায় আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির সংবাদ তেমন আসে না। একটু খারাপ কিছু দেখলেই সবগুলো মিডিয়া সেটি ফলাও করে প্রচার করে।' সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এবং রেডিও-এর লাইসেন্স পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি এবং আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ীরা। সে সব টিভি-রেডিওতেও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার ঘটছে না কেন- এমন এক প্রশ্নের অবতারণা করলে শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশের মিডিয়া এখন পুরো স্বাধীনতা ভোগ করছে, মিডিয়ার ওপর সরকারের কোনো প্রভাব নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো নেগেটিভ সংবাদকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কালচার তৈরি করেছে। এটি তাদের সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে কালক্ষেপণ কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজেও একজন রাজনীতিক, তাই একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার কথা বলব কীভাবে। জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারটি কোর্টে রয়েছে। তারাই সিদ্ধান্ত দেবেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন, তাই রায় যেটাই হবে সেটি আমরা মেনে নেব। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের অনড় অবস্থান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা কী চান তা তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেন। তবে আমি এবং আমরা চাই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার রীতি চালু করতে হবে কাউকে না কাউকে, সেটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট করে দেখাতে চায়। গণতান্ত্রিক বিশ্বে কখনোই কোনো পার্লামেন্ট বাতিল করে নির্বাচন করা হয় না। আমরা পারব না কেন? গত পৌনে ৫ বছরে ৬ হাজার ৭৭৭টি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটিতেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীও ছিলেন। কখনোই তারা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেননি। অর্থাৎ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব- এটি আজ প্রতিষ্ঠিত। টিভি টকশো ও সুশীল সমাজ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টকশোতে যারা সংঘাত ও সংকট নিয়ে কথা বলছেন তারা সবাই আগে সরকারি অথবা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে ছিলেন। সে সময় তারা কে কী করেছেন সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে, আর তা না ঘটলে সংকট দেখা দিতে পারে বাংলাদেশে। সে ক্ষেত্রে তিনি আবার গাড়িতে পতাকা উড়াতে পারবেন। সে আশা পূরণ হচ্ছে না ভেবে এখন তারা হাহুতাশ করছেন। তিনি আরও বলেন, 'যারা বড় বড় কথা বলছেন, পরামর্শক সেজেছেন, তারা সবাই চাচ্ছেন দেশ আবার সংকটে আবর্তিত হউক এবং তাহলেই তাদের গুরুত্ব বাড়বে। জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পুনরায় বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টকশো'র অতিথি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, নিজেদের অতীত ভালো করে বিশ্লেষণ করে দেখে তারা যদি চুপ থাকেন তাহলে সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'খালেদা জিয়া যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে না দাঁড়ান, তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে খুব সহজে। বিরোধীদলীয় নেতা ভাবছেন যে, জামায়াত-শিবির আর হেফাজতের মদদে ক্ষমতার দুয়ার খুলে যাবে। কিন্তু তা কখনোই ঘটবে না। যারা ক্ষমতা নেবে তারা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের চেয়েও জঘন্য অপকর্মে লিপ্ত হবে। তার নিউইয়র্ক সফরকে খুবই সফল হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত তিন বছরের মতো এবারও তিনি অনেক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। মূল নিবন্ধ উপস্থাপন এবং কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশকে আইওএসএসসি পদক প্রদান বাংলাদেশের জনগণের সাফল্যের এক বিরাট স্বীকৃতি। শীঘ্রই বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরও এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মামুন-অর রশীদ সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.